গাড়ির গতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে জানা নেই কারও।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা ‘সামলে চালাও জান বাঁচাও’ ধ্বনি দিয়ে পথ-নিরাপত্তার প্রচার চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু বিশেষ করে জাতীয় সড়কে ঘণ্টায় সর্বাধিক কত কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানো যায়, তার কোনও নিয়মবিধি আছে কি? থাকলে তার খোঁজ রাখেন ক’জন? আদৌ সেই গতি-বিধির তোয়াক্কা করেন কি গাড়িচালকেরা?
রবিবার ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুতে ফেরারি গাড়ির দুর্ঘটনার পরে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও এক্সপ্রেসওয়ে, জাতীয় সড়কে কোন গাড়ি কত কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারবে, সেটা এপ্রিলেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও হাইওয়ে মন্ত্রকের গেজেট নোটিসে। তার পরে কেটে গিয়েছে দু’মাস। সেই নির্দেশিকার খবর রাখেন ক’জন?
রাজ্যের কোনও জাতীয় সড়কের ধারে এমন নির্দেশিকার বোর্ড নেই বলে অভিযোগ গাড়িচালকদের। তাই গাড়ির গতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তা-ও তাঁদের জানা নেই। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এনএইচএআই)-র এক আধিকারিক জানান, গোটা দেশেই জাতীয় সড়কের নকশায় গাড়ির গতিবেগ (ডিজাইন স্পিড) ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। ‘‘কিন্তু অনেক গাড়ির গতিবেগই কয়েক গুণ বেশি থাকে। তখন নিয়ন্ত্রণ হারালেই ঘটে বিপদ,’’ বলেন ওই কর্তা। রবিবারের ঘটনার পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জেনেছেন, ফেরারির কাঁটা আটকে ছিল ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারে। এনএইচএআই-এর আধিকারিকদের মতে, দুর্ঘটনার আগে গাড়ির গতিবেগ ছিল তার থেকেও বেশি।
বিধি ভাঙলে কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া মোটর ভেহিক্লস আইনের ১৮৩ নম্বর ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নজরদারির সেই পরিকাঠামো নেই বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, বিষয়টি দেখার কথা সংশ্লিষ্ট পুলিশের।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যা মেটাতে এ বার দুই টোল প্লাজ়ার মধ্যবর্তী অংশে অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন ক্যামেরা (এএনপিআর ক্যামেরা) বা ফিক্সড স্পিডগান ক্যামেরা লাগানো হবে। গতির নিয়মবিধি অমান্য করলেই তা চিহ্নিত করে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জানাবে ওই ক্যামেরা। সেখান থেকে নিকটবর্তী টোল প্লাজ়ায় থাকা পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে ওই গাড়ির নম্বর। রাজ্যের ১০টি টোল প্লাজ়ার মধ্যবর্তী অংশে ২-৩টি করে এই ধরনের ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে। পুলিশ শিবিরের একটি অংশ জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশের অধীনে থাকা জাতীয় এবং রাজ্য সড়কে ৪৯টি জায়গাকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পাকুড়িয়া সেতু সেই তালিকায় নেই।
ধসের জন্য কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে ২০১৫ সালের মে-তে পাকুড়িয়া সেতুর কলকাতামুখী রাস্তা চালু করা হয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, ওই সেতুর জয়েন্ট বা জোড়গুলি অসমান। তীব্র গতিতে যাওয়ার সময় ওখানে চাকা পড়লে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। যদিও সেতুর রাস্তায় ত্রুটি মানতে নারাজ এনএইচএআই-কর্তারা। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার আট মিনিটের মধ্যে ১২ কিলোমিটার দূরের ধুলাগড় টোল প্লাজ়া থেকে অ্যাম্বুল্যান্স সেখানে পৌঁছেছিল। সেতুর নীচে থাকা টোলের হাইওয়ে টহলদার গাড়িও গিয়েছিল। কিন্তু গ্যাস-কাটার না-থাকায় গাড়ি কেটে ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীদের বার করা যায়নি। তবে তাঁদের অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy