Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

এডসের ভয়, রোগীকে ফেরাতে নারাজ পরিবার

এডস আক্রান্ত এক যুবককে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছেন না তাঁর পরিবারেরই কয়েক জন সদস্য। তাঁকে গ্রামে ঢুকতে দিতে রাজি নন পাড়া প্রতিবেশীরা। তাঁদের ভয়, রোগীর মল থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ! তাই চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিলেও বাধ্য হয়ে তিনি এখনও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

এডস আক্রান্ত এক যুবককে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছেন না তাঁর পরিবারেরই কয়েক জন সদস্য। তাঁকে গ্রামে ঢুকতে দিতে রাজি নন পাড়া প্রতিবেশীরা। তাঁদের ভয়, রোগীর মল থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ! তাই চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিলেও বাধ্য হয়ে তিনি এখনও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই যুবকের মেজদার পরিবার তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে রাজি না হলেও তাঁর পাশে রয়েছে বড়দার পরিবার। আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের চাপের মুখে মাথা না নুইয়ে তাঁরা রবিবার এ নিয়ে হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

শনিবার চিকিৎসক ওই রোগীকে হাসপাতালের থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাঁর ভাইঝি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন আরও কয়েক দিন কাকাকে রেখে দিতে। যাতে তাঁরা গ্রামের লোকজনকে বুঝিয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তবে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, শনিবার হাসপাতালের সুপার জানা সত্ত্বেও কেন জানানো হল না প্রশাসনকে? কারণ, এ ক্ষেত্রে এডস আক্রান্তকে বাড়ি ফেরানোর দায়িত্ব প্রশাসনেরই। সুপারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেও কথা বলেছি পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু তখন বাধা দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানাননি। আজই প্রথম লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। যা যা করার করছি।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, ‘‘আমার বিষয়টি জানা ছিল না। আমরা ওই গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাব এবং গ্রামবাসীদের সচেতন করে রোগীকে বাড়িতে ফেরাব।’’ দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিকে বাড়ি ঢুকতে দিতে হবে। বাধা দেওয়াটা আইনত অপরাধ। প্রথমে সচেতন করব। কাজ না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

রোগীর স্ত্রী একই রোগে চার মাস আগে মারা গিয়েছেন। তাঁদের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। অভিযোগ, ওই শিশুদের পাড়ার অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হচ্ছে না। রোগীর মেজ বৌদি বলেন, “এটা খুবই খারাপ রোগ। সারাক্ষণ পায়খানা করে রাখে। সেই পায়খানা থেকে রোগটা ছড়িয়ে পড়বে। আমরা চাই না যে ও আর বাড়ি ফিরে আসুক।” পাশেই গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের সুরেশ সরকারের বাড়ি। একই সুরে গলা মিলিয়েছেন তিনিও। তাঁর কথায়, “রোগটা ভাল নয়। পায়খানার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা বলেছি বাড়ি ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এডস আক্রান্ত গোয়ায় কাজ করতেন। বছর দুয়েক আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। মাস কয়েক পর থেকে স্বামী স্ত্রীর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। ওই যুবকের পেটের গোলমাল শুরু হয়, যা কিছুতেই সারছিল না। বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনের রক্ত পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁরা এইচআইভি আক্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AIDS HIV Denial Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE