—ফাইল চিত্র।
প্রায় সত্তর বছর আগে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার অন্ডালের বাসিন্দা ছিলেন শচীন্দ্রকুমার বিশ্বাস। ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর সেখানেই তাঁকে ‘আর্টিসান অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেক্সটাইল ডেমন্সট্রেশন পার্টি’ হিসেবে নিয়োগপত্র দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ। রাজ্যের প্রবীণ আমলারা জানাচ্ছেন, তখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিকে সরকার প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করত। পেশায় তন্তুবায় শচীন্দ্রবাবুকে ‘আউটসাইডার’ হিসেবে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল।
এর পর রাজ্যের পাট গুটিয়ে অসমে চলে যান শচীন্দ্রবাবু। নাগরিকপঞ্জি তৈরির পর্ব যখন এল, তখন ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকেই যে তিনি ভারতের বাসিন্দা তার প্রমাণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া নিয়োগপত্রটি দাখিল করেন তিনি। সেই নথিটি যাচাইয়ের জন্য এ রাজ্যে পাঠান এনআরসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শচীন্দ্রবাবুর নিয়োগপত্রের কোনও প্রতিলিপি সরকারের ঘরে আর নেই। বস্তুত, ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ-ই এখন অস্তিত্বহীন। কালক্রমে তা ভেঙে তৈরি হয়েছে শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বস্ত্রশিল্পের মতো দফতর। ফলে নথি যাচাই করা যায়নি। সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এনআরসি কর্তৃপক্ষকে।
এমন ঘটনা একটা নয়। ষাটের দশকে কলেজ স্ট্রিট এলাকায় এক খাদির দোকানে কাজ করতেন এক ব্যক্তি। সেই কাজ ছেড়ে অসমে যাওয়ার সময় তাঁকে একটি ‘রিলিজ লেটার’ দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দোকানের কর্তৃপক্ষ। সেই শংসাপত্রই তিনি দাখিল করেছেন এনআরসি কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেই দোকান উঠে গিয়েছে। ফলে যাচাই করা যায়নি শংসাপত্রের সত্যাসত্য। একই ভাবে ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন’ সংক্রান্ত বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ আর মিলছে না। অতএব যাচাই করা যাচ্ছে না পাশ করার শংসাপত্র।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ১ জুনের পর থেকে এনআরসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। ফলে যাচাই না হওয়া নথির মালিকদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে যাচাই করার জন্য যে ১ লক্ষ ১৭ হাজার নথি এনআরসি কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে একটিও ভোটার কার্ড নেই। চাকরির নিয়োগপত্র বা পরীক্ষা পাশের নথি ছাড়াও রয়েছে শুধু ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকার প্রতিলিপি এবং জমিজমা সংক্রান্ত কাগজপত্র। প্রবীণ এক আমলার কথায়, ‘‘১৯৭১-এর পরে এ দেশে এসে অনেকেই ভোটার তালিকায় নাম তুলিয়েছেন, এমন অভিযোগ বিস্তর। সেই কারণেই হয়তো ভোটার কার্ডকে একমাত্র মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করতে চাইছেন না এনআরসি কর্তৃপক্ষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy