Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

‘পিছন থেকে পুলিশ সরলে লোকে পিটিয়ে মেরে দেবে কেষ্টকে’

তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে যায় তাঁর নামটা বার বার। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত নন তাতে।

আনন্দবাজার ডিজিটালের সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ বুঝিয়ে দিলেন, যে চালে এগোচ্ছেন, সেই চালই বহাল রাখবেন।

আনন্দবাজার ডিজিটালের সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে দিলীপ ঘোষ বুঝিয়ে দিলেন, যে চালে এগোচ্ছেন, সেই চালই বহাল রাখবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১১:৩৫
Share: Save:

রাখঢাক? শব্দটা সম্ভবত তাঁর অভিধানেই নেই। জনসভায় বা কর্মীসভায় দাঁড়িয়ে যে সব মন্তব্য করেন, তাতে তাঁর দল হইহই করে উজ্জীবিত হয় বটে। কিন্তু তুমুল বিতর্কেও জড়িয়ে যায় তাঁর নামটা বার বার। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত নন তাতে। আনন্দবাজার ডিজিটালের সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারেও বুঝিয়ে দিলেন, যে চালে এগোচ্ছেন, সেই চালই বহাল রাখবেন। সঙ্গে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘‘পঞ্চায়েতে যে ক’টা সিটে প্রার্থী দিতে পেরেছি, সেগুলোতে লড়িয়েই এদের (তৃণমূলের) দম বন্ধ করে দেব।’’

বিজেপি-র পথের কাঁটা হওয়ার চেষ্টা যাঁরা করবেন, তাঁদের পরিবার-পরিজনকে অনাথ হতে হবে। সম্প্রতি বনগাঁর এক জনসভায় এমনই হুমকি দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি। সেই মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক হয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এফআইআর-ও করেন দিলীপের বিরুদ্ধে।

তাঁর মন্তব্য ঘিরে এত বিতর্ক সত্ত্বেও দিলীপ ঘোষ কিন্তু অবস্থানে অনড়। যা বলেছেন, সেই কথা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বুঝিয়ে দিলেন সাফ সাফ। যিনি যে ভাষা বোঝেন, তাঁর সঙ্গে সেই ভাষাতেই কথা বলতে হয় বলে মন্তব্য করলেন। সামনের দিনগুলোতেও যে এই মেজাজই বহাল থাকবে, তা-ও বলে দিলেন। দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘যে শাস্ত্রের ভাষা বোঝে, তার সঙ্গে শাস্ত্র নিয়ে কথা বলি। যে শস্ত্রের ভাষা বোঝে, তার সঙ্গে শস্ত্র নিয়ে।’’

আনন্দবাজারের মুখোমুখি দিলীপ ঘোষ:

হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সোমবার ফের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল। কিন্তু মনোনয়ন জমা নেওয়ার জন্য নির্ধারিত এই অতিরিক্ত দিনটিতে হিংসা আগের চেয়েও বেশি হয়েছে। বীরভূমে মৃত্যুও হয়েছে এক রাজনৈতিক কর্মীর। ফলে হিসেবটা আগের মতোই থেকে গিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদালত হস্তক্ষেপ করার আগে যে বিরাট সংখ্যক আসন বিরোধীশূন্য ছিল, দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া মিটে যাওয়ার পরেও প্রায় সেই সংখ্যক আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের।

আরও পড়ুন: দিলীপের নামে থানায় এফআইআর

দিলীপ ঘোষ কিন্তু তাতেও আত্মবিশ্বাসী। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কি ২০১৯-এর লোকসভার সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছেন? দিলীপ বললেন, ‘‘যা সিট আমরা দিয়েছি পঞ্চায়েতে, সেটা লড়িয়ে এদের দম বন্ধ করে দেব। পার্লামেন্ট তো এখনও অনেক দূর। দিদির যে সব এমপি-রা দিল্লিতে গিয়ে নাচেন, তাঁদের কত জন কলকাতা থেকে দিল্লির টিকিট কেটে দিল্লি পৌঁছবেন, সেটা আমি দেখে নেব।’’

আরও পড়ুন: ধরতেই চায়নি, তাই কাউকে ধরেনি পুলিশ?

কিসের ভিত্তিতে এত প্রত্যয়? রাজ্যে বিজেপি-র ভোট হয়তো আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু কোনও নির্বাচনেই তো এখনও এ রাজ্যে তৃণমূলকে বিজেপি টেক্কা দিতে পারেনি। সন্ত্রাসের কারণেই হোক, বা অন্য কোনও মন্ত্রে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো বিজেপি বহু সংখ্যক আসনে প্রার্থীই দিতে পারল না। তার পরেও এমন চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের দিকে!

দিলীপ ঘোষ এ বার আরও চাঁছাছোলা। বললেন, ‘‘ছেড়ে দিন ৫৮ হাজার আসন। আমি ৩৮ হাজার প্রার্থী দিয়েছি। এদের অত্যাচারের মাঝে যদি ৩৮ হাজারের মধ্যে থেকে ৩০-৩২ বা ৩৫ হাজার প্রার্থীও টিকে যান, বাংলায় পরিবর্তনের শুরুটা হয়ে যাবে। তৃণমূল বুঝতে পারবে বিজেপি কী জিনিস?’’

কী জিনিস বিজেপি? দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘বিজেপি কী জিনিস সেটা তৃণমূলকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেব। ত্রিপুরায় সিপিএম টের পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ টের পেয়েছেন। এখানে তৃণমূলও হাড়ে হাড়ে বুঝে যাবে।’’

ভোটের বাজারে এই রকম গরম গরম মন্তব্য কাজে আসে ঠিকই। কিন্তু দায়বদ্ধতার কথাটা ভুললে চলবে কী ভাবে দিলীপবাবু? এতে হুমকির সুর স্পষ্ট নয় কি? রাজ্য বিজেপি-র সভাপতির কথায়, ‘‘যে যেমন বুঝবেন। আমি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে পারি না। যেটা দেখি, সেটাই বলি।।’’

রাজ্য বিজেপি-র সভাপতির নানা মন্তব্যে যে প্ররোচনার আঁচ পাওয়া যায়, তা কি কোথাও গিয়ে মিলে যায় বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতির কণ্ঠস্বরের সঙ্গে? দিলীপ ঘোষ নস্যাৎ করে দিলেন তুলনাটা। বললেন, ‘‘খুদা মেহেরবান তো গাধা পহেলওয়ান। ভগবানের আশীর্বাদ থাকলে গাধাও পালোয়ান হয়ে যায়। কালকে কেষ্টর পিছন থেকে পুলিশ সরে যাক, লোক রাস্তায় পিটিয়ে মেরে দেবে।’’ কণ্ঠস্বরে ভরপুর প্রত্যয় নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতির মন্তব্য, ‘‘পুলিশ পিছনে থাকলে অনেকেই ওই রকম বীরপুরুষ-মহাপুরুষ হয়। যখন সামনে পুলিশ থাকবে, দিলীপ ঘোষের মতো, তখন দেখব, কত দম আছে।’’

ভিডিয়ো: মৃণালকান্তি হালদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE