Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মদ্যপ স্বামীকে পিটিয়ে খুনের নালিশ, ধৃত মহিলা

মদ্যপান করে স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, আর স্বামীর অত্যাচার সয়েও ঘরের বৌয়ের সংসারের জোয়াল টেনে চলা— এ দৃশ্য বড্ড চেনা। এমনকী মদ্যপ স্বামীর হাতে মার খেয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে মাঝেমধ্যে।

ঝাড়গ্রাম আদালতে নমিতা দাস। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ঝাড়গ্রাম আদালতে নমিতা দাস। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

মদ্যপান করে স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, আর স্বামীর অত্যাচার সয়েও ঘরের বৌয়ের সংসারের জোয়াল টেনে চলা— এ দৃশ্য বড্ড চেনা। এমনকী মদ্যপ স্বামীর হাতে মার খেয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে মাঝেমধ্যে।

এ বার একেবারে উল্টো ঘটনার সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম। মদ্যপ স্বামীকে গাছে বেঁধে মারতে মারতে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। নমিতা দাস নামে বছর আটত্রিশের ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় নমিতা তাঁর অপরাধের কথা কবুল করেছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, মার খেয়ে স্বামী যে একেবারে মরে যাবেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি।

মাস কয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই দাসপুরের কাশিয়াড়াতে মদ্যপ স্বামীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এক মহিলা। এ বারের ঘটনাস্থল ঝাড়গ্রাম থানার বাঁধগোড়া অঞ্চলের শ্যামসুন্দরপুর গ্রাম। শ্যামসুন্দরপুরের বাসিন্দা রঞ্জিত দাস (৫০) হাওড়ার একটি হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিকের কাজ করতেন। পুজোর ছুটিতে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন। রঞ্জিতের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে সরস্বতীর বিয়ে হয়েছে বাঁকুড়ার খাতড়ায়। আর ছেলে করুণাপ্রসাদ স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার, বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় স্ত্রী নমিতা ও ছেলেকে নিয়ে কাছেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন রঞ্জিত। অনুষ্ঠান শেষের আগে ছেলেকে নিয়ে নমিতা বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর অনেক রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন রঞ্জিত।

পুলিশের দাবি, জেরায় নমিতা জানিয়েছেন, স্বামীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখে তিনি মেজাজ হারান। দু’-চার কথা শুনিয়েও দেন। তখন রঞ্জিত তাঁকে পাল্টা মারধর করেন। তখনই সহ্যের বাঁধ ভাঙে নমিতার। স্বামীকে ঘর থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে উঠোনের শিমূল গাছে শাড়ি দিয়ে বেঁধে শুরু হয় মারধর। পুলিশ সূত্রে খবর, নমিতা জানিয়েছেন, লাঠি দিয়ে স্বামীকে বেধড়ক পেটান তিনি। স্বামীকে ওই অবস্থায় রেখে ঘরে শিকল দেন নমিতা।

রাতভর গাছে বাঁধা অবস্থাতেই পড়েছিলেন রঞ্জিত। বুধবার সকালে অচৈতন্য স্বামীকে টোটোয় চাপিয়ে এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে যান নমিতা। ওই হাতুড়ে জানান, রঞ্জিতের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, এরপর দেহ সৎকার করতে চেয়েছিলেন নমিতা। কিন্তু রঞ্জিতের পরিজনেরা চলে আসায় সে সুযোগ আর তিনি পাননি।

শেষে রঞ্জিতের মামাতো ভাই সুদেব মণ্ডল ঝাড়গ্রাম থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ করেন। বুধবার সন্ধ্যায় নমিতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম আদালতে ধৃতকে হাজির করা হলে চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। এ দিন আদালত চত্বরে একেবারে বিধ্বস্ত লাগছিল নমিতাকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে শোনা যায় তাঁর আক্ষেপ, ‘‘রাগের মাথায় কী যে করে ফেললাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcoholic husband
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE