Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

লোকসভা ভোটে সাম্প্রদায়িক বিভাজনই কৌশল, বোঝালেন অমিত শাহ

ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ আরও নির্মম ভাষায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে তাঁদের দেশছাড়া করার হুমকি দেন।

হুঙ্কার: মালদহের নিত্যানন্দপুরে অমিত শাহ। ছবি: তথাগত সেনশর্মা

হুঙ্কার: মালদহের নিত্যানন্দপুরে অমিত শাহ। ছবি: তথাগত সেনশর্মা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৩
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বিভাজনই হবে তাঁদের তুরুপের তাস। মালদহের সমাবেশে মঙ্গলবার কার্যত এই বার্তাই খোলাখুলি দিয়ে গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আগামী লোকসভা নির্বাচনে চর্চার বিষয় হবে বলে দাবি করে তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে। এই সূত্রেই বিজেপির চিরাচরিত নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করে শাহ বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ফলে হিন্দু বাংলাদেশিরা ভারতে এসে নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এক বার পদ্মফুল ফোটালে এক জন অনুপ্রবেশকারীও (অর্থাৎ মুসলিম) ঢুকতে পারবে না।’’ ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ আরও নির্মম ভাষায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে তাঁদের দেশছাড়া করার হুমকি দেন।

শাহর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ওরা দাঙ্গাবাজ। মানুষের ক্ষতি করাই ওদের কাজ। তাই ওদের রথযাত্রার পরিকল্পনাও আদালতে আটকে যায়।’’ তৃণমূলের মহাসচিব ও মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। দেশবাসী তা হতে দেবে না। দেশের মানুষ সম্প্রীতির আবহে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চান।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ভোট এলেই বিজেপি ধর্মের তাস খেলে। অসমে আগুন জ্বালিয়েছে। কিন্তু বাংলায় সেই চেষ্টা মানুষ রুখে দেবে।’’ কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানও বলেন, ‘‘হারের আতঙ্কে শাহরা এখন মরিয়া হয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছেন। দেশের মানুষ ওঁদের ছুড়ে ফেলে দেবে।’’

অসমে খসড়া নাগরিক পঞ্জি প্রকাশের পর থেকেই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ছবি স্পষ্ট হয়েছে। এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই সরব। কিন্তু বিভাজনই যে তাঁদের নির্বাচনী রাজনীতি, তা বুঝিয়ে শাহ এ দিন বলেন, ‘‘আমি মমতাজিকে জিজ্ঞাসা করছি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, আপনারা সমর্থন করেন কি? আমরা ধারণা, ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে উনি সমর্থন করবেন না। কিন্তু ওই বিলে যাঁদের সুবিধা হবে, তাঁরা কি ভোটব্যাঙ্ক নন?’’

আরও পড়ুন: অমেঠী দিয়ে আজ লোকসভার ভোট সফর শুরু রাহুলের

আরও পড়ুন: ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে রেসলার না হয়ে বাইচান্স পলিটিশিয়ান হয়েছেন, মোদীকে কটাক্ষ ববির

গত তিন বছরে এ রাজ্যে শাহ যত বক্তৃতা করেছেন, তাঁর এ দিনের ভাষণ ছিল কার্যত সেগুলিরই পুনরাবৃত্তি। এ দিনও তিনি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ, দুর্নীতি এবং অনুন্নয়ন— মূলত এই তিনটি অভিযোগেই তৃণমূলকে বিঁধেছেন। শাহের দাবি, ইউপিএ জমানার শেষ পাঁচ বছরে কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা। আর নরেন্দ্র মোদীর সরকার গত পাঁচ বছরে বাংলাকে দিয়েছে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও রাজ্যের অর্থাভাবের কারণ সম্পর্কে শাহের মন্তব্য, ‘‘অর্ধেক টাকা দিদির লোকেরা খেয়ে যাচ্ছে। আর বাকি অর্ধেক টাকা খাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা।’’ প্রসঙ্গত, তিনি আঙুল তোলেন ‘সিন্ডিকেট-রাজ’-এর দিকেও। ফিরহাদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিন্ডিকেট চলে গুজরাতে। সেখানে অমিত শাহের দল জোর করে টাকা নেয়।’’ রাজ্যে গণতন্ত্র ‘না থাকা’র দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মমতাদিদি বিজেপির যাত্রা আটকেছেন। কারণ উনি ভয় পেয়েছেন। এই সভায় আসার জন্য আমার হেলিকপ্টার নামার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। কিন্তু বাংলায় যে ভাবে পদ্ম ফুটছে, আপনি ঠেকাতে পারবেন না। এ বার আপনাদের সরকার হঠাবই।’’ এ দিনও তাঁর দাবি, এ রাজ্যে বিজেপি অন্তত ২৩টি লোকসভা আসন জিতবে। শাহের হুমকি, ‘‘তৃণমূল সরকারের সদর দফতর থেকে ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার উপড়ে ফেলে দেওয়া হবে। ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE