Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আর্যরা এ দেশের, দাবি করে পিছু হটলেন শিন্দে

এতশত প্রমাণের ভিত্তিতে হরপ্পা যুগের সভ্যতাই আদতে আর্যদের বৈদিক সভ্যতার প্রত্যক্ষ পূর্বসূরি বলেও নাগাড়ে ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন শিন্দে এবং তাঁর সঙ্গে সহমত পণ্ডিতবর্গ, যা অনেকটাই আজকের হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাসের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।

পুরাতত্ত্ববিদ বসন্ত শিন্দে।—ফাইল চিত্র।

পুরাতত্ত্ববিদ বসন্ত শিন্দে।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

সাম্প্রতিক পুরাতাত্ত্বিক গবেষণা ও জিনবিদ্যার ভিত্তিতে আজকের দক্ষিণ এশীয়দের বংশগত উৎসের হদিস মেলার দাবি করেছিলেন তিনি। এমনকি আর্যদের বাইরে থেকে আসার তত্ত্বও কার্যত খারিজ করে ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ শতবার্ষিকী সভাঘরে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন পুরাতত্ত্ববিদ বসন্ত শিন্দে। গত সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সেল’-এ গবেষণাপত্র প্রকাশের পরে যিনি ঘটা করে বৈদিক সভ্যতা ও প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা মোটামুটি অখণ্ড ধারা বলে দাবি করেন। বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে জিনতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানীদের প্রশ্নের মুখে শিন্দেকে কিছুটা পিছু হটতে হল।

ডেকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ বসন্ত শিন্দের সঙ্গে সেল-এর গবেষণাপত্রটির অন্যতম সহ-লেখক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডেভিড রাইখের পরিচিত কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের মলিকিউলার বায়োলজিস্ট তথা অধ্যাপক পার্থসারথি রায়। শিন্দে, রাইখ প্রমুখের গবেষণাপত্রটির ছত্রছত্র উদ্ধৃত করেই তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন বক্তৃতা বা সংবাদমাধ্যমের সামনে বিবৃতিতে যা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে গবেষণাপত্রটির অনেকটাই অমিল। যেমন, শিন্দে দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেছিলেন, গত ১২ হাজার বছর ধরেই দক্ষিণ এশীয়দের জিনে তেমন হেরফের ঘটেনি। পশ্চিম এশীয়দের সঙ্গেও দক্ষিণ এশিয়াবাসীর জিনগত মিল নেই। ইরান, তুর্কমেনিস্তানের কয়েকটি জায়গার প্রাচীন দেহাবশেষের জিনে যে দক্ষিণ এশীয় বৈশিষ্ট্য মিলেছে, তা আদতে হরপ্পা যুগের মানুষের ভারত ছেড়ে বহির্গমনের ফল।

এতশত প্রমাণের ভিত্তিতে হরপ্পা যুগের সভ্যতাই আদতে আর্যদের বৈদিক সভ্যতার প্রত্যক্ষ পূর্বসূরি বলেও নাগাড়ে ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন শিন্দে এবং তাঁর সঙ্গে সহমত পণ্ডিতবর্গ, যা অনেকটাই আজকের হিন্দুত্ববাদীদের বিশ্বাসের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। জাদুঘরে শিন্দের বক্তৃতার পরে তাঁকে পাল্টা প্রশ্নে বিঁধলেও পার্থসারথিবাবু অবশ্য সরাসরি রাজনৈতিক অভিসন্ধির অভিযোগ তোলেননি। ইন্টারনেটে সুলভ তরজার ভঙ্গিতে বিরোধিতার পথ নেননি তিনি। তার বদলে পার্থবাবু বুঝিয়ে বলেন, কী ভাবে শিন্দেদের গবেষণাপত্রে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলা আছে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘গবেষণাপত্রে স্পষ্টতই বলা হয়েছে দক্ষিণ এশীয়দের, বিশেষত উত্তর ভারতীয়দের রক্তে শতকরা ৩০ ভাগ ইরানি জিনের ছাপ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গিয়েছে, এই ইরানি জিনের ভাগটা বাবার কাছ থেকে পাওয়া। বিশেষত, ব্রাহ্মণদের রক্তে এই পশ্চিম এশীয় জিনের ভাগ বহমান।’’

আজকের ভারতীয়দের অনেকের রক্তে এই শতকরা ৩০ ভাগ পশ্চিম এশীয় জিনকে কেন ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চাইছেন না অধুনা ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্সের কর্তা বা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজ়িয়মের গভর্নিং বডির সদস্য শিন্দে? ওঁর জবাবে তা স্পষ্ট হয়নি। তিনি খানিক ঢোঁক গিলে বলেছেন, ‘‘গবেষণা যে দিকে আভাস-ইঙ্গিত দিয়েছে, তাই তো আমি বলেছি।’’ পার্থসারথিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কেন আপনি নিজে যা লিখেছেন, তাকেই প্রায় অস্বীকার করছেন, তা বিস্ময়ের!’’ সভাঘরে উপস্থিত পুরাতত্ত্ববিদেরাও কেউ কেউ শিন্দের পর্যবেক্ষণ নিয়ে খানিক সংশয় প্রকাশ করেন।

আড়াই দশক আগে, এই সভাঘরেই দেবতাদের গ্রহান্তর থেকে আসার তত্ত্ব নিয়ে বলতে এসে কলকাতার যুক্তিনিষ্ঠ বিদগ্ধমহলের প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন এরিক ভন দানিকেন। এ যাত্রা, শিন্দেকে যুক্তিজালে বিদ্ধ করার মধ্যে কারও কারও সেই স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE