Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

লক আপে থেকেও কমিটিকে ওয়াকওভার দিলেন না আরাবুল

শুক্রবার আরাবুল বাহিনীর হাতে কমিটির এক সদস্যের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু এবং তারপর সেই রাতেই আরাবুল ইসলামের গ্রেফতারি দিয়ে এই নির্বাচনের যে হাই ভোল্টেজ কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় সোমবার।

পুলিশ বাহিনীর টহল। নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ বাহিনীর টহল। নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ২২:০৯
Share: Save:

সংঘর্ষ, বোমাবাজি, বুথ দখলের অভিযোগ, পুলিশের কাঁদানে গ্যাস— উত্তেজনার সব উপকরণই সোমবার মজুত ছিল ভাঙড়ে। তবে রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক হিংসার তুলনায় আরাবুল ইসলাম বনাম ‘জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’-র লড়াই ছিল কার্যত সাদামাটা।

শুক্রবার আরাবুল বাহিনীর হাতে কমিটির এক সদস্যের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু এবং তারপর সেই রাতেই আরাবুল ইসলামের গ্রেফতারি দিয়ে এই নির্বাচনের যে হাই ভোল্টেজ কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় সোমবার।

রবিবারই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, থানার চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলেও ভোটের ময়দানে কমিটিকে ওয়াকওভার দেবেন না আরাবুল। গোটা দিন ভাঙড় থানাকেই ক্যাম্প অফিস বানিয়ে, দলের সতীর্থদের ওপর ভরসা না করে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন তিনি। আরাবুল যে ভোটের মাঠে না থেকেও থাকবেন তা জমি রক্ষা কমিটিও বিলক্ষণ জানত। তাই ভোট শুরু হওয়ার আগেই মাঠের দখল নিতে ঝাঁপায় দু’পক্ষই।

সোমবার সাত সকালেই দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। মূল সংঘর্ষ বাধে আরাবুলের বাড়ি এলাকার উত্তর গাজিপুর জমাদারপুকুর প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনে। এই (৮৯/৯০)বুথ থেকেই গ্রামসভায় প্রার্থী আরাবুলের ছেলে হাকিবুল। ইট-বাঁশ-বোমা নিয়ে সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই কমবেশি ১৫ জন জখম হন। মাঝখানে আটকে পড়ে ভাঙচুর হয় সংবাদমাধ্যমের গাড়িও। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসানের অভিযোগ, “আরাবুলের লোকজন বুথ দখল করতে গেলে বাধা দেন আমাদের কর্মীরা। তখন তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকী, তিনজনকে অপহরণও করেছে আরাবুল বাহিনী। সেই খবর পেয়ে আমরা যেতেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়। পুলিশ এসে আরাবুলের লোকজনকে সাহায্য করে। তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে আমাদের ওপর লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।”

দেখুন ভিডিয়ো:

আরও পড়ুন:

হিংসার পূর্ণগ্রাসে পঞ্চায়েত ভোট! বাংলা জুড়ে নিহত অন্তত ১৪

বুথ সামলাতে গিয়ে বেধড়ক মার খেলেন পুলিশকর্মী

তৃণমূলের কর্মীদের পাল্টাদাবি, কমিটির লোকজন বুথ দখল করতে আসাতেই যত সমস্যা। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ওই দু’টি বুথই ভোটারশূন্য। একটি বুথে প্রিসাইডিং অফিসার পলাশ দাস অসুস্থ হয়ে বেঞ্চে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন।

উত্তর গাজিপুরের বুথের মধ্যে অচেতন প্রিসাইডিং অফিসার।

পোলিং অফিসারদের ব্যালটের কথা জিজ্ঞাসা করাতে অদ্ভুত শূ্ন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সকালের অশান্তির পর দিনভর কোনও ভোটারকে বুথে না দেখা গেলেও দিনের শেষে ওই বুথে ভোটদানের পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি।

উত্তরের মতো দক্ষিণ গাজিপুরের তিনটি বুথ নিয়েও কমিটি দিনভর ভোট লুঠের অভিযোগ তুলেছে। সেখানে অনন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যেই মিলল তাজাবোমা। এখানে ১০০ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী আহাদ আলি বক্স। পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী আরাবুল নিজে।

দক্ষিণ গাজিপুরের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে তাজা বোমা।

আহাদ আলির দাবি, কমিটির লোকজন বুথে বোমাবাজি করেছে। ওখানকার তিনটি বুথের কোথাও কোনও বিরোধী এজেন্টের দেখা পাওয়া গেল না। আহাদের কথায়, সবাই নাকি টিফিন করতে গিয়েছেন। যদিও দিনভর তাঁরা কেউ ‘টিফিন সেরে’ ফেরেননি। এখানেও ভোটদানের পরিমাণ ৮০শতাংশের কম নয়। আরাবুলের এই খাস তালুকে বুথ দখলের কমবেশি অভিযোগ থাকলেও কমিটির খাস এলাকা হিসেবে পরিচিত মাছিভাঙা, খামারআইট, উড়িয়াপাড়া, মিদ্দেপাড়ার পাঁচটি আসনের ছ’টি বুথে দিনভর ছিল ‘শান্তি’-র আবহ। দুপুরে একবার পুলিশ রুটিন টহলের জন্য মাছিভাঙাতে ঢুকতে গেলে, কমিটির অনুমতি নিয়ে তবেই জনতার ব্যারিকেড অতিক্রম করে গ্রামে ঢুকতে পেরেছে। সেখানে আরাবুল বাহিনী যে পৌঁছতে পারেনি তা বলাই বাহুল্য। এই ছ’টি বুথেও গড়ে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি।

মাছিভাঙায় ঢুকতে গেলে পুলিশকে বাধা কমিটির।

কমিটি ও আরাবুল, দুই পক্ষই সতর্ক ভাবে বিপক্ষকে মেপে খেলে গেল। অতিরিক্ত ঝুঁকি দিনভর কোনও পক্ষই না নেওয়ায় ধীরে ধীরে উত্তেজনার পারদ নামতে থাকে। অন্তত পাঁচটি আসন জেতার ব্যাপারেকমিটি যখন অনেকটাই আশাবাদী তখন আরাবুল আবার প্রমাণ করে দিলেন, কেন তাঁকে সবাই ভোট ম্যানেজার হিসাবে মানে। তাঁর পঞ্চায়েত সমিতি আসনের বেশিরভাগ ভোটটাই রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ গাজিপুরের চারটি বুথ মিলিয়ে। তার বাইরে থেকে যায় খালি মাছিভাঙার (৮৩,৮৪) দু’টি বুথ। আর ওই গাজিপুরের চারটি বুথ নিয়েই কমিটির সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। যার মধ্যে আরাবুলের ছেলে হাকিবুলের বুথও রয়েছে। তাই ‘ম্যাচ’শেষে কমিটিও মেনে নিল, জিততে না পারলেও নিজের গোল বাঁচিয়ে নিয়েছে আরাবুল।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE