মাপে মাঝারি, কিন্তু আতঙ্ক সেই আগের মতোই। রবিবার ভোরে তখনও ঘুম ভাঙেনি অধিকাংশের। হঠাৎই কেঁপে উঠল অসমের চিরাং জেলার বাসুগাঁও সংলগ্ন অঞ্চলের মাটি। আর সেই কম্পন ছড়াল প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গে, এমনকী কলকাতাতেও।
নেপালের মতো বড় ধরনের ভূমিকম্প যে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষত অসম-মেঘালয়েও হতেপারে, ২৫ মে-র পরেই তা জানান ভূবিজ্ঞানীরা। আর হলও তাই। তবে নেহাতই মাঝারি মাপের। আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তবু থেকেই গেল।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, সকাল ৬ টা ৩৫-এ অসমের বাসুগাঁওের কাছে কেন্দ্রীভূত ভূমিকম্পটি নেহাতই মাঝারি মাপের। রিখটার স্কেলে যার তীব্রতা ছিল ৫.৬। এই কম্পনের জের কলকাতা পর্যন্ত অনুভূত হলেও, ক্ষয়ক্ষতির তেমন খবর নেই। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে উৎপন্ন ওই কম্পনের ধাক্কা সব চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে নামনি অসমে। দেওয়াল ভেঙে দুই যুবক জখম হওয়ার খবর মিলেছে কোকরাঝাড় থেকে। গুয়াহাটির একটি বাড়িতেও ফাটল দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাসুগাঁওয়ে গৌড়ীয় মঠের তোরণে থাকা সিংহ ভেঙে পড়েছে। ফাটল ধরেছে গোয়ালপাড়ায় জেলাশাসকের কার্যালয়ে।
ভূবিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, এ দিনের এই ভূমিকম্প আসলে আরও কোনও বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। তাঁরা বলছেন, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভূস্তরের অবস্থা এতটাই অস্থির যে, সেখানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রারও বেশি ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২৫ মে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে নেপালে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষের। সেই ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, তা মাউন্ট এভারেস্টকেও এক ধাক্কায় তিন সেন্টিমিটার সরিয়ে দিয়েছে। অসম কিংবা মেঘালয়ে এই মাত্রায় ভূমিকম্প হলে নেপালের থেকেও বড় বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা ভূবিজ্ঞানীদের।
কিন্তু কেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশেষত শিলঙে এলাকায় গত বিশ বছরে বিধি ভেঙে যে ভাবে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে, তাতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়বে সব।
এ দিনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি তেমন না হলেও, সেই আশঙ্কা কিন্তু থাকছেই। রবিবার ভোর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সকালের দিকে বৃষ্টির মধ্যেই পাখিদের অস্থির ভাবে ওড়াওড়ি করতে দেখা যায়। সাড়ে ৬টার পরে কম্পন অনুভূত হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। বৃষ্টির মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন অনেকে। মৃদু কম্পন টের পেয়েছে কলকাতাও। বিশেষত বহুতলের বাসিন্দারা। তবে গত ২৫ মে-র সঙ্গে এই কম্পনের কোনও তুলনাই করতে চাননি কেউ।
২৫ মে-র পরে নেপালে শতাধিক ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন হয়েছে পরবর্তী ১০ দিনে। এবং তার জেরে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মাটি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের কম্পন। তবে এ দিনের ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে আফটারশক হওয়ার কোনও সম্ভবনাই নেই বলে জানিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা। মানুষকে অযথা আতঙ্কিত হতে নিষেধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy