Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্টারে বিনোদিনী, বাকি ইতিহাস

বিনোদিনী আর স্টার থিয়েটার নাম দু’টি মানুষের মনে সমার্থক হয়ে আছে দীর্ঘদিনই। এতটাই যে, তার তলায় চাপা পড়ে যায় তথ্যের প্রমাদও। কারণ, হাতিবাগানের স্টার থিয়েটার কিন্তু বিনোদিনীর টাকায় গড়া নয়। সেখানে তিনি অভিনয়ও করেননি কখনও।

বিনোদিনী।

বিনোদিনী।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৮
Share: Save:

এক দিন যে ‘বঞ্চনা’ হয়েছিল তাঁর প্রতি, তার খানিকটা যেন শুধরে নিতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারে নটী বিনোদিনীর নামাঙ্কিত একটি আর্ট গ্যালারি তৈরি হচ্ছে। ১৬ সেপ্টেম্বর তার উদ্বোধন।

বিনোদিনী আর স্টার থিয়েটার নাম দু’টি মানুষের মনে সমার্থক হয়ে আছে দীর্ঘদিনই। এতটাই যে, তার তলায় চাপা পড়ে যায় তথ্যের প্রমাদও। কারণ, হাতিবাগানের স্টার থিয়েটার কিন্তু বিনোদিনীর টাকায় গড়া নয়। সেখানে তিনি অভিনয়ও করেননি কখনও। বিনোদিনীর স্টার থিয়েটারটি ছিল বিডন স্ট্রিটে। ১৯২৮ সালে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ তৈরি হওয়ার সময় সেটি অবলুপ্ত হয়। কিন্তু বিনোদিনী আর স্টারের একত্র নাম-মাহাত্ম্য এমনই যে, পরবর্তী কালে হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের সঙ্গেও মানুষ বিনোদিনীর স্মৃতি সংযুক্ত করে এসেছেন।

আরও পড়ুন: ইগনু যখন স্বপ্ন-উড়ান

তবে কি হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের সঙ্গে বিনোদিনীর কোনও সম্পর্কই নেই? ইতিহাস বলে, সে কথাও পুরোপুরি ঠিক নয়। বিনোদিনীর তৈরি স্টার থিয়েটারের পাঁচ বছর পরে, ১৮৮৮ সালে যখন দ্বিতীয় স্টার তৈরি হয়, তখনও অমৃতলাল বসু, ধর্মদাস সুর প্রমুখেরা স্টারের সঙ্গে বিনোদিনীর চেনা নামমাহাত্ম্যকে কাজে লাগিয়েছিলেন। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের কথায়, ‘‘বিডন স্ট্রিটের হল তৈরির পেছনে যাঁরা ছিলেন, হাতিবাগানে স্টার গড়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল সেই অমৃতলাল বসুদের। স্টার নামটিও যুক্ত হয়েছে সেই হিসেবেই।’’

স্টার থিয়েটার।

তবে বিনোদিনীর স্টার বলতে অধুনালুপ্ত ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের স্টারকেই বোঝায়। ঠিক হয়েছিল প্রেক্ষাগৃহটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বিনোদিনীর নাম। গিরিশচন্দ্র ঘোষের অনুরোধে বিনোদিনী তাঁর গুণমুগ্ধ গুর্মুখ রায়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন গিরিশচন্দ্রের হাতে। কিন্তু তৎকালীন সমাজ বিনোদিনীর মতো প্রান্তবাসিনীর নামে প্রেক্ষাগৃহের নাম পছন্দ করবে না, সেই ‘যুক্তি’তে শেষ লগ্নে প্রেক্ষাগৃহের নাম বদলে রাখা হয় স্টার থিয়েটার। সেই ‘বঞ্চনা’র আঘাত মাথায় নিয়েই ১৮৮৩ সালের ২১ জুলাই নবনির্মিত স্টারের মঞ্চে দাঁড়ান বিনোদিনী। রামকৃষ্ণদেব সেখানেই বিনোদিনীর ‘শ্রীচৈতন্য’ দেখতে যান।

এক দিন যে নামাঙ্কন বিনোদিনী পাননি, পুরসভা এ বার তা ফিরিয়ে আনতে চায়। ১৮৮৬-’৮৭ সালে বিনোদিনী অভিনয় ছেড়ে বসবাস শুরু করেন রাজাবাগান স্ট্রিটে। সে রাস্তা ইতিমধ্যেই বিনোদিনী সরণি হিসেবে স্বীকৃত। এ বার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানাচ্ছেন, স্টার থিয়েটারের দোতলায় ‘নটী বিনোদিনী আর্ট অ্যান্ড ফটো গ্যালারি’ হচ্ছে।

যদিও নাট্যমহলের অনেকেরই় এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘থিয়েটার হলের নাম বিনোদিনী করলে আপত্তি ছিল না। আর্ট গ্যালারি কেন বুঝতে পারছি না! উনি তো ছবি আঁকতেন না।’’ নাট্যগবেষক দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০০৪ সালে স্টার থিয়েটারের নবনির্মাণের সময়েও নাট্যপ্রযোজক গণেশ মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহটির নাম বিনোদিনীর নামে হোক। দেবজিতের কথায়, ‘‘সেটা হলেই প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE