Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অনীক থেকে অ্যানি, বিয়ে করলেন সাগ্নিককে

নাতি-নাতবৌয়ের বিয়ে মিটিয়ে ফেরার পথে অশীতিপর বৃদ্ধা শান্তি চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে গেলাম। ওদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।’’

বিবাহবাসর: রবিবার জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবে। —নিজস্ব চিত্র।

বিবাহবাসর: রবিবার জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবে। —নিজস্ব চিত্র।

অর্জুন ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৯
Share: Save:

নাতি-নাতবৌয়ের বিয়ে মিটিয়ে ফেরার পথে অশীতিপর বৃদ্ধা শান্তি চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে গেলাম। ওদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।’’

জলপাইগুড়ির নয়াবস্তির বাসিন্দা শান্তিদেবীর নাতি সাগ্নিকের সঙ্গে বিয়ে হল বালুরঘাটের অ্যানি দত্তের। অ্যানির আগে নাম ছিল অনীক দত্ত। অনীক অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছেন সম্প্রতি। তারপরেই আড়াই বছরের প্রেমিক সাগ্নিককে বিয়ে করলেন রবিবার জলপাইগুড়িরই টাউন ক্লাবে। নিমন্ত্রিত ছিলেন শ’দুয়েক অতিথি। মেনুতে ছিল কুলচা পরোটা, বাটার পনির মশলা, সাদা ভাত, মুগ ডাল, ফিশ ফিঙ্গার, ডিমের কারি, পাবদা সর্ষে, ফ্রায়েড রাইস, পাঁঠার মাংস, চাটনি, রসগোল্লা, কালাকাঁদ আর পান। অতিথিদের কয়েক জন জানালেন, জলপাইগুড়িতে যে এমন বিয়ে হল, তাতে তাঁরা খুশি।

বিয়ে হয়েছে রীতিমতো মালাবদল করে। অ্যানির হাতে সোনার চুড়ির সঙ্গেই ছিল শাঁখা, পলা। বিয়ের সব আচারই পালন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই পরিবার। পুরোহিত গোপাল চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘শাস্ত্রীয় বিধি মেনেই বিয়ে দিয়েছি।’’

আরও পড়ুন: লকেটকে ‘নাচুনি’ বলে কটাক্ষ অনুব্রতের

সাগ্নিক ময়নাগুড়ির একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। অ্যানিও বালুরঘাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ান। সাগ্নিক জলপাইগুড়ির একটি কলেজ থেকে পাশ করে হাওড়ায় পড়তে যান। একই সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার কাজও করতেন। অনীকও সেই কাজ করতেন। সেখানেই তাঁদের দেখা। আস্তে আস্তে সম্পর্কও তৈরি হয়। দুই বাড়ির লোকেরাই তা জেনেও যান। তাঁদের অনেকে এই সম্পর্ক মেনেও নেন।

সাগ্নিকের বাবা সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দু’জন পুরুষের মধ্যে সম্পর্কেও আমাদের বাড়ির কারও আপত্তি ছিল না।’’ অ্যানির বাবা ও মা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মা প্রীতিরানি দত্ত বলেন, ‘‘ছেলের ঝোঁক কোন দিকে তা খেয়াল করার পরে আমরা প্রথমে আহত হইনি বলা অনুচিত। ওর বাবা এই সম্পর্ক এখনও মেনেও নেননি। কিন্তু আমার মনে হয়, ও যে ভাবে সুখী হবে, সেই পথেই আমাদের সাহায্য করা কর্তব্য।’’ তাই বিয়ের উদ্যোগেও সাড়া দেন।

আরও পড়ুন: ভূতুড়ে কর্মী খোঁজা শুরু স্কুল-কলেজ পঞ্চায়েত পুরসভায়

অ্যানি বলেন, ‘‘স্বেচ্ছায় এবং নিজের উপার্জনের টাকায় পুরুষ থেকে মহিলা হয়েছি। তারপরেই দু’জনে বিয়ে করব ঠিক করি।’’ সাগ্নিকের বক্তব্য, ‘‘অ্যানিকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। এ বার দু’জনে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করছি। ইচ্ছে করেই সামাজিক ভাবেই বিয়ে করলাম।’’

তবে দু’জনের চাকরিক্ষেত্র দু’জায়গায়। তাঁরা চেষ্টা করছেন যতটা সম্ভব এক সঙ্গে থাকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE