Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নেশায় বুঁদ শিল্পাঞ্চলের বহু তরুণ

এক রাতে হস্টেলের ছাদে পার্টি চলছে। দেদার নেশার আয়োজন। সেখানেই প্রথম বার গাঁজায় টান দেন সুহৃদ। সেই শুরু।

এমন রঙিন ট্যাবলেটই নেশার উপকরণ। —ফাইল চিত্র।

এমন রঙিন ট্যাবলেটই নেশার উপকরণ। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন সুহৃদ দে (নাম পরিবর্তিত)। কলকাতা লাগোয়া এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।

এক রাতে হস্টেলের ছাদে পার্টি চলছে। দেদার নেশার আয়োজন। সেখানেই প্রথম বার গাঁজায় টান দেন সুহৃদ। সেই শুরু। তার পর থেকে ক্রমেই নেশার জালে আটকে পড়েন সুহৃদ। গাঁজা থেকে ধরেন ব্রাউন সুগার। যার ফলে একটা-দুটো নয়, তিনটে সিমেস্টারে পরীক্ষা দিতে পারেনননি তিনি। শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানান তাঁর পরিবারকে। সুহৃদ বাবার কাছে স্বীকার করেন, চাইলেও তিনি নেশা থেকে বেরোতে পারছেন না। শেষে টানা সাত মাস এক নেশামুক্তি কেন্দ্রে কাটান তিনি। সেখান থেকেই দেন একটি সিমেস্টারের পরীক্ষা। এখন আর হস্টেলে থাকেন না সুহৃদ। ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের ভলান্টিয়ার সুহৃদ পাশেই একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকেন।

সুহৃদের ঘটনা একটি উদাহরণ মাত্র। পুলিশ এবং বিভিন্ন নেশামুক্তি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুর শিল্পা়ঞ্চলে যুব সমাজের একটি বড় অংশই বিভিন্ন মাদকের নেশায় আচ্ছন্ন। এঁদের একটি বড় অংশই পড়ুয়া। একটা ফোন করলেই চরস, গাঁজা, হেরোইন পৌঁছে এঁদের কাছে।

সুহৃদ জানালেন, তাঁদের ব্রাউন সুগার সংগ্রহের কাহিনি আরও চমকপ্রদ। ফোনে ‘অর্ডার’ দেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেলের পিছন দিকের পাঁচিলের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হত। ও পার থেকে শিসের শব্দ এলে এ পার থেকে কাগজে টাকা মুড়ে ছুড়ে দেওয়া হত। তার পরেই এ পারে উড়ে আসত একটা প্যাকেট। তাতেই থাকত পছন্দের মাদক। এই ঘটনা যেন
‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবির প্রথম দৃশ্যটির কথা মনে করিয়ে‌ দেয়। সুহৃদ বললেন, ‘‘হয়তো এখনও এমনটাই হয়। আমি জানি না।’’

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা জানান, হালিশহর, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল, টিটাগড়-সহ বিভিন্ন রেল স্টেশনের পাশে রয়েছে হরেক রকমের নেশার ঠেক। সন্ধ্যা বাড়লেই সেই সমস্ত ঠেকে বাইক-সাইকেলের ভিড় বাড়ে। হাত বদলায় প্যাকেট-পুরিয়া। যাঁরা ঠেকে আসেন না, তাঁদের জন্যও রয়েছে হোম ডেলিভারি। এক ফোনেই তা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট ঠিকানায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের বেশ কিছু পানশালাতেও মাদক পাওয়া যায়।

এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, ‘‘সমাজের একাংশের কাছে গাঁজা-চরস-হেরোইন এখন ভাত-ডালের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস হয়ে গিয়েছে।’’

তা হলে পুলিশ কী করছে? এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ অপরাধ ঠেকানোর অনেক পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু এ রকম সামাজিক অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সমন্বয়টা খুব জরুরি।’’ কিছু দিন আগেই অবশ্য জগদ্দলে পুলিশ হেরোইন পাচারকারী দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘মাদক সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তাই আমার এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE