Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী

বর্ধমান নয়, বৈঠক হবে আউশগ্রামে

হঠাৎ নির্দেশে বদলে গেল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের স্থান। আর সেই বদল ঘিরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত তটস্থ রইল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

ঝিঙ্গুটির কাছে সাই কমপ্লেক্সে এখানে বৈঠকের কথা ছিল। জায়গা পাল্টে যাওয়ায় খোলা হচ্ছে বাঁশের কাঠামো। নিজস্ব চিত্র

ঝিঙ্গুটির কাছে সাই কমপ্লেক্সে এখানে বৈঠকের কথা ছিল। জায়গা পাল্টে যাওয়ায় খোলা হচ্ছে বাঁশের কাঠামো। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

হঠাৎ নির্দেশে বদলে গেল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের স্থান। আর সেই বদল ঘিরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত তটস্থ রইল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

বর্ধমানে আগামী মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক ও প্রশাসনিক জনসভা করার কথা। প্রথমে ঠিক ছিল, বর্ধমান শহরের কাছে ঝিঙ্গুটির কাছে ‘স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ বা সাই কমপ্লেক্সের মাঠে মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে প্রশাসনিক বৈঠক, পরে প্রশাসনিক জনসভা করবেন। সেই মতো শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রশাসনের কর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। তৃণমূলের নেতারাও লোক জোগাড়ে ব্যস্ত ছিলেন।

রাত ৮টা নাগাদ নবান্ন থেকে নির্দেশ এল, সাই কমপ্লেক্সে নয়। মুখ্যমন্ত্রী গুসকরার কাছেই কোনও একটি জায়গায় শুধুমাত্র প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। প্রকাশ্য সভা একেবারেই নয়। ওই নির্দেশ আসার পরেই অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) প্রণব বিশ্বাস, ১০০ দিন প্রকল্পের আধিকারিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য-সহ পুলিশের কর্তারা সাই কমপ্লেক্সের মাঠে গিয়ে ডেকরেটরের কর্মীদের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তার পরে চলে যান গুসকরা কলেজের মাঠে। সেখানে চারদিক ঘুরে দেখার পর রাত ১১টা নাগাদ ঠিক হয়, ওই মাঠে প্রশাসনিক সভা হবে।পাশের রটন্তী কালীতলার মাঠে হেলিকপ্টার নামবে।

ততক্ষণে অবশ্য সাই কমপ্লেক্সের মাঠে বাঁশের কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মঞ্চও শেষ পর্যায়ে। এমনকী রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেডও তৈরি হয়ে যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল থেকে সাই কমপ্লেক্স থেকে বাঁশের কাঠামো খোলা হতে থাকে। রটন্তী কালীতলার মাঠ হেলিকপ্টার নামার জন্য তৈরি হতে থাকে। দুপুর দেড়টা নাগাদ জেলা পুলিশ-প্রশাসনে কর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা গুসকরা কলেজ মাঠে যান। কিন্তু, মাঠের চেহারা দেখে আপত্তি তোলেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তারা। তাঁর জানান, প্রশাসনিক সভা ও হেলিকপ্টার নামার জায়গা একই চত্বরে করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে নেমে হেঁটেই বৈঠকস্থলে ঢুকতে চান। শেষে গুসকরা শহরে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকও বাতিল হয়ে যায়। ফের জায়গার খোঁজ শুরু হয়। গুসকরার কাছেই বর্ধমান-সিউড়ি (জাতীয় সড়ক-২বি) সড়কের ধারে শিবদা গ্রামে একটি জায়গার খোঁজ মেলে। কিন্তু, সেই জায়গার উপর দিয়ে ৩৩ কেভি ও ১১ কেভির বিদ্যুৎ পরিবাহী তার গিয়েছে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কথা বলে ওই তার দু’টি সরানোর ব্যবস্থা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিক করেন, শিবদার ওই মাঠেই মঙ্গলবার বিকেল চারটের সময় প্রশাসনিক বৈঠক করে বোলপুর চলে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকের স্থান হঠাৎ পাল্টে গেল কেন? প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক— দু’রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। তৃণমূলের অন্দরের দাবি, সাংগঠনিক ভাবে গুসকরা বা আউশগ্রাম পূর্ব বর্ধমান জেলার বাইরে রয়েছে। আউশগ্রাম-মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর সে কারণে বর্ধমানের নেতৃত্ব গুসকরার বদলে বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে বৈঠক ও সভা করতে চেয়েছিলেন। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পূর্ব বর্ধমানের কোনও তৃণমূল নেতাই।

প্রশাসনিক সূত্রে যে ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, তা হল, দার্জিলিং যাওয়ার আগে নবান্নয় মুখ্যমন্ত্রী গুসকরা বা অন্য কোনও গ্রামীণ এলাকায় বৈঠক ও সভা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই মতো জেলা প্রশাসনের কর্তারা গুসকরা, গলসি, ভাতারের ওরগ্রাম ও বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্স দেখে আসেন। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “গুসকরা শহরে নিরাপত্তার কারণে সভা করা উচিত নয় বলে জেলা প্রশাসন রিপোর্ট দিয়েছিল। সাই কমপ্লেক্সে বৈঠক ও সভা করা ভাল বলে সুপারিশ করে।’’

ওই কর্তাই জানাচ্ছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় দার্জিলিং থেকে নেমে ওই তথ্য জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী সাই কমপ্লেক্সে বৈঠক ও সভা বাতিল করে গুসকরাতেই বৈঠক করতে চান বলে জানান। মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রশাসনিক জনসভা করবেন না বলেও মমতা জানিয়ে দেন। শনিবার জেলাশাসক বলেন, “নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী, আউশগ্রামের শিবদায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE