Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গিতে মৃত্যু? ডাক্তারকে পুর তলব হাওড়ায়

এ বার সেই তথ্য লুকোনোর অভিযোগ উঠছে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি হাসপাতালের যে-ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা লিখেছেন, নথিপত্র-সহ তাঁকে তলব করেছে ওই পুরসভা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৬
Share: Save:

প্রাণহানি যত বাড়ছে, যেন তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে ডেঙ্গির তথ্য গোপন করার প্রবণতা! এ বার সেই তথ্য লুকোনোর অভিযোগ উঠছে হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি হাসপাতালের যে-ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা লিখেছেন, নথিপত্র-সহ তাঁকে তলব করেছে ওই পুরসভা।

বৃহস্পতিবার রাতে ডেঙ্গিতে বেলুড়ের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু হাওড়া পুরসভা তা মানতে রাজি নয়। পুরসভার দাবি, কোমরে যন্ত্রণা নিয়ে ওই ব্যক্তি প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তিনি ভর্তি হন উত্তর হাওড়া টিএল জায়সবাল হাসপাতালে। সেখানে ভর্তির এক দিন পরে তিনি মারা যান। পুরসভার প্রশ্ন, ওই ব্যক্তির এনএসওয়ান পজিটিভ হলেও আইজিএম বা আইজিজি পজিটিভ কি না, সেটা তো পরীক্ষাই করা হয়নি। তা হলে হাসপাতালের চিকিৎসক কী ভাবে লিখে দিলেন যে, ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতেই? পুরসভা তাই মনে করছে না, ওই ব্যক্তি ডেঙ্গি সংক্রমণেই মারা গিয়েছেন।

মৃতের নাম উত্তম বড়ুয়া (৫৩)। হাওড়ার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের দীননাথ ঘোষ স্ট্রিটের ওই প্রৌঢ় ৯ সেপ্টেম্বর প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বালির শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি হন। তার আগে জ্বর নিয়ে ৫-৬ দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন। ১২ তারিখে ওই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তার রিপোর্টে লেখা হয় ‘হাইলি ডেঙ্গি পজিটিভ’। সেই রাতে ওই হাসপাতাল থেকে রোগীকে অবিলম্বে কোনও সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘রেফার’ করা হয়। রোগীর আত্মীয়েরা ঘুসুড়ির টিএল জায়সবাল হাসপাতালে উত্তমবাবুকে ভর্তি করিয়ে দেন। ভর্তির সময় ওই সরকারি হাসপাতালে রক্তের

রিপোর্ট, রেফারের নথি জমা দেওয়া হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৩টেয় উত্তমবাবু মারা যান। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয় ‘এনএসওয়ান রিঅ্যাক্টিভ ডেঙ্গি ফিভার’।

উত্তমবাবুর দাদা গৌতম বড়ুয়া বলেন, ‘‘ও পাঁচ-ছ’দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। বালির হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে চিকিৎসকরা ডেঙ্গি হয়েছে বলেই জানান। সরকারি হাসপাতালও একই কথা বলে।’’

হাওড়া পুরসভার মেয়র-পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য জানান, পুরসভার তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ওই ব্যক্তি ৯ তারিখে কোমরে যন্ত্রণা নিয়ে বালির একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে জ্বর নিয়ে টিএল জায়সবালে ভর্তি হন। সেখানেই মারা যান। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘প্রশ্ন হল, যে-চিকিৎসক ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন, তিনি কি এনএসওয়ান পজিটিভের সঙ্গে আইজিএম বা আইজিজি পজিটিভ দেখার পরেই নিশ্চিত হয়ে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা লিখেছেন?’’ একই সুর হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাসের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে টিএল জায়সবাল হাসপাতালের যে-চিকিৎসক ওই ডেথ সার্টিফিকেট লিখেছেন, তাঁকে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ নিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’

উত্তমবাবু যে-এলাকার বাসিন্দা ছিলেন, সেই দীননাথ ঘোষ স্ট্রিট বা আশপাশের পরিস্থিতি যে ডেঙ্গির মশা জন্মানোর অনুকূল, এক নজর দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই সেখানে জল জমে। সেই জল জমে থাকে কয়েক দিন। সুরজ কুমার নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এখানে পুর পরিষেবা বলতে কিছুই নেই। পাঁক ওঠা নর্দমা, চতুর্দিকে ছড়ানো আবর্জনা আর মশার কামড়ের মধ্যেই আমাদের থাকতে হয়। এখানে তো ডেঙ্গি হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE