Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুরভোট-পর্ব মিটতেই গ্রেফতার আরাবুল

একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের খুনের চেষ্টা, বোমাবাজি, তোলাবাজি, দলবল নিয়ে হামলা ও হুমকির অভিযোগে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার দুপুরে নিউ টাউন থানার ইকো পার্ক এলাকা থেকে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) রণেন বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিবার থানার পথে আরাবুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।

রবিবার থানার পথে আরাবুল ইসলাম।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের খুনের চেষ্টা, বোমাবাজি, তোলাবাজি, দলবল নিয়ে হামলা ও হুমকির অভিযোগে ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার দুপুরে নিউ টাউন থানার ইকো পার্ক এলাকা থেকে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) রণেন বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরাবুলের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, বোমাবাজি এবং লোককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ বহু দিনের। তা সত্ত্বেও পুরভোট মিটে যাওয়ার পরেই তোলাবাজির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ১৮ এপ্রিল কলকাতায় এবং শনিবার রাজ্যের বাকি ৯১টি পুরসভার ভোটে আরাবুল-বাহিনী সক্রিয় ভাবে শাসক দলের হয়ে কাজ করার পরের দিন পুরনো অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে সরকার ‘কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরোলেই পাজি’ এই নীতির দৃষ্টান্ত রাখল! সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘কলকাতা এবং অন্য জেলার পুরভোটে আরাবুল বাহিনী কাজ করেছে। তার পরে তাঁকে গ্রেফতার করে মুখ্যমন্ত্রী দেখাতে চাইলেন, তিনি রাজধর্ম পালন করেছেন। কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর দলীয় ধর্ম পালন হয়ে গিয়েছে!’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যেরও কটাক্ষ, ‘‘এই গ্রেফতারি একটা তামাশা। বসিরহাটের পুরভোটে আরাবুল নিজেই তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। তার পরের দিন এই গ্রেফতারির কী অর্থ? এ সব করে তৃণমূল এখন করুণার পাত্র!’’ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কটাক্ষ, ‘‘ভুল করে ধরেছে নিশ্চয়ই! কবে ছেড়ে দেয় দেখুন! তোলাবাজির সরকারের আমলে ওঁরা (আরাবুল) তোলাবাজি তো করবেনই!’’

প্রাক্তন মন্ত্রী এবং অধুনা সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে আক্রমণে অভিযুক্ত হয়ে এর আগে এক বার গ্রেফতার হয়েছিলেন আরাবুল। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। ভাঙড়ে শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে খুনোখুনিতে নাম জড়ানোয় তৃণমূল আরাবুলকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে। যদিও তার পরেও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ ছাড়েননি আরাবুল। ওই ঘটনায় পুলিশি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। বরং, বহিষ্কৃত আরাবুল কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করে তাঁর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, এই দফায় তিনিই আরাবুলকে গ্রেফতার করার জন্য দিনদুয়েক আগে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই গ্রেফতারি ঘটেছে ভোটের পরদিন এবং প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়েছে বিরোধীরা।

তৃণমূলের অন্দরে এক সময় বিধায়ক আরাবুল তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভাবশিষ্য বলেই পরিচিত ছিলেন। পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরেও বিকাশ ভবনে তাঁকে ‘গুরু’ সম্বোধন করে বিতর্ক তৈরি করেন আরাবুল। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন পার্থবাবু শুধু বলেছেন ‘‘প্রশাসন তার কাজ করুক!’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আরাবুল সপ্তাহখানেক আগে রাজারহাট থানার বৈদিক ভিলেজ লাগোয়া বাজেরতরফ এলাকায় গ্রিনটেক্স নামে একটি নির্মাণ সংস্থার অফিসে গিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা চেয়ে শাসানি দেন বলে অভিযোগ। ওই সংস্থা ওই এলাকায় আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। বেশ কয়েক বার শাসানি দেওয়ার পরেও টাকা না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে দলবল নিয়ে ওই সংস্থার অফিসে হানা দেন আরাবুল। সে সময় বোমবাজি ও নির্মাণ কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার ওই কোম্পানির তরফে রাজারহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরই শুরু হয় আরাবুলের খোঁজ।

এক তদন্তকারীর অফিসারের কথায়, ‘‘নিউ টাউন থানার ইকো পার্কে আরাবুলের একটি ডেরা আছে। মাঝেমধ্যেই ওই ডেরায় যাতায়াত করেন আরাবুল। কয়েক দিন ধরেই সাদা পোশাকের পুলিশ ওই ডেরায় নজরদারি করছিল।’’ সাদা এসইউভি গাড়ি নিয়ে ইকো পার্ক এলাকায় আসতেই রাজারহাট ও নিউ টাউন থানার যৌথ পুলিশ বাহিনী আরাবুলকে গ্রেফতার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE