প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকায় নিজের গাড়িতে মমতাকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতেও গিয়েছিলেন মোদী। কেন্দ্র-রাজ্য সৌজন্যের সেই আবহ বজায় রইল বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের চিন সফরেও। যখন তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে আজ গভীর রাতে চিনে গেলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র।
গন্তব্য— চিনের ইউনিয়ন প্রভিন্সের রাজধানী কুনমিং-এ আয়োজিত দশম চিনা-দক্ষিণ এশীয় বিজনেস ফোরাম। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, লগ্নির সন্ধানেই ভিকে-র সঙ্গে অমিতবাবুর এই সহ-যাত্রা। ক্ষমতায় এসেই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন মোদী। অনেকের
মতে, নতুন সরকারের একাধিক সংস্কারমুখী প্রয়াসের ফলে ভারতের মাটিতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চিনে এ বারের সম্মেলনে ‘ফোকাস দেশ’-এর মর্যাদা পেয়েছে ভারত।
আর মোদী সরকারের ‘পুবে তাকাও’ নীতির কথা মাথায় রেখে ‘ফোকাস রাজ্য’ হিসেবে বাড়তি গুরত্ব দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রের হাতে হাত মিলিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ টানার এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছেন অমিতবাবু। তবে রাজ্য সরকারের তরফেই বলা হচ্ছে, চিনা সম্মেলন থেকে তারা মূলত পর্যটন শিল্পে ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে ভারী শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যের দৈন্যদশা এই সফরেও কাটবে কি না, সে বিষয়ে কিন্তু সন্দিহান অনেকেই।
রাজ্য সরকারের যদিও যুক্তি, কুনমিং থেকে মাত্র দু’ঘণ্টার দূরত্বেই রয়েছে (উত্তর ও উত্তর-পূর্ব) ভারতের বিরাট বাজার। এবং এ ক্ষেত্রে কলকাতার গুরুত্ব অপরিসীম। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই কুনমিং-এর গভর্নর কলকাতায় এসে মমতাকে ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে গিয়েছিলেন বলে সরকারের দাবি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শিল্পমন্ত্রীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। চলতি সফরে বিনিয়োগ টানতে ইউনিয়ন প্রভিন্সের গভর্নর এইচ ই চেন হাও-এর সঙ্গে একটি বৈঠক ছাড়াও রাজ্যের সম্ভাবনা তুলে ধরতে অন্তত দশটি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে বক্তব্য রাখার কথা অমিতবাবুর। প্রতিনিধি দলে রাজ্যের তরফে শিল্পমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প দফতরের সচিব রাজেশ সিংহ। সরকারের ব্যাখ্যা, মূলত রাজ্যের চারটি ক্ষেত্রকে দশ দেশের বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল— পর্যটন, শিল্প পরিকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প।
এখানেই অনেকের প্রশ্ন, ভারী শিল্পকে আদৌ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য? তাঁদের বক্তব্য, মমতা সরকারের গত চার বছরে ঘটা করে শিল্প সম্মেলন বা বিদেশ সফরেও যে বাস্তবের মাটিতে বিনিয়োগ আসেনি, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। বিরোধীদের যুক্তি, স্বচ্ছ জমি নীতির অভাব, আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা, বেহাল সড়ক, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে রাজ্যের শিল্প চিত্র খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। হতাশ বণিকসভাগুলিও। শিল্পমন্ত্রী যদিও গত কাল বিধানসভায় দাবি করেছেন, গত চার বছরে ৮৪ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার লগ্নি হয়েছে বা হতে চলেছে। যদিও সে হিসেব নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে বিরোধীদের। ‘সৌহার্দ্যে’র চিন সফর সেই অসন্তোষ কাটায় কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy