Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উধাও টাকা, ব্যাঙ্ককর্মীকে খুন করে দেহ ছয় টুকরো

এক জন ব্যাঙ্ককর্মী সাইকেলে কী করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন তা বোধগম্য হচ্ছে না পুলিশের।

দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলের ছবি। ইনসেটে নিহত পার্থ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র

দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলের ছবি। ইনসেটে নিহত পার্থ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৬
Share: Save:

মুণ্ড, দু’টি হাত এবং হাঁটুর নীচ থেকে দু’টি পা কাটা অবস্থায় বুধবার দুপুরে তাঁর বস্তাবন্দি দেহ মিলেছিল ডোমজুড়ের রাঘবপুর গ্রামের একটি বাঁশবনের সামনে থেকে। ডোমজুড়ের বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পার্থ চক্রবর্তীকে (২৭) কারা কেন ওই ভাবে খুন করল সে ব্যাপারে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পরেও অন্ধকারে। ব্যারাকপুর থেকে পুলিশ কুকুর এনে বৃহস্পতিবার দিনভর তল্লাশি চালিয়েও মেলেনি পার্থর দেহের বাকি অংশ। মেলেনি তাঁর কাছে থাকা ব্যাঙ্কের প্রায়
সাড়ে তিন লক্ষ টাকাও।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের কাকা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, টাকার জন্যই খুন। তাতে পার্থর ঘনিষ্ঠ কেউ জড়িত। অন্যত্র খুন করে দেহটিকে ফেলার সুবিধার জন্য দুই বা তিন ভাগ করে বস্তায় ভরে দুষ্কৃতীরা। যার মধ্যে একটি বস্তার হদিস মিলেছে রাঘবপুরে। বাকি বস্তা আশপাশের কোনও এলাকা থেকে শীঘ্রই মিলবে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।

পার্থ নদিয়ার চাকদহের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ডোমজুড়ের সলপে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার ‘ডোর ব্যাঙ্কিং অফিসার’ ছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কটি একটি ভবনের দোতলায়। সেই ভবনেরই তিন তলায় ভাড়া থাকতেন পার্থ। কাজ ছিল, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়া এবং সেই ঋণের টাকা আদায় করা। তাঁর দায়িত্বে ছিল মাকড়দহ এবং কাটলিয়ার ৩০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী।

পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, বুধবার সকালে পার্থ সাইকেলে মাকড়দহে যান। সেখানে পাঁচটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ঋণগ্রহীতাদের থেকে টাকা আদায় এবং প্রায় এক লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। সব কাজ শেষে ব্যাঙ্কে ফেরার কথা ছিল বেলা ২টো নাগাদ। কিন্তু তিনি ফেরেননি। দুপুরে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর থেকে ফোনে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, তাদের কাছে পার্থ যাননি। পরে জানা যায়, চারটি গোষ্ঠীর সঙ্গে পার্থ বেলা ১২টা পর্যন্ত বৈঠক করেছেন। কিন্তু পঞ্চম গোষ্ঠীর কাছে যাননি। ফোনেও পার্থকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। এর পরেই ব্যাঙ্ককর্মীরা গ্রামে যান। চারটি গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের ‘পাশবই’ নিয়ে হিসেব করে দেখেন, ৩ লক্ষ ৫৮ লক্ষ ৮৫০ টাকা আদায় করেছেন পার্থ। ঋণ দিয়েছেন প্রায় এক লক্ষ টাকা। কিন্তু টাকা এবং পার্থর হদিস না-পেয়ে তাঁরা বিকেলে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

তত ক্ষণে রাঘবপুর থেকে পুলিশ বস্তাবন্দি দেহটি পেয়েছে। তখন পরিচয় জানা যায়নি। রাতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং নিহতের বাড়ির লোক দেহটি শনাক্ত করেন। পু‌লিশের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কের গাফিলতির দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে। এক জন ব্যাঙ্ককর্মী সাইকেলে কী করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন তা বোধগম্য হচ্ছে না পুলিশের। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ব্যাঙ্কের স্থানীয় কর্তারা। আজ শুক্রবার, রাঘবপুরে পার্থবাবুর হাত-পা-মাথার সন্ধানে পুকুরে জাল ফেলার কথা ভাবছে পুলিশ। ব্যাঙ্কের সব কর্মীকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন অফিস চত্বর ছেড়ে না যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BankStaff Brutal Murder Domjur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE