Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্বভারতীতেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব

অনুপমকে ঢুকতে বাধা, মারধরের অভিযোগ

বিশ্বভারতীতেও এ বার তৃণমূল বনাম তৃণমূল! শাসকদলের ভিতরের দ্বন্দ্ব মঙ্গলবার একেবারে কাছাখোলা হয়ে পড়ল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে! যে দ্বন্দ্বের এক দিকে বোলপুরের সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর কোর্ট-সদস্য অনুপম হাজরা। অন্য দিকে, বিশ্বভারতীর তৃণমূল সমর্থিত কর্মিসভার সভাপতি দেবব্রত ওরফে গগন সরকার।

তৃণমূল সমর্থিত কর্মিসভার লোকজন ও বহিরাগতদের বিক্ষোভে ফিরে গেলেন বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

তৃণমূল সমর্থিত কর্মিসভার লোকজন ও বহিরাগতদের বিক্ষোভে ফিরে গেলেন বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১০:১৯
Share: Save:

বিশ্বভারতীতেও এ বার তৃণমূল বনাম তৃণমূল! শাসকদলের ভিতরের দ্বন্দ্ব মঙ্গলবার একেবারে কাছাখোলা হয়ে পড়ল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে!

যে দ্বন্দ্বের এক দিকে বোলপুরের সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর কোর্ট-সদস্য অনুপম হাজরা। অন্য দিকে, বিশ্বভারতীর তৃণমূল সমর্থিত কর্মিসভার সভাপতি দেবব্রত ওরফে গগন সরকার। এই দু’পক্ষের তরজায় মঙ্গলবার তেতে উঠল শান্তিনিকেতন। সাংসদকে মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ উঠল গগন ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগে অনুপমের আপ্ত সহায়ক অমরনাথ দে দাবি করেছেন, কেবল মারধর নয়, এ দিন সাংসদকে খুনের চেষ্টাও করা হয়েছে! অভিযুক্তের তালিকায় গগনের সঙ্গে
বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য স্বপন দত্তের নামও রয়েছে।

গগন-শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, সাংসদ তাঁর বাবা ও দেহরক্ষীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে হুজ্জুতি বাধিয়েছেন। কর্মিসভার কর্মসূচি চলাকালীন সাংসদ ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের উদ্দেশে কটুক্তি করেছেন। হেনস্থা করা হয়েছে তাঁদের একাধিক কর্মীকে। পরে থানায় অনুপমের নামেও অভিযোগ দায়ের করেন গগনের অনুগামীরা। গগনের কটাক্ষ, ‘‘কখনও শুনেছেন, সাংসদের বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে উপাচার্যের ঘরের বাইরে গড়াগড়ি খান!’’

কিছুদিন আগেই পুনর্বহালের দাবিতে বাবার সঙ্গে উপাচার্যের ঘরের বাইরে ধর্না দিয়েছিলেন অনুপম। তখনই হঠাৎ মেঝেয়ে গড়াগড়ি খেতে শুরু করেন সাংসদের বাবা দেবনাথ হাজরা। সে নিয়ে নানা মহলে তৃণমূল সাংসদ হাসির খোরাকও হয়েছিলেন।

সদ্যই তৃণমূল সমর্থিত কর্মিসভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন গগন। সেই ভোটের সময়েই শাসক দলেরই যুযুধান দু’টি প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অনুপম ও গগন। সেই থেকে তিক্ততা বেড়েছে দু’জনের মধ্যে। কিন্তু, এ দিন যা হয়েছে, তাতে যথেষ্টই বিড়ম্বনায় পড়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম ‘জেলার নেতারাই দেখবেন’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, ‘‘এটা সাংসদ ও তাঁর বাবার বিষয়। বিশ্বভারতীর নিজস্ব ব্যাপার। ওদের বিষয়ে আমরা নাক গলাইনি।’’

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ-সহ ১৭ দফা দাবিপূরণের আর্জি নিয়ে এ দিন কর্মিসভার স্মারকলিপি কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচিতে গগনপন্থীদের একাংশ যেমন ছিলেন, তেমনই চাকরিপ্রার্থী ও স্থানীয় একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মীকেও দেখা গিয়েছে। কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরে অনুপম তাঁকে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক পদে পুনর্বহালের বিষয়টি নিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত
সাব-কমিটির সঙ্গে দেখা করতে যান। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে বিশ্বভারতীতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরও করেন গগন ও তাঁর অনুগামীরা। অনুপমের দাবি, ‘‘পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট সব মহলে জানিয়েছি।”

যা শুনে উপাচার্য স্বপনবাবু বলেন, ‘‘কর্মীদের স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি মোটেও পূর্ব-পরিকল্পিত নয়। যদি জানা থাকত, তা হলে সাংসদকে নিয়ে সাব-কমিটির বৈঠক এ দিন বাতিল করার আর্জি রাখতাম। এ দিনের ঘটনা অনভিপ্রেত।’’ পরে স্বপনবাবু জানান, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক পুরো ঘটনা জানতে চেয়েছে। এ দিনই রিপোর্ট
পাঠানো হবে। গগনের আবার দাবি, অনুপম অশান্তি গণ্ডগোল করার মতলবেই এখানে এসেছিলেন। তাতে তিনি সফলও।

এ দিন বিশ্বভারতীর দুই আধিকারিককে (এক জন ওই সাব-কমিটির সদস্যও) মারধর করা এবং সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে কর্মিসভার বিরুদ্ধে। দেওয়া হয়েছে। এমনকী, তাঁদের আহত হওয়ার খবর পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স এলেও, ‘কিছু হয়নি’ বলে ফিরিয়ে দেয় কর্মিসভা। সব মিলিয়ে আশ্রমের মধ্যে কর্মীদের সঙ্গে বহিরাগত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দিনভর দাপাদাপি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anupam Hazra Lynching University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE