অসুস্থ রাজু পালের বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিচ্ছেন পুরকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক মত এবং পথের দ্বন্দ্ব আছে প্রবল। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতি দিনই নতুন নতুন মাত্রা পাচ্ছে সেই দ্বন্দ্ব। রোজ রোজ ‘রং চিনে নেওয়ার’ কোলাজে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বারাসাত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় বিজেপি কর্মী অসুস্থ। সেই খবর পেয়ে রাজনৈতিক দূরত্ব মুছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সুনীল। দ্রুত চিকিৎসার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অসুস্থ বিজেপি কর্মীর পরিবারের হাতে তুলে দিলেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড।
বারাসত পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা রাজু পাল। রাজনৈতিক পরিচয়ে এলাকায় ‘সক্রিয় বিজেপি কর্মী’ হিসাবে পরিচিত। বছর বাইশের রাজু কয়েক মাস ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন। নিম্নবিত্ত পরিবার। অর্থের অভাবে ছেলের ভাল চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না রাজুর বাবা মাধব পাল। ফলে দিন দিন রাজুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। চেন্নাইয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন মাধব পালের এক পরিচিত। কিন্তু ভিন রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা করানোর খরচ জোগাড় করা অসম্ভব মাধবের কাছে।
শেষে মঙ্গলবার সকালে মাধব পাল সটান হাজির হন বারাসত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সুনীল আবার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডেরই বিদায়ী কাউন্সিলার। মাধবের পরিস্থিতির কথা শুনে তাঁর পাশে দাঁড়ান সুনীল। নিজের উদ্যোগেই ভেলোরে যাওয়ার বিমান টিকিট কেটে দেন তিনি। দমদম বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বারাসত পুরসভার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করে দেন সুনীল। অবশ্য রাজুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে বিমানে তোলা হয়নি। তাঁকে ভর্তি করা হয় বারাসত হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: কংগ্রেসকে নিয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ রবিবার বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ
আরও পড়ুন: শুভেন্দু নেতাই ছাড়তেই গঙ্গাজলে শহিদ বেদী শুদ্ধ করল তৃণমূল
মঙ্গলবার রাতেই পুরসভার কর্মীদের নিয়ে রাজুর বাড়িতে পৌঁছন সুনীল। সেখানে রাজুর ছবি এবং আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন পুর কর্মীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই রাজুর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড।
তৃণমূল নেতৃত্বের সহযোগিতায় আপ্লুত মাধব পাল বললেন, ‘‘ছেলে বিজেপি করে বলে প্রথমে দাদার কাছে যেতে একটু সঙ্কোচ বোধ করছিলাম। কিন্তু ওর দিকে তাকিয়ে সুনীল’দার কাছে যাই। তাঁকে সব সমস্যার কথা বলতেই তিনি ঝুলি ভরে দিয়েছে।’’
নিজের ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাধবের অসহায়তার কথা অজানা নয় সুনীলের। তিনি বলছেন, ‘‘ওঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভাল না। এর উপর ছেলের অসুস্থতা নিয়ে পরিবার খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিল। আমরা এই সঙ্কটের সময়ে রাজনৈতিক রঙ দেখিনি। কেউ অসুস্থ হলে দেখার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
রাজু এখন বারাসাত হাসপাতালের চিকিসাধীন। হাসপাতাল সুপার সুব্রত মন্ডল বললেন, ‘‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে রাজুকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়।’’ খবর পেয়ে বারাসত পুরসভার প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy