ফাইল চিত্র।
কোনও মতেই কলেজে আসন খালি রাখা যাবে না। তাই দফায় দফায় ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের সব রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে ফাঁকা আসন পূরণ করতে ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়ে ২০ অগস্ট করা হয়েছে।
মঙ্গলবার আশুতোষ কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসে এক সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে-সব কলেজে আসন খালি আছে, সেখানে ২০ অগস্ট পর্যন্ত পড়ুয়া ভর্তি করা যাবে। ভর্তি হবে মেধার ভিত্তিতেই। আসন ফাঁকা রাখা যাবে না।’’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মূলত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজেই সময়সীমা বৃদ্ধির উল্লেখ করেছিলেন। পরে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজেই ভর্তির সময়সীমা বাড়ছে ২০ অগস্ট পর্যন্ত।
মন্ত্রীর ঘোষণায় শিক্ষা শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, নতুন সিমেস্টার পদ্ধতিতে সীমিত সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ করা যাবে কী ভাবে? ক্লাস তো শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্ধিত সময়ে ভর্তি হয়ে সেই পড়ুয়ারা সিমেস্টার পদ্ধতির পঠনপাঠন সামাল দেবেন কী করে?
কলেজে ভর্তিতে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে এ বার বিস্তর গোলমাল হয়েছে। প্রথমে ৬ জুলাই ছিল ভর্তির শেষ দিন। পরে উচ্চশিক্ষা দফতর সময়সীমা বাড়িয়ে করে ১০ জুলাই। তার পরেও দেখা যায়, প্রায় ৪০ হাজার আসন ফাঁকা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩১টি কলেজে অনার্স-সহ আসন-সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৬০ হাজারই সংরক্ষিত। তারও মধ্যে ৩৫ হাজারের মতো আসনে কেউ ভর্তি হননি। সঙ্গে রয়েছে অসংরক্ষিত ক্ষেত্রের ফাঁকা আসন।
কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, প্রথম সিমেস্টার জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়ায় গোলমালের ফলে বহু কলেজেই ১০ জুলাইয়ের পরে ক্লাস শুরু হয়েছে। এ বার ২০ অগস্ট পর্যন্ত ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ায় যাঁরা ওই সময়ে ভর্তি হবেন, তাঁদের পক্ষে সময়ের মধ্যে কোর্স শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে যাঁরা ভর্তি হবেন, তাঁদের ক্লাস শুরু হবে সেপ্টেম্বরে। তার পরের মাসেই পুজোর লম্বা ছুটি। থাকছে শুধু নভেম্বর। ডিসেম্বরে পরীক্ষা। অর্থাৎ ছ’মাসের কোর্স দু’মাসে শেষ করতে হবে, যেটা প্রায় অসম্ভব।’’ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল করের বক্তব্য, ভর্তির সময় বাড়ানোটা সরকারের খুব ভাল পদক্ষেপ। তবে এতটা না-পিছিয়ে একটু আগে করা গেলে ভাল হত। কারণ এ বছর সিবিসিএস বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ পদ্ধতিতে কলেজে হাজিরায় ১০ নম্বর রয়েছে। এই নম্বর নিয়েও কলেজগুলিকে ভাবতে হবে। বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেনের অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জুলাইয়েই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলে ভাল হত। নইলে তো কোর্স শেষ করার সময়ই পাওয়া যাবে না।’’
শিক্ষামন্ত্রী জানান, মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য কাদের আবেদন বিবেচিত হচ্ছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি তা জানাবে আবেদনকারীদের। সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া নির্দিষ্ট দিনে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হবেন। সোমাদেবী জানান, ফের পোর্টাল খুলে মেধা-তালিকা সংশোধন করে প্রকাশ করতে হবে।
কিন্তু পঠনপাঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা মেধা-তালিকা সংশোধনে সময় দেবেন কী ভাবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠছে, এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও ভর্তিতে গোলমাল হচ্ছে কেন? কেনই বা ফাঁকা থেকে যাচ্ছে এত আসন?
শিক্ষা শিবিরের একাংশ জানান, হিমঘরে আলু আটকে রেখে যে-ভাবে বাজারদর বাড়ানো হয়, সেই ছকেই ভর্তি নিয়ে সুকৌশলে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ‘দাদা-দিদিদের’ দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন আতঙ্কিত পড়ুয়ারা। কিন্তু সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে পড়ুয়াদের একাংশকে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ছাত্রছাত্রীরা।
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য জানান, মেধা-তালিকার বাইরে কম নম্বর পাওয়া কোনও পড়ুয়া কলেজে ভর্তি হলে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার ভাবনাচিন্তা চলছে শিক্ষা দফতরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy