Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মেডিক্যালের অন্দরমহলেও ডাক্তার অমিল

বুকে ব্যথা নিয়ে রবিবার দুপুরে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন ফুলমালা হালদার। দু’দিন তাঁকে নিয়মিত দেখে গিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই ছবিটা বদলে যায়।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন।—ছবি রয়টার্স।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন।—ছবি রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

খাদ্যনালিতে ফুটো ছিল ষাট বছরের হারান মণ্ডলের। নিউটাউনের এই বাসিন্দাকে শনিবার রাতে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সকালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এ দিন মারা গেলেন তিনি। তাঁর মেয়ে সুলেখা মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘অস্ত্রোপচারের পর থেকে চিকিৎসা হয়নি বাবার। বিনা চিকিৎসায় চলে গেলেন।’’

বুকে ব্যথা নিয়ে রবিবার দুপুরে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন ফুলমালা হালদার। দু’দিন তাঁকে নিয়মিত দেখে গিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই ছবিটা বদলে যায়। তাঁর ছেলে গোকুল বলছেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। সিনিয়রদেরও ওয়ার্ডে বিশেষ দেখা যায়নি।’’ শেষ অবধি শুক্রবার সকালে মারা গেলেন পঞ্চান্ন বছরের ফুলমালা। দেহ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলে-মেয়ে দু’জনই।

আন্দোলনের উৎসস্থল এনআরএসের অন্দরমহলে তার ছাপ পড়েছে বলে দাবি করছেন রোগীর আত্মীয়েরা। হারানবাবুর মেয়ে সুলেখা যেমন ‘বিনা চিকিৎসার’ অভিযোগই এনেছেন। কলকাতার অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকেও একই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা সাধ্য মতো পরিষেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের আর একটি অংশের বক্তব্য, সোমবার থেকে রোগী কার্যত ভর্তিই হয়নি। ফলে অসুবিধা কিছু হচ্ছে না।

শুধু মালদহ মেডিক্যাল বা কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিই নয়, অন্য জেলাতেও প্রায় একই ছবি। বাঁকুড়া মেডিক্যালের ওয়ার্ডগুলিতে মঙ্গলবার থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের দেখা নেই। শুক্রবার ভিতরে গিয়ে দেখা গেল, কোনও ওয়ার্ডে এক জন, কোথাও দু’জন সিনিয়র ডাক্তার বসে। তাঁদেরই এক জন নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে বললেন, “এত রোগীকে একার পক্ষে সমান ভাবে নজর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালে কমতে শুরু করেছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি যে চলছে, সেটা সকলেই জানেন। তাই অনেকেই আর রোগী নিয়ে এখানে আসছেন না।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে তিন দিন ধরে বহির্বিভাগ বন্ধ। তবে হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা চালু রয়েছে।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা পরিস্থিতি এ দিন তুলনায় অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। রোগীদের চিকিৎসা করেন সিনিয়র ডাক্তারেরাই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেও সিনিয়রেরা কিছু ক্ষণ বাইরে বসে চিকিৎসা করেন। অন্দরমহলেও রোগীদের দেখেছেন তাঁরা।

রাজ্য জুড়ে তুলনায় জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি ভাল। শিলিগুড়ি হাসপাতালে যেমন প্রতিবাদের পাশাপাশি পুরোদস্তুর কাজ হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে কালনা ও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল, আসানসোল জেলা হাসপাতাল, দুর্গাপুর ও খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, ঘাটাল ও ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বা বারাসত জেলা হাসপাতালে। প্রতিবাদ জানাতে কোথাও চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ পরেছেন, কোথাও মাথায় বেঁধেছেন রক্তাক্ত ফেট্টি। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি।

তবে সিনিয়র চিকিৎসকেরা একটি বিষয় বারবার উল্লেখ করেছেন। তা হল, জুনিয়রেরা না থাকায় ডাক্তারের সংখ্যা কমে যাওয়া। তাতে চাপ এতটাই বেড়েছে যে, দিনে একবারের বেশি অন্দরমহলে ‘রাউন্ড’ দেওয়ার উপায় নেই। তার পরেই এসে জরুরি বিভাগে রোগী দেখতে বসতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Hospital Doctor's Strike Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE