Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেদার ফাটল শব্দবাজি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আমলই দিল না রাজ্য

বুধবার, দেওয়ালির দিন সন্ধ্যা ৭টায় দিল্লির আনন্দ বিহারে বসানো যন্ত্রে বায়ুদূষণ সূচক ছিল ৩২৯। তাকে ছাপিয়ে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের যন্ত্রের সূচক ৩৪৬ এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রের সূচক ৩৫৪!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

শব্দ পুরোপুরি জব্দ তো হলই না। আতসবাজি নিয়েও শীর্ষ আদালতের নির্দেশকে কার্যত আমল দিল না বাংলা। প্রশাসনের ‘আর্জি’ কানে না তুলেই কালীপুজো আর দেওয়ালিতে নির্দিষ্ট দু’ঘণ্টার বাইরে দেদার আতসবাজি ফেটেছে কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে। মঙ্গলবার ও বুধবার রাতের বায়ুদূষণ সূচকই তার প্রমাণ বলে পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন।

বুধবার, দেওয়ালির দিন সন্ধ্যা ৭টায় দিল্লির আনন্দ বিহারে বসানো যন্ত্রে বায়ুদূষণ সূচক ছিল ৩২৯। তাকে ছাপিয়ে কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের যন্ত্রের সূচক ৩৪৬ এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রের সূচক ৩৫৪! ‘সহোদর’ হাওড়ায় আরও কিছুটা এগিয়ে সূচক থেমেছে ৩৮২-তে। শিলিগুড়ি এবং আসানসোলের বায়ুদূষণের সূচকও ছিল যথাক্রমে ২৮০ এবং ২০৩। এই সূচক ২০০ পেরনো মানেই ‘খারাপ’।

পরিবেশবিদদের মতে, মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে যে ভাবে হাওয়ায় বিষের মাত্রা বে়ড়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা বেশির ভাগ জায়গায় মানা হয়নি। নাগরিকদের অভিজ্ঞতা, মঙ্গলবারই তোয়াক্কা করা হয়নি নিষেধাজ্ঞার। বুধবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বিকেল ফুরোতেই শুরু হয় বাজি পোড়ানো। শব্দবাজিও। রাত যত বাড়ে ততই বাজির দাপট বাড়ে ভবানীপুর, নেতাজি নগর, ঢাকুরিয়া, হরিদেবপুর, দমদমের মতো এলাকায়।

গড়িয়াহাটে এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের সামনেই শব্দবাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বহুতল আবাসনেও শব্দবাজির দাপট ছিল মারাত্মক। মঙ্গলবার রাতে ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলেন পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধিরা। তাঁরা শুধু শব্দের তাণ্ডব শোনেননি, বাজি থেকে তৈরি ধোঁয়াশাও দেখেছেন। এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘শিশুদের হাসপাতালেই এমন দূষণ!’’ মঙ্গল ও বুধবার শহরের নানা প্রান্তে রাস্তার উপরে গাঢ় ধোঁয়াশা জমে যায়।

দু’দিন শব্দবাজি ফাটানোয় কিছু ধরপাক়ড় করেছে পুলিশ। যদিও সব ক্ষেত্রে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলেই অভিযোগ। যেমন, বুধবার রাতে বালিগঞ্জ এলাকায় শব্দবাজি ও ডিজের দাপট নিয়ে পুলিশে নালিশ করা সত্ত্বেও তারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করে বলে সংবাদপত্র অফিসে ফোন করে জানান কেউ কেউ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার খবর এসেছে বিরাটির কিছু এলাকা থেকেও। সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতিতেই মারাত্মক দূষণ হয়েছে। এই সব তথ্য নিয়ে আমরা শীর্ষ আদালতে যাব।’’

আক্ষেপ করছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রও। তিনি বলেন, ‘‘আতসবাজি নিষিদ্ধ নয়। তাই এর ধোঁয়ার মারাত্মক ক্ষতি মানুষ যত দিন না বুঝবেন, তত দিন এই দূষণ রোখা মুশকিল।’’ তবে তিনি এ দিনের বাড়তি দূষণের পিছনে আবহাওয়াকেও দায়ী করে বলছেন, এ দিন আকাশ মেঘলা ছিল। হাওয়া কার্যত বইছিল না। তাই বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা চাপ বেঁধে ছিল।

আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে কালীপ্রতিমার বিসর্জন শুরু। তাতেও দেদার বাজি ফাটবে বলে মনে করা হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের দাবি, আদালত বিসর্জনের ক্ষেত্রে আতসবাজি পোড়ানো নিয়ে বিধিনিষেধ দেয়নি। তাই দূষণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। পর্ষদের ওই সূত্রের বক্তব্য, দেওয়ালির সাত দিন আগে ও পরের বায়ুদূষণের তথ্য শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হবে। বিসর্জনেও যাতে বিধিনিষেধ জারি করা হয় সেই আর্জি জানাবে পর্ষদ। ’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE