Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দলীয় নেতাকে ‘অ্যারেস্ট’ করানোর নির্দেশ দিয়ে ফের বিতর্কে অনুব্রত

এ বার আরও একটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো ফুটেজে দলেরই নেতাকে গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দিতে দেখা গেল বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে!

বোলপুরে জেলা তৃণমূলের সেই বৈঠকে অনুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

বোলপুরে জেলা তৃণমূলের সেই বৈঠকে অনুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো ফুটেজে এক মহিলাকে ‘গাঁজা কেসে অ্যারেস্ট’ করিয়ে দেওয়ার কথা বলতে দেখা গিয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। চলতি সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনায় বিতর্ক কম হয়নি। এ বার আরও একটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো ফুটেজে দলেরই নেতাকে গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দিতে দেখা গেল বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে!

যে নেতার বিরুদ্ধে অনুব্রতের হুঙ্কার, সেই উজ্জ্বল হক কাদেরি কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছিলেন খয়রাশোল ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি আনন্দবাজারের পক্ষে। কিন্তু, রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে তৃণমূলের জেলা কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকেই ওই ক্লিপিং ছড়িয়েছে বলে তৃণমূলকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীকে অনুব্রত বলছেন, ‘উজ্জ্বল হক কাদেরিকে অ্যারেস্ট করাতে বলো। ওখানকার বোম মারার নায়ক উজ্জ্বল কাদেরি!’

বীরভূমে যে ব্লকগুলি শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ, তার অন্যতম এই খয়রাশোল। সম্প্রতি আততায়ীদের গুলিতে খুন হন খয়রাশোলে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। তাঁর আগে আরও দুই ব্লক সভাপতি খুন হয়েছেন খয়রাশোলে। দীপক-খুনের জন্য অনুব্রত বিজেপিকে দায়ী করলেও, পরিবার ও নিহত নেতার অনুগামীদের বক্তব্য ছিল, হাত রয়েছে দলেরই দীপক-বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর। খয়রাশোলে দীপকের সবচেয়ে বড় বিরোধী উজ্জ্বলই। নিহত নেতার স্ত্রী পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেন, সেখানে উজ্জ্বলের নাম না থাকলেও তাঁর দুই ভাইয়ের নাম ছিল। খুনের পরে পরে এলাকাছাড়া হয়ে গেলেও এফআইআরে নাম নেই জেনে কিছুদিন আগে ফেরেন উজ্জ্বল।

শনিবার খয়রাশোলের কৈথি গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি হয়। ওই দুই গোষ্ঠীর নেতার এক জন দীপক ঘোষ, অন্য জন উজ্জ্বল হক কাদেরির অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকর্মীরা হেনস্থার শিকার হন বলে অভিযোগ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে। তাতে অভিযুক্তের তালিকায় নাম রয়েছে কাদেরির। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, গোষ্ঠীকোন্দলে কাদেরি ইন্ধন জোগাচ্ছেন। এ বার তাঁকেই গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দিলেন অনুব্রত। এ প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেছেন, ‘‘ওখানে যারা গোলমাল করবে, পুলিশ তাদেরই ধরবে।’’ জেলা সভাধিপতির বক্তব্য, ‘‘যে দিন ব্লক সভাপতি মারা গিয়েছেন, সে দিনই তো কমিটি ভেঙে গিয়েছে। দল মনে করেছে, ওখানে অশান্তি ছড়ানোর পিছনে উজ্জ্বলের হাত রয়েছে। তাই।’’

আরও পড়ুন: যোগীর ছোঁয়াচ এ রাজ্যের স্কুলে, ইসলামপুর নাম বদলে হল ‘ঈশ্বরপুর’!

বিরোধীদের প্রশ্ন, বীরভূমে পুলিশ যে অনুব্রতের ইশারায় চলে, তা এই নির্দেশে আরও এক বার পরিষ্কার। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘বিরোধীদের পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করার নীতি তৃণমূলের রয়েইছে। এ বার দেখা যাচ্ছে, বিরাগভাজন হলে দলের নেতারাও ছাড় পাবেন না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘উনি যে আমাদের নামে মিথ্যা দোষ চাপিয়েছিলেন, তা এ দিন তাঁর নির্দেশ থেকেই স্পষ্ট। তবে, ওই এলাকায় অশান্তির দায় শুধু কর্মীদের নয়, দায় এড়াতে পারেন না তিনি নিজেও।’’

গোটা ঘটনায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি জেলা পুলিশের। কাদেরি নিজে দাবি করছেন, ‘‘আমি নির্দোষ। অনুব্রত মণ্ডল দলের অভিভাবক, তাঁর কথা মেনে চলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

controversy Anubrata Mondal Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE