Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বছরে ৫০,০০০ কোটির বোঝা! চিন্তার কিছু নেই, বলছেন অমিত

রাজস্ব ঘাটতি, আর্থিক ঘাটতি এবং সার্বিক আর্থিক দায় নিয়ে রাজ্য যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, আর্থিক বছর শেষে তা অধরাই থেকে গিয়েছে।

রাজস্ব ঘাটতি, আর্থিক ঘাটতি এবং সার্বিক আর্থিক দায় নিয়ে রাজ্য যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, আর্থিক বছর শেষে তা অধরাই থেকে গিয়েছে।

রাজস্ব ঘাটতি, আর্থিক ঘাটতি এবং সার্বিক আর্থিক দায় নিয়ে রাজ্য যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, আর্থিক বছর শেষে তা অধরাই থেকে গিয়েছে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

আশঙ্কা ছিলই। ঋণের গেরো এবং খরচের বোঝার জেরে তা সত্যি হতে চলেছে। ঋণ, ঋণের সুদ এবং অন্যান্য দায় মিলিয়ে গত আর্থিক বছরে রাজ্যের ঘাড়ে ৫০ হাজার কোটির বোঝা চাপছে।

২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে রাজ্যের আয়-ব্যয়ের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। হিসেব নিরীক্ষণের পরে চূড়ান্ত হিসেব সিএজি রাজ্য বিধানসভায় পেশ করে থাকে। আপাতত প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব ঘাটতি, আর্থিক ঘাটতি এবং সার্বিক আর্থিক দায় নিয়ে রাজ্য যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, আর্থিক বছর শেষে তা অধরাই থেকে গিয়েছে।

যদিও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মতে, ‘‘এই বোঝা স্রেফ আয়-ব্যয়ের খাতার হিসেব মাত্র। আসল হল, বাজার থেকে নেওয়া ঋণ। যা নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’’ অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘‘পরিস্থিতি মোটেই উদ্বেগজনক নয়। রাজস্ব ঘাটতি বা আর্থিক ঘাটতি সীমার মধ্যেই বেঁধে রাখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় আর্থিক সূচকের চেয়ে সব দিক দিয়েই এগিয়ে রয়েছে রাজ্য।’’

সিএজি-র প্রকাশিত আয়-ব্যয়ের হিসেব বলছে, ২০১৭-১৮ সালে বাজেটে সরকার ঋণ এবং অন্যান্য আর্থিক দায় মিলিয়ে হিসেব কষেছিল ১৯ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৫০ কোটিতে। এই বোঝার সিংহভাগ বাজার থেকে নেওয়া ঋণ এবং তার সুদ বাবদ হয়েছে। ২০১৭-১৮-তে বাজার থেকে নেওয়া ধারের পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি। পাশাপাশি সরকারি কর্মীদের জিপিএফের দায়ও এর মধ্যেই ধরা রয়েছে।

সিএজি বলছে, বিশাল অঙ্কের এই আর্থিক দায় শুধু নয়, খরচে রাশ টানতে না পারায় বেড়েছে রাজস্ব ঘাটতি। ২০১৭-১৮ সালে বাজেটে মাত্র ৩ লাখ টাকা ঘাটতির দাবি করা হলেও বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯০৬ কোটিতে। ধারের এই সংসারে স্বাভাবিক কারণেই বেড়েছে ফিসক্যাল ডেফিসিট বা রাজকোষ ঘাটতি। যে ঘাটতি ১৯ হাজার কোটিতে ধরে রাখা যাবে বলে অর্থ দফতর ভেবেছিল, তা বছরশেষে ৩০ হাজার ২০৫ কোটি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএজি।

এই সময়ের মধ্যে রাজ্যের নিজস্ব আয় বেড়েছে অনেকটাই। তার পরেও কেন রাজকোষ ঘাটতির বহর বাড়ছে? অর্থ দফতরের একাংশের বক্তব্য, আর্থিক শৃঙ্খলার অন্যতম শর্তই হল, আয় বাড়ানো এবং খরচ কমানো। রাজ্যের আয় গত কয়েক বছরে টানা বাড়লেও খরচ কমানো যায়নি। তা লাফিয়ে বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু সুবিধা বিলির প্রকল্প নিয়েছেন। চলছে বেশ কয়েকটি পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পও। ফলে তার খরচ প্রতি বছরই বাড়ছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অনুদান ও কর বাবদ প্রায় ১৫ হাজার কোটি আসেনি। তা এলে রাজস্ব ঘাটতি অনেকটাই কমে যেত। রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি হাও়ড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাম জমানার দায় মাথায় নিয়েও সরকারটা যে চলছে, সেটা নিয়েই গবেষণা হওয়া উচিত। আমরা বলেই চালাচ্ছি।’’

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অবশ্য দাবি, ‘‘গত কয়েক বছরে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা অভাবনীয়। ২০১০-১১-তে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অনুপাতে আর্থিক ঘাটতি ছিল ৪.২৪%। ২০১৭-১৮ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২.৮১%। একই ভাবে ওই সময়ের রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৩.৭৫%। এখন তা ১.০৪%। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সাপেক্ষে মোট ঋণের পরিমাণ ২০১০-১১-তে ছিল ৪০.৬৫%। তা এখন কমে হয়েছে ৩৪.৪৭%। এ থেকেই তো বোঝা যাচ্ছে, বাম জমানার চেয়ে অনেক এগিয়েছে রাজ্য।’’

সিএজি-র হিসেব অনুযায়ী, গত কয়েক বছর ধরেই বাজেট প্রস্তাবের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্য। কেন? অমিতবাবুর মতে, ‘‘বাজেট তো শুধু মাত্র প্রস্তাব। বাস্তবে তা পূরণের দিকে এগোতে চেষ্টা করা হয়। যে ভাবে এগোচ্ছি, তা আশাপ্রদ।’’

অর্থমন্ত্রীর আশার মধ্যেই নিজেদের ভবিষ্যতের আলো দেখছেন সরকারি কর্মচারীরা। চলতি আর্থিক বছরেই বেতন কমি‌শন চালু হতে পারে বলে খবর নবান্নের। প্রশ্ন হল, ৫০ হাজার কোটির বোঝা নিয়ে সেই আশা পূরণ হবে কী করে? অর্থমন্ত্রী এই প্রশ্নের জবাব দেননি। অর্থ দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানান, দিল্লির কাছে বাড়তি টাকা চাওয়া হবে। না হলে বাজারের ঋণই ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE