Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকা বিয়ে রুখতে সহায় নাপিত, পুরোহিত

বিয়ে রুখতে সাধারণত কখনও নাবালিকা নিজে, কখনও তার বন্ধু, পড়শি, কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসেন। খবর মিললে বিয়ে আটকায় প্রশাসন। তাতেও সব বিয়ে রোখা যায় না। সেই পরিস্থিতিতে নাপিত, পুরোহিত বা ডেকরেটর ব্যবসায়ীদের পাশে পেলে বেশি করে নাবালিকা বিয়ের খবর মিলবে বলে বিশ্বাস প্রশাসনের।

নাবালিকা বিয়ে রুখতে সচেতনতা শিবির

নাবালিকা বিয়ে রুখতে সচেতনতা শিবির

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

বাড়িতে বিয়ে মানেই খোঁজ পড়বে নাপিত, পুরোহিত, ডেকরেটর বা আলো ব্যবসায়ীর। নাবালিকা বিয়ে রুখতে এ বার তাঁদেরই কাজে লাগাতে চাইছে পূর্ব বধর্মানের পূর্বস্থলী ১ ব্লক প্রশাসন।

বিয়ে রুখতে সাধারণত কখনও নাবালিকা নিজে, কখনও তার বন্ধু, পড়শি, কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসেন। খবর মিললে বিয়ে আটকায় প্রশাসন। তাতেও সব বিয়ে রোখা যায় না। সেই পরিস্থিতিতে নাপিত, পুরোহিত বা ডেকরেটর ব্যবসায়ীদের পাশে পেলে বেশি করে নাবালিকা বিয়ের খবর মিলবে বলে বিশ্বাস প্রশাসনের। ৬ জুলাই, বৃহস্পতিবার তাই তেমন শতাধিক জনকে নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।

গত দু’মাসে কালনা মহকুমায় ৩০ জন নাবালিকার বিয়ে রোখা গিয়েছে। সব থেকে বেশি পূর্বস্থলী ১ ব্লকে। সেখানে দু’মাসে ১৭ জনের বিয়ে রুখেছে ব্লক প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তাদের অভিজ্ঞতা, বেশির ভাগ সময়েই গিয়ে দেখা যায়, বহু গরিব পরিবার বিয়ের কেনাকাটা, প্যান্ডেল গড়া, আলোর পিছনে খরচ করে ফেলেছে। বিয়ে বন্ধ হলেও তাদের আর্থিক ক্ষতি অস্বীকার করা যায় না। সে ক্ষেত্রে নাপিত, পুরোহিত, ডেকরেটর ব্যবসায়ীরা সঙ্গে থাকলে আগেই বিয়ে রোখা সম্ভব হবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।

বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সচেতনতা শিবিরে নাপিত, পুরোহিত বা ডেকরেটর ব্যবসায়ীদের বলা হবে— বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রীপক্ষ কথা বলতে গেলেই পাত্রীর মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড বা জন্মের শংসাপত্রের নকল চাইতে। নাবালিকা বিয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে ওঁরা নিশ্চয়ই জেনেবুঝে জড়িত থাকবেন না।’’

আরও পড়ুন:

আগুন, ধোঁয়ায় ফিরল আমরির আতঙ্ক

কিন্তু রুজির জন্য এই শ্রেণির কেউ যদি প্রশাসনের কাছে নাবালিকা বিয়ের খবর চেপে যান? বিডিও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘অন্য কোনও সূত্রে খবর পেয়ে যদি প্রশাসন-পুলিশ নাবালিকা বিয়ে আটকাতে যায়, তা হলে যাঁরা-যাঁরা জড়িত, সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।’’

ব্যবসায় ক্ষতি হবে ধরে নিয়েও প্রশাসনের সচেতনতা শিবিরে হাজির থাকতে চান পূর্বস্থলীর ডেকরেটর ব্যবসায়ী অসিত দেবনাথ, ক্ষৌরকার অনিল শীল, পুরোহিত কমল চক্রবর্তীরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এত দিন মেয়ে বা ছেলের পরিবার বিয়ের কথা বললেই রাজি হয়ে যেতাম। পাত্রীর বয়স নিয়ে ভাবিনি। এখন সে প্রসঙ্গ তুললে দু’-তিনটে কাজ হয়তো পাব না। কিন্তু বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকব।’’ বিডিও জানাচ্ছেন, নাবালিকা বিয়ে সামাজিক অপরাধ। তাই তা রুখলে প্রশাসন ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না। কিন্তু স্বীকৃতির প্রসঙ্গ বিবেচনা করা যেতে পারে।

মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘এটা ব্লক স্তরের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ভাল সাড়া মিললে, অন্য এলাকায় চালু করার কথা ভাবা যেতেই পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE