Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে কোনও অশান্তিই হয়নি! দাবি মমতার

ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে, গ্রামেগঞ্জে তাদের নেতা-কর্মীদের শাসাচ্ছে শাসক দল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বাংলায় অশান্তি বলতে গেলে কিছুই হয়নি— বুধবার দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে, গ্রামেগঞ্জে তাদের নেতা-কর্মীদের শাসাচ্ছে শাসক দল। বিডিও, এসডিও এমনকি ডিএম দফতরের চত্বরেও বিরোধীদের উপরে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়েছে বলে অভিযোগ। তার জেরে রক্ত ঝরেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, সন্ত্রাসের আবহ তৈরি হয়েছে গোটা রাজ্যে।

এ দিন সেই সব অভিযোগ খারিজ করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘৫৮ হাজার বুথ। মাত্র সাতটা ঘটনা ঘটেছে।’’ মহম্মদবাজার, নলহাটি, সন্দেশখালি, শাসন, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং উত্তর দিনাজপুর— এই সাত জায়গার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। দাবি করেছেন, মহম্মদবাজারে বিজেপি ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে হামলা চালিয়েছিল, নলহাটিতে সংবাদমাধ্যম সাজিয়ে ছবি তুলে প্রচার করেছে, শাসনেও বহিরাগতরা তৃণমূলের উপর হামলা করেছে। উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে আক্রমণ করেছে বিজেপি। আর পুরুলিয়ায় আহত সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়াকে তৃণমূল নেতারা ফুল দিয়ে আরোগ্য কামনা করে এসেছেন।

বিরোধীদের বক্তব্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করার অভিযোগ এনে সংবাদমাধ্যমকেও এ দিন কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিকে, পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবির ফারাক বিস্তর। সেই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৯২টি ভোট-সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৩ জন। আহত ৯৪। পুলিশ ১৩টি মামলা রুজু করে গ্রেফতার করেছে ৪৫ জনকে। রাজ্য পুলিশ অবশ্য জেলাওয়াড়ি হিংসার কোনও তথ্য এখনও পেশ করেনি।

বিরোধীরা বলছেন, মোট বুথ সংখ্যার নিরিখে ৯২টি সংঘর্ষও হয়তো তেমন কিছু নয়। কিন্তু বাস্তব হল, রাজ্য জুড়ে শাসক দল নীরব সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করেছে। তার জেরে প্রাণ বাঁচাতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ভাবেনইনি তাঁদের বহু নেতা-কর্মী। আজ বিরোধীরা যা বলছেন, বাম আমলে ঠিক সেটাই শোনা যেত তৃণমূলের মুখে। আর তার জবাবে তখন বাম নেতারা যা বলতেন, কার্যত এ দিন তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘সংগঠন না থাকলে সব সিটে প্রার্থী দেওয়া মুশকিল।... (বিরোধীরা) কয়েকটি সিটে নমিনেশন দিতে পারেনি, কারণ লোক ছিল না। তাদের রান্না তো আমি গিয়ে করে দিয়ে আসব না!’’

এ প্রসঙ্গে ২০০৩ এবং ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটের কথা তুলেছেন মমতা। জানিয়েছেন, প্রথম বার ৩০ হাজার, পরের বার ৩৫ হাজার আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল তৃণমূল। যা শুনে বিরোধীদের মন্তব্য, তখন তো সিপিএমের সন্ত্রাসের জন্যই প্রার্থী দাঁড় করানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করতেন মমতা। সংগঠনের অভাবের কথা তো বলেননি। ‘‘দিদিমণি কি পুরনো সেই দিনের কথা ভুলে গেলেন!’’ কটাক্ষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের গতিপ্রকৃতি কোন পথে যাবে, হাইকোর্টে আজ নজর সব পক্ষের

সন্ত্রাস নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ ওড়াতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘যদি মনোনয়নে বাধা দেওয়া হত, তা হলে বিরোধী ও নির্দল মিলিয়ে ৯০ হাজার প্রার্থী হল কী করে?’’ যার জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘৫৮ হাজার বুথে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস প্রার্থী দিলে তো ১ লক্ষ ৭৪ হাজার মনোনয়ন জমা পড়ার কথা। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকেই প্রমাণ হয় মনোনয়নে বাধা ছিল। হামলাও হয়েছে।’’ পাশাপাশি নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, অধিকাংশ আসন বিনাযুদ্ধে জিতে যাওয়াটা খারাপ দেখায় বলেই তৃণমূল নিজেরাই বেশ কিছু আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE