Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আরাবুলের জয়, খুশি নয় নিহতের পরিবার

যখন গ্রামে জয়ের আনন্দে আবীর মেখে মিছিল হচ্ছে, তখন ওই গ্রামেই নিহত হাফিজুরের পরিবারে শোকের ছায়া। বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন নিহত হাফিজুরের স্ত্রী সাবিরা বিবি ও অন্যরা।

হাফিজুরের পরিবার। ছবি: সামসুল হুদা

হাফিজুরের পরিবার। ছবি: সামসুল হুদা

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

আরাবুলের জয়ে খুশি নন নিহত হাফিজুর রহমান মোল্লার পরিবার। বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পরেই চোখে জল নিয়ে হাফিজুরের দাদা আইজুল মোল্লা বলেন, ‘‘যারা আমার ভাইকে খুন করল, সেই আরাবুল ও তার ছেলে হাকিমুল হারলে ভাল লাগত।’’

অভিযোগ, গত ১১ মে নতুনহাটে আরাবুল বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান হাফিজুর। হাইকোটের নির্দেশে পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতর ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে ও একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ‘হোয়াটস্ অ্যাপে’ মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছিলেন জমি কমিটি সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। ওই ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে ৫টি আসনে জয় লাভ করেন নির্দল প্রার্থীরা। ৩টি আসনে জয়ী তৃণমূল। যদিও সমিতির আসনটিতে নির্দল প্রার্থীকে হারিয়ে নিজের আসন ধরে রাখেন আরাবুল ইসলাম। তাঁর এই জয় মেনে নিতে পারেননি নিহতের পরিবার।

কিন্তু জমি কমিটির কিছু সদস্য ভোটে জেতায় খুশি গ্রামীবাসী। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোট গণনার পর মাছিভাঙা, খামারাইট গ্রামে ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মাথা তথা নকশাল নেতা অলীক চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন নির্দলের জয়ী সদস্যরা। নির্দল প্রার্থীরা তাঁদের দাদা অলীকের আশীর্বাদ নেন। কয়েকজন অলীকের কাছে আবদারও করে বলেন, ‘‘দাদা একবার মাছিভাঙা গ্রামে চলুন। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।’’ গ্রামের মেঠোপথ ধরে অলীক তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে খামারইট থেকে মাছিভাঙা গ্রামে যান। সেখানে জয়ের আবির খেলে মিছিলও বের করেন তাঁরা।

যখন গ্রামে জয়ের আনন্দে আবীর মেখে মিছিল হচ্ছে, তখন ওই গ্রামেই নিহত হাফিজুরের পরিবারে শোকের ছায়া। বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন নিহত হাফিজুরের স্ত্রী সাবিরা বিবি ও অন্যরা।

হাফিজুরের দাদা আইজুল বলেন, ‘‘এই জয় নিঃসন্দেহে আনন্দের। কিন্তু আরাবুল হারলে আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পেত।’’ আরাবুলরা গ্রামের মানুষের জন্য কোনও দিন কিছু করেনি বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। তাঁদের দাবি, ‘‘সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছে। নিজেদের শখ পূরণ করেছে। গুন্ডা পুষেছে।’’

চোখের জল মুছে হাফিজুরের স্ত্রী সাবিরা বিবি বলেন, ‘‘জমি কমিটির এই জয় ভাল লাগছে। কিন্তু আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তারা এখনও বহাল তবিয়েতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন তাদের ধরছে না। আরাবুল ও তার ছেলে হাকিমুলের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।’’

পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিতে খুন হয়েছিলেন মফিজুল খান। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর ভাই এন্তাজুল হাকিমুলের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোটের দিন তিনি আক্রান্তও হন। ভোটে জিততে পারেননি। এ দিন তাঁর বাড়িতে কেউ ছিলেন না। কলকাতায় চিকিৎসার জন্যে গিয়েছেন। ছিলেন শুধু নিহতের বাবা শুকুর আলি। তিনি বলেন, ‘‘হাকিমুল কোনও ভাবেই জিততে পারে না। পুলিশ ও তাদের বাহিনী ভোট লুঠ করেছে। যদি আবার নিরপেক্ষ ভাবে ভোট হয়, তা হলে হাকিমুল জিততে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE