Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘মায়ের কথা কি অমান্য করা যায়?’, এ বার রাজভোগ-বার্তা কেষ্টর

‘‘বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে গেলে দেখবেন, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, উন্নয়নের গুঁতোয় তাঁরা কার্যত মনোনয়নই দিতে পারেননি। বিরোধী-শূন্য জেলা পরিষদ গড়ে রেকর্ড গড়েছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট।

নমো-নমো: বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ের কালীপুজোয় অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নমো-নমো: বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ের কালীপুজোয় অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
  বোলপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

বছরে এই একটা পুজোতেই তিনি নির্জলা উপোস করেন। সারা দিন-রাত কেটে যায় প্রস্তুতি ও আরাধনায়। কিন্তু, তাঁর নাম যখন অনুব্রত মণ্ডল, তিনি এমন দিনেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন কী করে! অতএব, কালীপুজোয় মায়ের কাছে তাঁর প্রার্থনা, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ!

লোকসভা ভোটে এ রাজ্যের ৪২টি আসনই যেন তৃণমূলের হাতে আসে, কালীর কাছে এটাই কামনা বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতির। একই সঙ্গে ‘গুড়-বাতাসা’ ছেড়ে এ বার বিরোধীদের জন্য তিনি ‘রাজভোগ’ দাওয়াইয়ের নিদান দিয়েছেন। মঙ্গলবার বোলপুরে তৃণমূলের নবনির্মিত জেলা অফিসে কালী-প্রতিমায় সোনার সাজ পরানোর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মা-ই তো বলেছেন, পাঁচন দিয়ে উর্বর জমি করতে। রাজভোগ খাওয়াতে। মায়ের কথা কি অমান্য করা যায়!’’ গোটা রাজ্যের মতো বীরভূমেও এখন তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি। অনুব্রতের বক্তব্য, ‘‘আমি মায়ের কাছে বলব, রাজ্যকে ভাল রাখো। হানাহানি বন্ধ করো আর অচ্ছে দিনওয়ালাকে শেষ করো!’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে জেলা অফিসে পুজো হয়ে আসছে। নিয়মকানুন অবশ্য জেলা সভাপতির বাড়ির মতোই। এ দিন নিজে হাতেই প্রতিমাকে সোনার মুকুট, হাতের বালা, বাউটি, চূড়, বাজুবন্ধ, নেকলেস পরিয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ১৮০ ভরি সোনার গয়না পরানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: টেস্টেই ডাহা ফেল, শব্দদানব দাপাল রাজ্যু জুড়ে, আজ ফাইনালে কী হবে?

আরও স্বর্ণালঙ্কার যে মা কালী পেতে পারেন, সেই সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন জেলা সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের যা গয়না, সব পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মা যদি চান, আবার হবে। মন্ত্রীরা যা দেবে, তাই হবে। আবার যদি জেলায় মন্ত্রী পাই, আবার ১০ ভরি গয়না হবে মায়ের। দিদিকে (তৃণমূল নেত্রী) বলব ছোটখাটো হলেও যেন একটা মন্ত্রী করে দেয়!’’

তাঁর ‘গুড়-বাতাসা’ মন্তব্য বিধানসভা ভোটের বাজার কাঁপিয়েছিল। বস্তুত, যে কোনও নির্বাচনের আগেই নতুন নতুন শব্দবন্ধ ছড়িয়ে দিতে অভ্যস্ত অনুব্রত। ‘গুড় বাতাসা’, ‘চড়াম চড়াম’, ‘দড়াম দড়াম’— এক একটা ভোটের আগে এক এক রকম বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। এ বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে বলে দিয়েছিলেন, ‘‘বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে গেলে দেখবেন, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, উন্নয়নের গুঁতোয় তাঁরা কার্যত মনোনয়নই দিতে পারেননি। বিরোধী-শূন্য জেলা পরিষদ গড়ে রেকর্ড গড়েছেন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট।

এ বার বললেন ‘রাজভোগ’।

বীরভূম জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কেষ্টর মতোই কোনও অত্যাচারীর মুণ্ড মা কালীর গলায় আছে। তাই প্রতিমাকে সোনার গয়না পরিয়ে কোনও লাভ নেই। ওঁর মতো এক জনের মুখেই এগুলো শোভা পায়। জেলার কর্তা হয়ে কি নিজেকে রাজা ভাবছেন, যে রাজভোগ খাওয়ানোর কথা বলেছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘এই সব কথার কোনও জবাব হয় না। আমরা আমলও দেব না। মানুষ সব দেখেছেন, উত্তর তাঁরাই দিয়ে দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE