Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Kanyashree

অটো চালিয়ে বাবা আর পেরে ওঠে না, কন্যাশ্রীই ভরসা বাংলা জয়ী এই মেয়ের

কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে উপহার পেয়েছে অঙ্গনা। একটা কন্যাশ্রী ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, ছাতা, ঘড়ি আর পাঁচ হাজার টাকা। ওর কথায়, ‘‘যা পেয়েছি তাতে ভীষণই খুশি। তবে টাকার অঙ্কটা একটু বাড়ালে ভাল হত। খুব উপকার হত আমাদের।’’

মায়ের সঙ্গে অঙ্গনা। নিজস্ব চিত্র।

মায়ের সঙ্গে অঙ্গনা। নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ১৮:৫৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা তখন মঞ্চে। কন্যাশ্রী দিবস উপলক্ষে ভাষণ দিচ্ছেন। বলছেন, ‘মেয়েরা ভাল করে পড়াশোনা করো। খেলা করো। সংস্কৃতি করো। নাটক করো।’ আর গোটা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম হাততালিতে ফেটে পড়ছে। খুশির ঝলক ধরা পড়ছে ছাত্রীদের মুখে। অনুষ্ঠান শেষে সকলে যখন স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখনও খুশিতে ডগমগ তারা।

মঙ্গলবার কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল অঙ্গনা দাস। বেলেঘাটায় বাড়ি। রামমোহন বিদ্যামন্দির ফর গার্লস হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাইরে বেরিয়ে আর আবেগ ধরে রাখতে পারল না সে। বলেই ফেলল, ‘‘এখন ভাবি, কন্যাশ্রী প্রকল্প না থাকলে আমার কী হত! বই-খাতা কেনা থেকে টিউশন নেওয়া— সবটাই তো ওই টাকায়। না হলে আমার পড়াশোনাই করা হত না!’’

শুধু কি পড়াশোনা! অঙ্গনা রাজ্য ভলিবল দলের সদস্য। তার কথায়, ‘‘এই যে আমি খেলি, সেটাও তো কন্যাশ্রীর দৌলতে। এখানে ওখানে অনুশীলনের জন্য যাতায়াত করাও তো ওই টাকাতে। আসলে, বাবা এখন আর পেরে ওঠে না। পারবেই বা কী করে! অসুস্থ তো। তা-ও যদি নিজের একটা অটো থাকত!’’

বেলেঘাটার বাড়িতে বাবা-মা-দিদির সঙ্গে থাকে অঙ্গনা। দিদি ওর স্কুলেই টুয়েলভ-এ পড়ে। দুই মেয়ের পড়াশোনার ভার বাবা কাজল দাস আর নিতে পারেন না। তাই কন্যাশ্রীই ভরসা। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর মতো শব্দ খুঁজে পায় না দাস পরিবার। অঙ্গনার মা বললেন, ‘‘ওর বাবা অন্য লোকের অটো ভাড়া নিয়ে চালায়। কিন্তু, সেটাও বেশির ভাগ সময়ে পাওয়া যায় না। যে দিন অটো মেলে না, সে দিন বেকার। তার উপর বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থও। বাড়ি থেকে বেরোতে পারে না। মাঝে কয়েক দিন চেষ্টা করেছিল কোনও রকমে, কিন্তু অটো পায়নি। তাই, বাড়িতেই বসে রয়েছে। আমাদের সংসার যে কী ভাবে চলছে, তা আমরাই জানে। ভাগ্যিস, কন্যাশ্রীর টাকা ক’টা ছিল।’’

দেখুন ভিডিয়ো

সোদপুরের সনিয়া দাসও যেমন কন্যাশ্রীর টাকায় পড়াশোনা করছে। মার্শাল আর্ট এবং তাইকোন্ডো শিখছে সনিয়া। এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে সনিয়া বলে, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্প আছে বলেই পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারছি। না হলে কবেই স্কুল ছাড়তে হত।’’

পাটোয়ারবাগান গার্লস হাইস্কুল থেকে এসেছিল নিশা খাতুন এবং মমতাজ শামিম। ওরা দু’জনেই দশম শ্রেণিতে পড়ে। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায়। কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রশংসা করে এ দিন ওরা দু’জনেই বলে, ‘‘আজ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেই ওখানে ভর্তি হওয়া যাবে। এটা যে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। সেখানে আবার নানা রকমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে চাকরি পেতে সুবিধা হয়। আজ আমাদের বড় আনন্দের দিন।’’

আরও পড়ুন: গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে রাজ্যের সব মেয়েই এখন কন্যাশ্রীর আওতায়

দার্জিলিং-এর মিরিক থেকে এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসেছল একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শীতল রাই। কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের অনেক মেয়েই এখন স্কুলে যেতে পারছে বলে জানাল সে। শুধু তাই নয়, অনেকে স্কুলে গিয়ে খেলাধুলোতেও বেশ নাম করেছে। অঙ্গনা যেমন গোল্ড মেডেল পেয়েছে। ভলিবলে রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রথমে জেলাস্তরে সুযোগ পেয়েছিল। সেই দলে কলকাতার একমাত্র মেয়ে ছিল অঙ্গনা। পরে সব জেলার মেয়েদের নিয়ে তৈরি হয় রাজ্য-দল। গত জানুয়ারি মাসে তামিলনাড়ুকে হারিয়ে বাংলা অনূর্ধ্ব ১৪ সেই দল চ্যাম্পিয়ন হয়। অঙ্গনা সেই দলের সদস্য ছিল। ফাইনালে জিতে গোল্ড মেডেল পেয়েছিল। অঙ্গনা এ দিন বলে, ‘‘সত্যিটা কী জানেন, আমি আমার প্রিয় ভলিবল খেলাটা চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম এই কন্যাশ্রীর জন্য। ওই টাকাটা না হলে খেলা চালানো আমার পক্ষে কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না।’’

আরও পড়ুন: দেশজুড়ে একসঙ্গে ভোট এখনই সম্ভব নয়, জানাল নির্বাচন কমিশন

আজ কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে উপহার পেয়েছে অঙ্গনা। একটা কন্যাশ্রী ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, ছাতা, ঘড়ি আর পাঁচ হাজার টাকা। ওর কথায়, ‘‘যা পেয়েছি তাতে ভীষণই খুশি। তবে টাকার অঙ্কটা একটু বাড়ালে ভাল হত। খুব উপকার হত আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Girl Child West Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE