Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
College Admission

টাকা দিয়েও চান্স মেলেনি, টিএমসি নেতাকে তুলে নিয়ে গেল পড়ুয়াদের পাড়া

কলেজগুলিতে টাকার বিনিময়ে ভর্তি-চক্র চলছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তাল রাজ্য। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তা মানতে নারাজ ছিলেন।

অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তমাল মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা তমাল মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ১৬:৫৩
Share: Save:

কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবেন বলে দুই পড়ুয়ার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ভর্তি তো করাতে পারেনইনি, উল্টে পড়ুয়াদের সেই টাকা ফেরত দেননি তৃণমূলের এক যুব নেতা।

টাকা ফেরত না পেয়ে এ বার ওই তৃণমূল নেতাকে শিয়ালদহ এলাকা থেকে গাড়ি করে তুলে নিয়ে গেলেন ওই দুই পড়ুয়া এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। টাকা ফেরত না-পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন ওই পড়ুয়ারা।

শুধু এ বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই টাকার বিনিময়ে কলেজে কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতেন তাঁরা। এ বার ‘ফাঁদে’ পড়ে নিজেদের এমন কীর্তিকলাপের কথা স্বীকার করলেন তৃণমূল যুব নেতা তমাল মণ্ডল। প্রাক্তন ওই ছাত্র পরিষদ নেতা সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ছাত্রসংসদের সভাপতিও ছিলেন।তমালের মতো প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যে কলেজগুলির বর্তমান ছাত্রনেতাদেরও ঘনিষ্ঠ যোগ আছে, সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন ওই তৃণমূল যুবনেতা। তমালের কথায়, ‘‘কয়েক বছর ধরে পড়ুয়াদের টাকার বিনিময়ে ভর্তি করাচ্ছি। বিভিন্ন কলেজে যোগাযোগও রয়েছে আমার।’’

হঠাৎ করেই এ সব কথা বলছেন তমাল, তেমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আসলে তিনি ‘প্যাঁচে’ পড়েছেন। কী সেই ‘প্যাঁচ’?

কয়েক দিন আগে সোনারপুরের দুই পড়ুয়া আসিফ সরকার এবং সৃজিতা কর ভর্তির ফর্ম তুলতে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে এসেছিলেন। সেই সময় তমালের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। বাণিজ্য শাখায় পড়ার ইচ্ছার কথা তাঁরা ওই যুব নেতাকে জানান।তখন তমাল তাঁদের বলেছিলেন, ‘‘সাউথ সিটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেব। সে জন্য ৪০ হাজার টাকা লাগবে।’’ পরে যদিও ‘দরাদরি’ করে দু’জনের জন্য ৩৬ হাজার টাকা তমালকে দিয়েছিলেন আসিফ-সৃজিতা। তাঁদের মার্কশিটের আসল কপিও জমা নিয়ে রেখেছিলেন তমাল।

কিন্তু, সময় পেরিয়ে গেলেও সাউথ সিটি কলেজে ভর্তি হতে পারেননি আসিফ-সৃজিতা। বার বার তমালের সঙ্গে যোগাযোগ করায়, তিনি প্রতিশ্রুতি দেন,বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবেন। কিন্তু, দিনের পর দিন কেটে গেলেও কোনও কলেজে ভর্তি হতে পারেননি ওই দু’জন। মার্কশিট জমা থাকায়, অন্য কোথাও ভর্তির জন্য ফর্মও তুলতে পারেননি তাঁরা।এর পরেই দুই পড়ুয়া টাকা ও মার্কশিট ফেরত চান। কিন্তু, কোনওটাই ফেরত দিচ্ছিলেন না তমাল। অভিযোগ, তিনি নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন: নেতাকে ভোগাচ্ছে চোখ, শহিদ স্মরণের আগে তাই রাজ্য জুড়ে উজ্জ্বল ‘টিম অভিষেক’

এর পর টাকা এবং মার্কশিট ফেরত পাওয়া জন্য ওই দুই পড়ুয়া তমালকে পাকড়াও করার ছক কষেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে শিয়ালদহ দেখা করতে বলেন দুই পড়ুয়া। সেই মতো তমাল দেখাও করেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পরিবারের কয়েক জন সদস্যও। তমাল সেই সময় তাঁদের বলেন, ‘‘টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিছু নগদ টাকা এবং গয়না নিয়ে এসেছি। এগুলি নিয়ে যান।’’ কিন্তু, তাতে রাজি হননি ওই পড়ুয়া এবং তাঁদের পরিবার। তমালকে তাঁরা সঙ্গে করে সোনারপুরে নিয়ে যান। সেখানেই ওই যুবককে আপাতত আটকে রাখা হয়েছে। ওই পড়ুয়াদের দাবি, টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তমালকে তাঁরা ছাড়বেন না। বিষয়টি তাঁরা সোনারপুর থানাকেও জানাবেন।

আটক থাকা ওই ছাত্রনেতা আপাতত ওই পড়ুয়াদের জিম্মায় রয়েছেন। পড়ুয়াদের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তমাল নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, ২০১২ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। তমাল ওই দুই পড়ুয়া মার্কশিটের অরিজিনাল কপি নিয়ে নেওয়ায় তাঁরা অন্য কোথাও ভর্তি হতে পারেননি।

এ বিষয়ে পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাঁরা কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়ে সিন্ডিকেটের চক্করে পড়েন। তাঁদের বলা হয়—চিন্তার কোনও কারণ নেই। ইউনিয়নের কোটা থাকে। টাকা দিলেই কলেজে সেই কোটায় ভর্তি হওয়া যাবে। কিন্তু, টাকা দিয়েও ভর্তি হতে তো পারেনইনি, উল্টে টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না। তাই ওই নেতাকে আটকে রেখেছেন তাঁরা।

কলেজগুলিতে টাকার বিনিময়ে ভর্তি-চক্র চলছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তাল রাজ্য। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তা মানতে নারাজ ছিলেন। তাঁরই দলের এক যুব নেতা এ সবে জড়িয়ে থাকার কথা স্বীকার করার পর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি। তবে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি মণিশংকর মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE