Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি পাক যোগ্যেরা, চিঠিতে সওয়াল অনুব্রতের

প্রশ্ন উঠেছে, অনুব্রতকে চিঠি লিখতে হল কেন? 

সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

‘কাটমানির’ অভিযোগ ঘিরে অন্য জেলার মতো তপ্ত এই জেলাও। বেশির ভাগ অভিযোগই উঠেছে সরকারি আবাস যোজনাকে ঘিরে। এ বার সেই প্রকল্প নিয়েই জেলাশাসককে চিঠি দিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

রবিবার বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে অনুব্রত জানান, দলের তরফ থেকে জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, বীরভূম জেলায় বাংলা আবাস যোজনার নতুন বাড়ির যে তালিকা এসেছে, তাতে বিগত দিনে বাড়ি পেয়েছে, এমন পরিবারের নামও নথিভুক্ত রয়েছে। চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে, আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ও নিজস্ব পাকা বাড়ি আছে, এমন লোকের নাম নথিভুক্ত হলে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হোক।

প্রশ্ন উঠেছে, অনুব্রতকে চিঠি লিখতে হল কেন?

ঘটনা হল, এই আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। অনুব্রত নিজেও লোকসভা ভোটের আগে প্রতিটি ব্লকে সভা করে বারবার দলের নেতা-কর্মী ও জন প্রতিনিধিদের এই প্রকল্পে ‘টাকা’ না নেওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তার পরেও কাটমানি-বিক্ষোভ এড়ানো যায়নি। বহু ক্ষেত্রে হেনস্থা হতে হয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। বিরোধীদের দাবি, চিঠি দিয়ে অনুব্রত এখন নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিগত দিনগুলিতে যারা দুটো করে বাড়ি পেয়েছে, তাদের বাড়ি কী ভাবে ফেরানো যাবে, এখন তিনি সে চিন্তা করুন। অনুব্রত মণ্ডল অনেক আগে বলেছিলেন, কেউ বাড়ির টাকা নিলে আমাকে জানান। তার পরেও আবাস যোজনা নিয়ে এত দুর্নীতি কেন হয়েছে?’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার কটাক্ষ, ‘‘এখন আর এ-সব বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না। তৃণমূলের জন্ম দুর্নীতি থেকে। শেষ হবে দুর্নীতি দিয়েই। মানুষকে আর এই সব দেখিয়ে ভুল বোঝানো যাবে না।’’

অনুব্রত নিজে বলছেন, ‘‘আমাদের জেলায় সাত-আট হাজার মতো নতুন করে বাড়ির অনুমোদন হয়েছে। কার কী ভুল, বলতে পারব না। এক একটা পঞ্চায়েতে দোতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবার তাদের নামে বাড়ি এসেছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দুর্নীতি হলে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা দেখবেন। প্রধানদেরও বলে দিয়েছি। তাঁরাও নজরে রাখবেন।’’ তাঁর দাবি, কোথাও স্বচ্ছল ব্যক্তি ঘর পেলে তা প্রশাসনকে জানানো হবে। প্রশাসন আইনের মাধ্যমে সেগুলো বাতিল করবে।

চিঠি-প্রাপ্তির কথা মেনেছেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি জানান, ২০১১ সালের আর্থ সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষা অনুয়ায়ী যে-সব পরিবারের পাকা বাড়ি নেই, সেই তালিকা ধরেই প্রতি বছর বাড়ির অনুমোদন আসে। এই অর্থবর্ষেও এসেছে। তালিকায় নাম থাকলেও, তিনি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য কিনা, সেটা খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। কারণ একটি পরিবার অন্য কোনও প্রকল্পে বাড়ি পেয়ে থাকতে পারে। এমনও নাম থাকতে পারে, যাঁর ইতিমধ্যেই পাকা বাড়ি রয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এমন কেউ যাতে বাড়ি না পান, অনুব্রতবাবু সেটা দেখার জন্য বলেছেন। আমরাও প্রশাসনের তরফে সেটা দেখছি।’’ অযোগ্য কেউ বাড়ি পাচ্ছেন কিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও সেটা দেখবেন বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Anubrata Mondal Letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE