রাজ্য বিজেপি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে অমিত শাহের বিশদ সফরসূচি প্রকাশ করেনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুলিশের তরফ থেকে ছিল আপত্তি। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তরফ থেকে ছিল কটাক্ষ। কোনওটাকেই সম্ভবত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিল না বিজেপি। ফলে আরও সীমাবদ্ধ হওয়ার পথে অমিত শাহের পুরুলিয়া সফর। জগন্নাথ-ত্রিলোচন-দুলালদের বাড়ি যাওয়া দূরের কথা, বলরামপুরেও যাচ্ছেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। জানা যাচ্ছে রাজ্য বিজেপি সূত্রেই।
অমিত শাহ বাংলা সফরে আসছেন আগামী বুধবার। সে দিন তাঁর কর্মসূচি কলকাতায়। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৮ জুন অমিত শাহ পুরুলিয়া যাচ্ছেন। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ভোটের আগে-পরে যে তিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে পুরুলিয়া জেলায়, অমিত শাহ তাঁদের বাড়ি যাবেন, পরিজনদের সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু জেলা পুলিশের আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা বদলাতে শুরু করে। যত এগিয়ে আসছে সফর, ততই যেন পুরুলিয়ায় আরও সীমাবদ্ধ হওয়ার পথে অমিত শাহের কর্মসূচি।
ভোটের আগে জগন্নাথ টুডু, ভোটের পরে ত্রিলোচন মাহাতো, দুলাল কুমার— তিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের মৃত কর্মীদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছেন। বিজেপি পুরুলিয়ায় টানা বিক্ষোভ করেছে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার ত্রিলোচন ও দুলালের বাড়ি যান। দু’টি পরিবারের হাতে তিনি দলের তরফে অর্থসাহায্যের চেক তুলে দেন। ২৬ জুন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও মৃত কর্মীদের বাড়িতে যাচ্ছেন বলে বিজেপির রাঢ়বঙ্গ জোনের আহ্বায়ক নির্মল কর্মকার জানিয়েছেন। কিন্তু ২৮ তারিখ অমিত শাহ যে আর ওই কর্মীদের বাড়িতে যাচ্ছেন না, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। অমিত শাহ বলরামপুরেও যাবেন না, তার বদলে পুরুলিয়া সদরে জনসভা করবেন— এ-ও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- বিজেপির আইটি সেল এখন ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য, বলছেন প্রতিষ্ঠাতাই
আরও পড়ুন- ‘কিষেণজিকে তৃণমূল এনকাউন্টার করেনি?’
পুরুলিয়ার শিমুলিয়া ময়দানে অমিত শাহ ২৮ জুন সভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। বলরামপুরের বদলে পুরুলিয়ায় সভা কেন? বিজেপি নেত্রী তথা রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অমিত শাহের সভায় অনেক লোকজন আসবেন। বলরামপুরে যে মাঠে আমরা সভা করেছিলাম, ওখানে অত লোক ধরবে না। পুরুলিয়ায় যে মাঠে সভার আয়োজন হচ্ছে, সেটা অনেক বড়। তা ছাড়া বলরামপুর হল জেলার একটা প্রান্তে। গোটা জেলা থেকে সেখানে লোক নিয়ে যাওয়া একটু কঠিন। পুরুলিয়া সদরে সভা হলে জেলার সব প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা সহজে পৌঁছতে পারবেন। সেই কারণেই পুরুলিয়ায় সভা হচ্ছে।’’
রাজনৈতিক শিবিরের চর্চা কিন্তু বলছে, মাঠের আকার বা যোগাযোগ ব্যবস্থা বড় কথা নয়। আসলে পুলিশি আপত্তির কাছেই নতিস্বীকার করল রাজ্য বিজেপি। ত্রিলোচন মাহাতোর গ্রামে যাওয়ার রাস্তা কাঁচা এবং সঙ্কীর্ণ, বর্ষা নামলে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হবে, তাই মৃত কর্মীদের বাড়ি না গিয়ে তাঁদের পরিজনদের নিজের সভাস্থলে ডেকে নিন অমিত শাহ— পুলিশের পরামর্শ ছিল এমনই। সেই পরামর্শ শেষ পর্যন্ত বিজেপি মেনে নিল বলে মনে করছেন অনেকেই।
দলীয় কর্মীদের উপর তৃণমূল হামলা করছে এবং পুলিশ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকছে বলে বিজেপি বার বার অভিযোগ করছে ইদানীং। সেই পুলিশই যখন অমিত শাহের নিরাপত্তা নিয়ে ওজর-আপত্তি তুলল, তখন বিজেপি কেন সে কথা প্রায় বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিল, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন তা নিয়ে। পুলিশি আপত্তি উড়িয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ভঙ্গিতে ত্রিলোচনের গ্রামে যাওয়া উচিত ছিল অমিতের, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
চ্যালেঞ্জ কিন্তু শুধু পুলিশি আপত্তিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের খোঁচাও বিজেপির পক্ষে অস্বস্তিকর ছিল। পুলিশি আপত্তির কথা দিল্লিকে জানিয়ে দিলীপ ঘোষ যখন অমিত শাহের সফরসূচি বদলানোর সুপারিশ করেছিলেন, তখন পার্থ বলেছিলেন, ‘‘ওই কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। ওরা তো অনেক নাটক করেছে। এখন তা হলে যাচ্ছে না কেন? আসলে কর্মীদের বাড়িতে গেলেই যে সত্য উদ্ঘাটিত হয়ে যাবে!’’
পার্থর এই কটাক্ষের জবাব বিজেপি অমিত শাহের সফরসূচির মাধ্যমেই দেবে, ধরে নিয়েছিল রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু তা হওয়ার সম্ভাবনা কমই। ত্রিলোচন-দুলালদের বাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা, অমিত শাহ বলরামপুরেও যাচ্ছেন না। সভা করতে চলেছেন পুরুলিয়া সদরে। সেখানেই দেখা করতে চলেছেন দলের মৃত কর্মীদের পরিজনদের সঙ্গে।
রাজ্য বিজেপি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে অমিত শাহের বিশদ সফরসূচি প্রকাশ করেনি। তবে পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা নেতারা জানাচ্ছেন, জনসভা ছাড়াও একটি বুথ মিটিং অমিত শাহ বৃহস্পতিবার করবেন। পুরুলিয়া শহরের সীমানা ছাড়িয়ে লাটগাঁ নামের একটি গ্রামে তিনি ওই বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাতেও অমিত শাহের পুরুলিয়া সফর জেলা সদর এবং সংলগ্ন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
পুলিশি আপত্তি মেনে নিয়ে অমিত শাহের সফরসূচি নির্ধারিত হচ্ছে, এমন কথা অবশ্য বিজেপি নেতারা মানতে নারাজ। নির্মল কর্মকারের কথায়, ‘‘কবে পুলিশ কী বলেছে আমি জানি না। অমিত শাহ কোথায় যাবেন, সে সিদ্ধান্ত দল স্বাধীন ভাবেই নিয়েছে। কারও চাপে নয়।’ আর রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘‘যে মাঠে অমিত শাহের সভা হবে, সেটি পুরুলিয়া মফস্বল থানার মধ্যে পড়ে, সে কথা ঠিক। মাঠটি পুরুলিয়া শহর লাগোয়া, সে কথাও ঠিক। কিন্তু, বিধানসভা কেন্দ্র বলরামপুর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy