পুরপ্রধানের মাথার উপরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। তাঁর চেম্বারের বাইরেও রয়েছে ছবি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোট ঘোষণার পরেই সারা দেশে চালু হয়ে গিয়েছে আদর্শ আচরণ বিধি। সমস্ত সরকারি জায়গা, অফিস-কাছারি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি সরিয়ে ফেলা বা ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রশাসনিক নির্দেশ সত্ত্বেও নিজের অফিস থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সরাতে রাজি নন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত।
বাঁকুড়া পুরসভায় পুরপ্রধানের চেম্বারে ঢোকার দরজার পাশে দেওয়ালে এবং তাঁর চেম্বারের ভিতরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বৃহস্পতিবারও টাঙানো রয়েছে। রবিবার লোকসভা ভোট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তার পরেই জেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে চিঠি পাঠিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের দফতরের তরফে পুরসভার নিজস্ব জায়গায় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছবি-সহ সরকারি প্রকল্পের কথা লেখা হোর্ডিং সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে জানানো হয়, সেই সব নির্দেশ মানা হয়েছে।’’ তারপরেও কেন পুরপ্রধানের ঘরেই তৃণমূলনেত্রীর ছবি কেন রয়েছে? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। বাঁকুড়া পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “ভোট ঘোষণার পরেও পুরভবনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখা যাচ্ছে। পুরসভা তো সরকারি জায়গা। প্রশাসনের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আদর্শ আচরণ বিধি পরিদর্শক দলকে পুরসভায় পাঠিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেব।’’
যদিও ছবি রাখার স্বপক্ষে পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন মহাপ্রসাদবাবুও। এ দিন তিনি নিজের চেম্বারে বসে দাবি করেন, “সরকারি বিধি কী আছে জানি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার আদর্শ। তাই তাঁর ছবি মাথার উপর রেখেছি।” তাঁর চেম্বারের অন্য দেওয়ালে টাঙানো মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি দেখিয়ে মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ওঁরাও তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাহলে কি তাঁদের ছবিও নামিয়ে দিতে হবে?”
মহাপ্রসাদবাবুর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পাল্ট সওয়াল তুলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “মহাত্মা গাঁধী বা নেতাজিকে মানুষ মনীষীর চোখে দেখেন। তাঁদের ছবির সঙ্গে এক রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেত্রীকে গুলিয়ে দেওয়া যায় কী করে?’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা সাফ জানান, যাঁদের ছবি রাখলে কোনও রাজনৈতিক দল প্রচার পাবে, ভোট ঘোষণা হলে সরকারি জায়গায় তাঁদের ছবি রাখা নিষেধ। আবার যিনি বর্তমানে সক্রিয় ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁর ছবি কোনও ভাবেই রাখা যায় না। যদিও পুরসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি তৃণমূলের প্রচারের জন্য রাখা হয়নি বলেই দাবি করেছেন মহাপ্রসাদবাবু। এ নিয়ে তাঁর যুক্তি, “ছবির আশপাশে কোথাও তৃণমূলের প্রচারে কোনও কথা লেখা নেই। তাহলে বাধা কোথায়?”
বাঁকুড়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, ‘‘সরকারি অফিসের ভিতরে এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখা চলে কি না, আমার জানা নেই। তবে, প্রশাসন যা বলবে, তা মেনে নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy