Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এই গ্রামে প্রচারে নেই শাসক দল

শুধু তা-ই নয়, জোর করে ওই গ্রামে তারা কিছু করতেও চাইছে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৭:২৪
Share: Save:

বিয়াল্লিশ আসনের জেলা পরিষদ ভোটের আগেই বিনা লড়াইয়ে জিতেছে শাসকদল। ভোট হচ্ছে না জেলার ১৯টির মধ্যে ১৩টি পঞ্চায়েত সমিতিতেও। সেই বীরভূমেরই প্রত্যন্ত গ্রাম টাংশুলিতে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখা দূর অস্ত্, প্রচারে পা-ই রাখতে পারেনি শাসকদল। শুধু তা-ই নয়, জোর করে ওই গ্রামে তারা কিছু করতেও চাইছে না।

মহম্মদবাজার ব্লকের চরিচা পঞ্চায়েতের টাংশুলিতে গিয়ে দেখা গেল, ১৫০০ ভোটার ছুঁইছুঁই গ্রামে নেই কোনও শাসকদলের পতাকা, ফেস্টুন। আদিবাসীদের নিকোনো দেওয়াল জুড়ে পদ্মফুলের প্রচার।

কেন দলের এমন হাল, তা জানালেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের বড় অংশের মানুষের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। চরিচা পঞ্চায়েতের এই আসন থেকে তাই ‘ফোকাস’ সরিয়ে রেখেছি।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য বলছেন, ‘‘একেবারেই বাজে কথা। ব্যাপক হারে পোস্টার লাগানো হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কিছু কম আছে। সেটাও তাপসকে (ব্লক সভাপতি) বেশি করে দিতে বলেছি।’’ ঘটনাচক্রে বাসস্ট্যান্ড টাংশুলি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে। তা হলে? আর জবাব মেলেনি!

৭ এপ্রিল এই মহম্মদবাজারেই মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক এবং পুলিশের সঙ্গে ‘খণ্ডযুদ্ধ’ হয় বিরোধীদের। সশস্ত্র ওই সংঘর্ষে ঝরেছিল রক্ত। তার পরেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি-বাম, কংগ্রেস। শাসকদলের নেতারাও মানছেন, সে দিনের ‘লড়াই’য়ে টাংশুলির বড় ভূমিকা ছিল। মিছিলে ওই এলাকার বহু আদিবাসীও এসেছিলেন। টাংশুলিতে তৃণমূল প্রার্থী শিশির ঘোষের বিপক্ষে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অমল মুর্মু। আর কোনও প্রার্থী নেই।

প্রচার করা যাচ্ছে না কেন?

বাম-বিজেপি থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, সকলেরই উত্তর— শাসকদলের নিচুতলার নেতাদের বিরুদ্ধে জমাটি ক্ষোভ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত ঘোষের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদিবাসীরা টাংশুলির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ূরাক্ষীর বালিঘাটের শ্রমিকদের কাজে লাগানো নিয়ে ‘দাদাগিরি’ এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘এই জয়ন্তই দায়ী।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস সিংহের কথায়, ‘‘জয়ন্তের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ আগে বুঝিনি। তাই ওকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ আর জয়ন্ত বলছেন, ‘‘কিছু হলে প্রথমেই নিচুতলাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু, ঠিক তদন্ত হলেই প্রমাণিত হবে
আমি নির্দোষ।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এর পরেও টাংশুলিতে প্রচারের চেষ্টা হয়েছিল। আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে বসে মীমাংসার চেষ্টাও হয়েছিল। প্রস্তাব ছিল, আদিবাসী প্রার্থীকে ভোটে জিতিয়ে তৃণমূলে নিয়ে আসা হবে। শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। যদিও এ নিয়ে মুখ খোলেননি টাংশুলির বাসিন্দা, বীরভূম আদিবাসী গাঁওতার নেতা রবীন সরেন। এই আবহে শাসকদলও শক্তি প্রয়োগের রাস্তায় হাঁটতে রাজি নয়। তাপসবাবু বলছেন, ‘‘জোর করে কিছু করতে গিয়ে সমস্যা বাড়ুক, চাইছি না।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2018 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE