উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে দশম মাফুজা খান ও কমল সাউ। —নিজস্ব চিত্র
দু’জনের ঘরেই অভাব। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এক জন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। অন্য জনের লক্ষ্য নামী চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া।
এ বারের উচ্চমাধ্যমিকের ফল দুই কৃতী পড়ুয়ার স্বপ্নকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল। দু’জনেই ৯৭.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন। প্রথম স্থানাধিকারীর থেকে মাত্র ১২ নম্বর কম!
প্রথম জন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা মাফুজা খান। বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে চলে আসেন কলকাতায়, শ্রীমতী জহরনন্দী বিদ্যাপীঠে। শহরেরই এক হস্টেলে থেকে চলছিল তার লড়াই।
দ্বিতীয় জন কলকাতারই বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা কমল সাউ। জ্ঞান ভারতী বিদ্যাপিঠের ছাত্র। অভাব-অনটনের মধ্যেতিনিও চমকে দিয়েছেন পরিবারকে।
মাফুজার বাবা স্বর্ণশিল্পী।গ্রামেরই একটি সোনার দোকানে কাজ করেন। পরিবারের আয় খুব একটা ভাল নয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। শান্ত স্বভাবের এই মেয়েটি মাধ্যমিকেও চমকে দেওয়া ফল করেছিল। তার পরেও পড়াশোনার ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল ছিল না। শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা হবে কিনা, তা নিয়েও চিন্তায় ছিলেন মাফুজার পরিবার।কিন্তু মাফুজার পড়াশোনা নিয়ে জেদের কারণে, শেষ পর্যন্ত একটি সংগঠনের তরফে মাসিক বৃত্তিজুটে যায়। মাফুজা ভর্তি হন বালিগঞ্জের শ্রীমতী জহর নন্দী বিদ্যাপীঠে। মাফুজা হতাশ করেননি শিক্ষকদের।
এখন তাঁর লড়াই ডাক্তার হওয়ার জন্য। তার পর গ্রামে গিয়ে গরিবগুর্বো মানুষগুলোর চিকিৎসা করতে চান মাফুজা। কারণ, তিনি জানেন দারিদ্রতার সঙ্গে ল়ড়াই করে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন! জঙ্গিপুরের গ্রামে বসে তিনিটিভিতে শুনেছেন তাঁর সাফল্যের খবর। মাফুজার কথায়: “আমার লক্ষ্য এখন ডাক্তার হওয়া। কী হয়ে দেখা যাক।”
আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বীরভূমের শোভন, কোচবিহারের রাজর্ষি
আরও পডু়ন: ইস্তফার সিদ্ধান্তে অনড় রাহুল, মানলেন সনিয়া-প্রিয়ঙ্কাও, নতুন নেতা সন্ধানের নির্দেশ
মাফুজার মতোই জ্ঞান ভারতী বিদ্যাপীঠ (বয়েজ)-এর ছাত্র কমল সাউয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভাল নয়। বাবা একটি চাল-ডালের মিলে কাজ করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর কাজে যেতে পারেন না। বাড়ির একটি ঘর ভাড়া দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলছে।এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়াশোনা চালানো অত্যন্ত কঠিন ছিল কমলের কাছে। কিন্তু হার মানেননি তিনি। তাঁর ঝুলিতেও রয়েছে ৪৮৬ নম্বর। প্রথম থেকেই চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তাই মাধ্যমিক পাশ করে জ্ঞান ভারতী বিদ্যাপীঠ (বয়েজ)-এ বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। সবাইকে অবাককরে বাণিজ্য বিভাগ থেকেই মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন কমল। এই সাফল্যে কমলের জেদ আরও দৃঢ় হয়েছে। এ দিন ফল প্রকাশের পর তিনি বলেন,‘‘ভাল কলেজে ভর্তি হওয়াটাইএখন আমার লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy