বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ঢুকে বিজেপিকে আক্রমণ করতে বললেন অভিষেক। ফাইল চিত্র।
কথা ছিল শুধু অভিষেক। কিন্তু উপরি পাওনা হিসেবে পাওয়া গেল খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। সশরীরে হাজির না হলেও, সোমবার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত ডিজিটাল কনক্লেভে ভাষণ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাইক্রোফোনের সামনে সেলফোন ধরে তৃণমূলনেত্রীর বার্তা শোনানো হল দলের ডিজিটাল সৈনিকদের। তার পরে ভাষণ দিলেন অভিষেক। তবে দু’জনের ভাষণেই সবচেয়ে গুরুত্ব পেল বিজেপির মোকাবিলা করার প্রসঙ্গ। প্রত্যেককে নিজের নিজের এলাকায় আরএসএস-এর কার্যকলাপের উপরে নজর রাখতে বললেন মমতা। আর অভিষেক বললেন, বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ঢুকে বিজেপিকে আক্রমণ করতে হবে।
নজরুল মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পৌঁছন দুপুর দেড়টা নাগাদ। তৃণমূল আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা দীপ্তাংশু চৌধুরী এবং সুপর্ণ মৈত্রের কথোপকথন তখন সারা দলের ডিজিটাল সৈনিকদের সঙ্গে। অভিষেক নজরুল মঞ্চে পৌঁছেই অবশ্য ভাষণ শুরু করেননি। অভিষেকের আগে ভাষণ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাইক্রোফোনের সামনে মোবাইল ফোন ধরে তৃণমূলনেত্রীর ভাষণ শোনানো হয় নজরুল মঞ্চে।
দলের ডিজিটাল সেলের হয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা যদি মনে করেন একটা কোনও কাজ পেলে ভাল হয়, তা হলে ভবিষ্যতে কাজের ব্যবস্থাও হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন এই বার্তাই দিয়েছেন ডিজিটাল কনক্লেভে। তবে কী কাজ দেওয়ার কথা তিনি বলতে চেয়েছেন, তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। কারা ডিজিটাল সেলের হয়ে কাজ করছেন, তাঁদের নামের তালিকা এবং প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য নথিবদ্ধ করে রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নির্দেশ দেন দীপ্তাংশু চৌধুরীকে। যাঁরা ভাল কাজ করবেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও তৃণমূলনেত্রী এ দিন জানান।
তৃণমূলের ডিজিটাল সেলের হয়ে যাঁরা কাজ করছেন। নিজের নিজের এলাকায় আরএসএস-বিজেপির কার্যকলাপের উপর নজর রাখার দায়িত্ব এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় আরএসএস-এর লোক ঢুকছে প্রচারের নাম করে।’’ এঁরা বাইরে থেকে আসছেন এবং নানা ছলছুতোয় স্থানীয় বাসিন্দাদের পারিবারিক জীবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন। এঁদের সব কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে হবে, বলেন তৃণমূলনেত্রী। দলের নেতৃত্বকে এবং পুলিশকে সব খবর জানাতেও বলেন তিনি। কোনও বিপজ্জনক কাজের খবর পেয়ে যদি কেউ আগাম পুলিশকে জানাতে পারেন এবং যদি দেখা যায় খবরটা ঠিক ছিল, তা হলে তিনি পুরস্কৃত হবেন— জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: বিজেপি ভারতীয় জোকার পার্টি না যাত্রা পার্টি? প্রশ্ন অভিষেকের
বিভিন্ন জেলার ডিজিটাল টিমের প্রতিযোগিতার আহ্বানও এ দিন জানান দলনেত্রী। তবে দলের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে অনেকে ভুল তথ্য তুলে ধরছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বার্তা তৃণমূলনেত্রীর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শেষ হতেই উত্তরীয়, পুষ্পস্তবক ইত্যাদি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় অভিষেককে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, রাজ্যসভা সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী এবং শান্তনু সেন। ছিলেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। তাঁদেরও একে একে বরণ করে নেয় তৃণমূলের ডিজিটাল সেল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি অনবরত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিষেক ইঙ্গিত দেন।
অভিষেক নিজের ভাষণের শুরুর দিকেই তাঁর পিসির কথার সূত্র ধরে সুস্থ প্রতিযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। কিন্তু সেটা করতে হবে তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে। নিজেদের মধ্যে কে বড়, কে ছোট, এই করতে গিয়ে দলটাকে দয়া করে খাস্তা করবেন না।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে এ দিন তীব্র আক্রমণাত্মক ছিলেন অভিষেক। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি অনবরত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিষেক ইঙ্গিত দেন। লড়াইটা যেন একতরফা হয়ে না যায়— সতর্কবার্তা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতির। ডিজিটাল কনক্লেভে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘‘শুধু তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিখলে চলবে না। বিজেপিরও অনেকগুলো সোশ্যাল মিডিয়া পেজ রয়েছে। সেখানে কী একতরফা প্রচার চলছে আমরা কিন্তু জানি না।’’ ডিজিটাল সৈনিকদের প্রতি অভিষেকের নির্দেশ, ‘‘বিজেপির পেজে ঢুকে ওঁদের আক্রমণ করতে হবে। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে ওঁদের অপপ্রচারের জবাব দিয়ে আসতে হবে।’’
শ্রীপর্ণা, দেবাংশু এবং স্বরূপ নামে তিন জন দলের ডিজিটাল সেলের হয়ে খুব ভাল কাজ করছেন বলে জানান অভিষেক। দেবাংশু এবং স্বরূপের সঙ্গে ভাষণের মাঝেই কথাও বলেন। বুঝিয়ে দেন, কারা কেমন কাজ করছেন, সে দিকে ভাল ভাবেই নজর রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভাঙচুর, অবরোধ, তুলনায় কম গাড়ি, বিক্ষিপ্ত গোলমালেও মোটের উপর স্বাভাবিক জনজীবন
ডিজিটাল কনক্লেভের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, গোষ্ঠী বা উপদল নিয়ে মাতামাতি করে লাভ নেই, ভাল কাজ করুন, দল এমনিতেই খুঁজে নেবে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক কর্মী ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন। … এ দাদা জিন্দাবাদ, ও দাদা জিন্দাবাদ বলছি। ও সব করবেন না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ বলারও দরকার নেই। শুধু বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ, মা-মাটি-মানুষ জিন্দাবাদ।’’
সংবাদমাধ্যমের একাংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাল কাজের কথা তুলে ধরে না, শুধু অপপ্রচার করে— অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর। তাই ডিজিটাল কনক্লেভে তাঁর বার্তা, ‘‘সংবাদমাধ্যমের উপরে আর আমরা নির্ভর করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজের কথা আপনারা তুলে ধরুন।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে মেরুকরণের অভিযোগ তুলে অভিষেক এ দিন ফের প্রশ্ন তোলেন— হিন্দু ধর্মের ধারক-বাহক হিসেবে যাঁরা নিজেদের তুলে ধরেন, তাঁরা হিন্দু ধর্মের জন্য কী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি পৈতে ধারণ করি, রোজ গায়ত্রী মন্ত্র জপ করি। আমিও এক জন হিন্দু। কিন্তু আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি। …যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি না।’’
বাংলার সরকার ইমাম-মোয়াজ্জেনদের জন্য যে ভাতা চালু করেছে, তা নিয়েও অপপ্রচার হচ্ছে বলে অভিষেক দাবি করেন। তিনি জানান, জনসাধারণের করের টাকা থেকে ওই ভাতা দেওয়া হয় না। ওয়াকফের টাকা থেকে ইমাম-মোয়াজ্জেন ভাতা দেওয়া হয়, ওই টাকার মালিক মুসলিমরাই।
নানা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে যাঁরা দলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন, তাঁদের দলে ফেরানোর দায়িত্ব নিতে হবে ডিজিটাল সৈনিকদেরই। এ দিন বলেছেন অভিষেক। তাঁর নির্দেশ, প্রত্যেক ব্লকে, ১০০টা করে সাইবার সৈনিক চাই, তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি মাসে এমন ৮ জনকে দলে আনবেন, যাঁরা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন বা অন্য দলে রয়েছেন। এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে আগামী এক বছরে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ১ কোটি বাড়া সম্ভব বলে মত অভিষেকের।
বাংলায় ভোটদাতার সংখ্যা সাড়ে ছ’কোটির আশেপাশে। তার মধ্যে প্রায় ৩ কোটির মতো ভোটদাতা তৃণমূলকে ভোট দেন বলে অভিষেক দাবি করেন। ডিজিটাল সৈনিকদের সামনে যে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হল, তা পূরণ করা গেলে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ৪ কোটিতে পৌঁছে যাবে— হিসেব কষে বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy