Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
মোদীর সুরে সেনাপতি...

বঙ্গপ্রেমী অমিত, কটাক্ষ তৃণমূলের

মেয়ো রোডে শনিবার দলের ‘যুব সমাবেশ’-এ অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-কাণ্ড প্রসঙ্গেই বক্তৃতার বড় অংশ ব্যয় করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বারবার বোঝালেন, ‘‘আমরা বাংলা বিরোধী নই। কিন্তু মমতা বিরোধী। মমতার সরকারকে উপড়ে ফেলে দেব। আমাদের বাংলার প্রতি প্রেম ভোটের স্বার্থে নয়।’’

সরব: দলের যুব সমাবেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শনিবার মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সরব: দলের যুব সমাবেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শনিবার মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১০
Share: Save:

যা ভাবা গিয়েছিল, তা-ই হল। মেয়ো রোডে শনিবার দলের ‘যুব সমাবেশ’-এ অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-কাণ্ড প্রসঙ্গেই বক্তৃতার বড় অংশ ব্যয় করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বারবার বোঝালেন, ‘‘আমরা বাংলা বিরোধী নই। কিন্তু মমতা বিরোধী। মমতার সরকারকে উপড়ে ফেলে দেব। আমাদের বাংলার প্রতি প্রেম ভোটের স্বার্থে নয়।’’ শাহের ব্যাখ্যা থেকেই স্পষ্ট, এনআরসি-কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে বিজেপি বেশ ‘চাপে’ পড়েছে।

তৃণমূলও শাহের বক্তব্য নস্যাৎ করে বলেছে, পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝেই বঙ্গপ্রেম দেখাতে মরিয়া হয়েছেন বিজেপি সভাপতি। তাদের দাবি, এ রাজ্যে ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতির কোনও স্থান নেই। বামেরাও মনে করে, বিজেপি বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িক রং লাগাতে চায়।

অসমে এনআরসি থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার পর পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেই এনআরসি তৈরির দাবি তুলেছে বিজেপি-সহ গোটা সঙ্ঘ পরিবার। অসমে এনআরসি প্রকাশের দিনই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুমকি দিয়েছেন, এ রাজ্যে তাঁরা ক্ষমতায় এলে সব বাংলাদেশিকেই গলাধাক্কা দেবেন। যাঁরা তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন, তাঁদেরও গলাধাক্কা দেওয়া হবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে কয়েক দশক আগে এ রাজ্যে আসা বাঙালিদের অনেকেও এখন আতঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-কে ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী’ বলে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল এবং বামফ্রন্ট। রাজ্য বিজেপির একাংশের শঙ্কা, লোকসভা ভোটে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই এ দিনের বক্তৃতায় এনআরসি নিয়ে রাজ্যের মানুষকে ‘আশ্বস্ত’ করার জন্য শাহকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।

তাঁদের অনুরোধ রেখে শাহ এ দিন এক দিকে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদের নাম নিয়ে বাংলা-প্রীতি প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। অন্য দিকে এনআরসি নিয়ে বিজেপির ঘোষিত অবস্থান ফের ব্যাখ্যা করে শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে বিভাজন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা (অর্থাৎ অ-মুসলিম) বিতাড়িত হয়ে এলে ভারতে জায়গা পাবেন। তাঁরা শরণার্থী।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শাহের প্রশ্ন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আপনি সমর্থন করবেন কি না বলুন।’’ একই প্রশ্ন তিনি করেন রাহুল গাঁধীর উদ্দেশেও।

আরও পড়ুন: ভাইপোর দিকেও সিন্ডিকেট তির, পাল্টা হুমকি মামলার

শাহের অভিযোগ, মমতা অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিজেপির কাছে ভোটব্যাঙ্কের চেয়ে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থ বড় বলে তাঁর দাবি। শ্রোতাদের শাহ জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনারা এনআরসি চান কি না?’’ সমস্বরে জবাব আসে, ‘‘চাই।’’ তিনি জানতে চান, ‘‘দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা বিপজ্জনক কি না? তাদের বার করে দেওয়া উচিত কি না?’’ এ ক্ষেত্রেও জবাব আসে, ‘‘হ্যাঁ।’’ শাহ এর পরে বলেন, ‘‘তা হলে প্রশ্ন থাকছে, অনুপ্রবেশকারীদের মানবাধিকারের কী হবে? তৃণমূল এবং কংগ্রেসকে জিজ্ঞাসা করছি, দেশের হিন্দু এবং মুসলমানদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে আপনাদের চিন্তা নেই? তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, সুরক্ষা নিয়ে আপনাদের চিন্তা নেই?’’ মমতা যে ২০০৫ সালে লোকসভায় অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে সরব হতে চেয়েছিলেন, তা মনে করিয়ে শাহের চ্যালেঞ্জ, ‘‘মমতাজি আপনি যতই লড়ুন, এনআরসি আপনাকে সমর্থন করতেই হবে।’’

তৃণমূল অবশ্য এই চ্যালেঞ্জ গ্রাহ্যই করছে না। দলের জাতীয় মুখপাত্র বলেন, ‘‘এটা ভারতের নাগরিকদের রক্ষা করার প্রশ্ন। এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলবে না।’’ পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি এখন বাংলা প্রেম প্রমাণে মরিয়া। কিন্তু এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্ক। বিজেপির কোনও ভোটই নেই। ওদের ভোটব্যাঙ্ক তো নীরব-মেহুলরা।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অমিত শাহেরা নাগরিকত্ব এবং অনুপ্রবেশকে ধর্মের ভিত্তিতে দেখার চেষ্টা করছেন। আসলে ওঁরা মানবতারও বিরোধী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE