Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কত কোল খালি হলে শান্তি ফেরে?

শুক্রবার দুপুরে ছেলের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছিলেন ঝর্নাদেবী।

শোকার্ত: তিন বছর আগে কাশ্মীরে নিহত জওয়ান অভিজিৎ নন্দীর ছবি হাতে তাঁর বাবা-মা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শোকার্ত: তিন বছর আগে কাশ্মীরে নিহত জওয়ান অভিজিৎ নন্দীর ছবি হাতে তাঁর বাবা-মা। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

পুলওয়ামায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে জওয়ানদের মৃত্যুর খবর শোনার পর নতুন করে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাঁতুড়ির মধুবনপুর গ্রামের অভিজিৎ নন্দীর পরিবারে। তিন বছর আগে কাশ্মীরেই শহিদ হন ওই বিএসএফ জওয়ান। কুপওয়াড়ায় সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গীদের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। সেই ক্ষত বুকে নিয়েই শুক্রবার তাঁর বাবা-মা মধুসূদন নন্দী ও ঝর্না নন্দী বলেন, ‘‘এই ভাবে আর কত মায়ের কোল খালি হবে? কবে শান্তি ফিরবে?” একই সঙ্গে জঙ্গী দমনে সরকারের কাছে আরও কড়া পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

শুক্রবার দুপুরে ছেলের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছিলেন ঝর্নাদেবী। তাঁকে সামলাচ্ছিলেন স্বামী প্রৌঢ় মধুসূদনবাবু। কোনওরকমে ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘আর কত দিন এ ভাবে চলবে? কেন সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারছে না?”

কাশ্মীরে গাড়িবোমায় ৪২ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে নেটিজেনদের একাংশ দাবি তুলেছেন, আর আলোচনা নয়, এ বার বদলা চাই। প্রায় একই সুরে মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘বার বার সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গীরা গুলি করে বা দেশের মধ্যে ঢুকে জওয়ানদের মারবে, আর আমাদের সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে— এটা মানা যায় না। জঙ্গীদের কড়া শাস্তি দিতে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে।”

তিন বছর আগে কাশ্মীরে নিহত জওয়ান অভিজিৎ নন্দী।

অভিজিতের ভাই চিরঞ্জিতের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে যে জওয়ানেরা জঙ্গী হামলায় মারা গেলেন, তাঁরাও আমার দাদার মতোই দেশ রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। তাহলে সরকার কী করছে? জঙ্গীরা এত সাহস পাচ্ছে কী করে?’’

বিএসএফে চাকরি পেয়ে প্রশিক্ষণের কয়েকমাস পরেই কাশ্মীর সীমান্তে যেতে হয়েছিল অভিজিৎকে। সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের ৫ জুলাই কুপওয়াড়া সীমান্তে লাইন অফ কন্ট্রোলের ফয়োরার্ড লোকেশানে বিএসএফের বাঙ্কারে সেন্ট্রির দায়িত্বে ছিলেন অভিজিৎ। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সীমান্তের ওপার থেকে পাক সেনাবাহিনী অথবা জঙ্গীদের ছোড়া গুলিতে জখম হন তিনি। সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় ওই তরতাজা যুবকের। ঘটনার দু’দিন পরে জাতীয় পতাকায় মোড়া তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফিরেছিল মধুবনপুরে।

সেই স্মৃতি টাটকা নন্দী পরিবারে। ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘মনে আছে, সেই অভিশপ্ত দিনটার আগের দিনই ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। জানিয়েছিল, খুব দ্রুত ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবে। পুজোতে বাড়িতে থাকবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু, ছেলে আর ফিরল কই!’’

খেলাধুলোয় বিশেষ করে সাঁতারে দক্ষ অভিজিৎ প্রথম থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। সেই মতো নিজেকে তৈরিও করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আসানসোলের একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার এক মাস পরেই ২০১২ সালে বিএসএফের চাকরি পান। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের প্রশিক্ষণের পরে প্রথম কাজে যোগ দেন নদিয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তে। সেখান থেকে কলকাতা। তারপরে অভিজিৎদের বিএসএফের ১১৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকায়। সেখানেই শেষ।

সামান্য কিছু চাষের জমি আছে মধুসূদনবাবুর। চাষের আয়েই সংসার নির্ভরশীল। অভিজিতের ভাইকে আর সেনাবাহিনীতে পাঠাতে ইচ্ছুক নন ঝর্নাদেবী। তিনি জানান, অভিজিৎ সেনাবাহিনীতে যাক, তা তাঁরা চাইতেন না। কিন্তু, ছেলের আগ্রহ দেখে তাঁরা আটকাতে পারেননি।

অভিজিতের ভাই চিরঞ্জিত অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘দাদার মৃত্যুর পরে বিএসএফ থেকে আমাকে কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাবা-মা কিছুতেই ছাড়তে রাজি নয়। বাবা-মা বারবার বলছিল, ‘এক ছেলে গিয়েছে— এ বার তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কী নিয়ে বাঁচব?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pulwama Terror Attack Terrorism Death CRPF Jawan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE