Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পৃথক পথের সারথি কারা, প্রশ্ন সিপিএমে

সেই ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দলের কেন্দ্রীয় কমিটি খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই প্রকাশ কারাটদের রাজনীতির প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছে এ রাজ্যের সিপিএমের একাংশ।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং গৌতম দেব।—ফাইল চিত্র।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং গৌতম দেব।—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

চোখে ঠুলি বেঁধে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বেছে দেওয়া রাস্তায় দৌড়ে বেড়ানো ছেড়ে এ বার আলাদা পথে রথ ছোটাতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু নতুন রথ হলে তার সারথি কারা হবেন, সেই প্রশ্ন চিন্তায় ফেলছে বঙ্গ সিপিএমের বিভাজনপন্থীদের!

সেই ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দলের কেন্দ্রীয় কমিটি খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই প্রকাশ কারাটদের রাজনীতির প্রতি ক্ষোভ পুষে রেখেছে এ রাজ্যের সিপিএমের একাংশ। তার পরে ইউপিএ-১ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের জেরে রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট এবং তার ধাক্কায় রাজ্যে বামফ্রন্টের ক্ষমতা হারানো, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পত্রপাঠ বহিষ্কার সেই ক্ষোভে ইন্ধন জুগিয়েছিল। এ বার সীতারাম ইয়েচুরিকে ফের রাজ্যসভায় পাঠানোর বঙ্গীয় প্রস্তাব কারাটদের সংখ্যার জোরে নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে বাংলার স্বার্থ মাথায় রেখে আলাদা পথের দাবি উঠেছে সিপিএমের অন্দরে। রাজ্য কমিটির বৈঠকেও এই মর্মে সওয়াল করেছেন দুই ২৪ পরগনার মৃণাল চক্রবর্তী, রাহুল ঘোষ, নেপালদেব ভট্টাচার্যেরা।

সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, শুধু ইয়েচুরিকে সাংসদ করা হয়নি বলেই কিছু নেতা আলাদা হয়ে যেতে চাইছেন— বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। পরিস্থিতি আসলে ঘোরালো হতে শুরু করেছে গত বছর থেকেই। বিধানসভা ভোটে কারাটদের আপত্তি মোকাবিলা করেই কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করেছে আলিমুদ্দিন। সেই সমঝোতা ভোটে সফল না হওয়ার পরে পলিটব্যুরো ভুল শোধরাতে নোট দিয়েছে। রাজ্য কমিটি তাকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা সওয়াল করে বলেছে, তারা ঠিকই করেছে! শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান মেনে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব রাখার কথা আলিমুদ্দিনকে বলতে হয়েছে ঠিকই। তবে সেটাও ‘ইতি গজ’র ভঙ্গিতে! এ কে জি ভবনের সঙ্গে আলিমুদ্দিনের সম্পর্কের এই ফাটলই এখন এগিয়ে গিয়েছে পৃথক পথের দাবি পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: কমিশন কই, ক্ষুব্ধ বিরোধীরা

এমন পরিস্থিতি সিপিএমে অতীতে কখনও হয়নি। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ১৯৬৪ সালের বিভাজন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কেরলের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক বাস্তবের ফারাকের জন্য সিপিএমের মধ্যে দুই শিবিরের ভিন্ন মত ছিলই। কিন্তু বারবার কেরল শিবির বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবস্থানের জেরে নিজেদের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে বলে একটি রাজ্যের প্রেক্ষিতে পৃথক পথের ভাবনা সিপিএমে অভিনব।

কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সলতে পাকাতে গিয়ে। পৃথক পথ বেছে নিলেও কারা হবেন কাণ্ডারী? মূলত জ্যোতিবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত নেতারাই এখন এমন ভাবনার নেপথ্যে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বয়স হয়েছে। উপদেষ্টা ছাড়া আর কোনও ভূমিকায় তাঁকে পাওয়া সম্ভব নয়। ভাবনাচিন্তায় অসম্ভব উদ্যমী হলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব শরীরের অস্থিরতাতেই কাবু। কারাটদের নীতি বাংলার জন্য ঠিক হচ্ছে না, এই যুক্তি দলের অন্দরে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও রাজ্যের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মুখ কারা হবেন— এই প্রশ্ন থাকছেই।

নতুন পথের দাবিদার এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত এই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে বাংলার সিপিএমের বিরাট অংশই সেখানে চলে আসবে। তখন সেটাই হবে আসল পার্টি। আলাদা করে কোনও মুখের প্রয়োজন পড়বে না।’’ কিন্তু সেখানেও একই প্রশ্ন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অন্তরাল ভেঙে আর বেরোবেন না। সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের নিয়েই কি গ্রহণযোগ্য বিকল্প সম্ভব?

সংশয় রয়ে যাচ্ছে পথের পথিকদের নিয়েই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE