Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
State News

বন্দুকবাজরা তুলে নিয়ে গেল ব্যালটবাক্স, ছাড় পেলেন না প্রিসাইডিং অফিসারও

রতুয়ার সাতটি-সহ হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি বুথে এ দিন বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি বাদে সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসক দল। নির্বাচনের দিন রতুয়ার একাধিক বুথে গুলি ছুড়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে ব্যালটবাক্স লুঠ করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

বন্দুক কাঁধে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি চলল দিনভর। —নিজস্ব চিত্র।

বন্দুক কাঁধে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি চলল দিনভর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ১৮:৪৬
Share: Save:

পুনর্নির্বাচনেও ছবিটা পাল্টাল না মালদহের রতুয়ায়। বন্দুক কাঁধে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি, বোমাবাজি, প্রতিরোধ করায় ভোটারদের মারধর করে লুঠপাট। তুলে নিয়ে যাওয়া হল ব্যালটবাক্স। অস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হল প্রিসাইডিং অফিসারকে। বুধবারও উত্তেজনা ছড়াল রতুয়ার একাধিক বুথে। প্রশাসনকে জানিয়েও ফল না হওয়ায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নুর। যদিও রতুয়ার কোথাও সন্ত্রাস বা ছাপ্পা ভোট হয়নি বলে দাবি করেছে তৃণমূল।

রতুয়ার সাতটি-সহ হরিশ্চন্দ্রপুরের একটি বুথে এ দিন বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি বাদে সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসক দল। নির্বাচনের দিন রতুয়ার একাধিক বুথে গুলি ছুড়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে ব্যালটবাক্স লুঠ করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এ দিনও বাখরায় বুথে ভোট শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক বাদে কাঁধে বন্দুক নিয়ে দুষ্কৃতীরা বুথে চড়াও হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এক পুলিশ অফিসারের গলায় হাঁসুয়া ও বন্দুক ঠেঁকিয়ে তারা ব্যালটবাক্স-সহ প্রিসাইডিং অফিসারকে তুলে নিয়ে একটি আমবাগানে যায়। সেখানে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার পর ফের ব্যালটবাক্স বুথে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বন্দুকধারীদের তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভোটার-সহ ভোটকর্মীরাও। ঝাড়খণ্ড থেকে নিয়ে আসা শাসক দলের দুষ্কৃতীরাই এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

রতুয়ার বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতেও চারটি বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে ১, ২ ও ১১ নম্বর বুথ তৃণমূলীরা দখল করে বলে অভিযোগ। ১২ নম্বর পশ্চিম রতনপুর বুথেও এ দিন দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়ায়। ওই বুথে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের বিদায়ী প্রধান রুদলী চৌধুরী। প্রধানের দুই ছেলের নেতৃত্বে সেখানে বিহারের এক দল দুষ্কৃতী গুলি ছুঁড়ে, বোমাবাজি করে ব্যালটবাক্স নিয়ে ছাপ্পা ভোট শুরু করে বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা প্রতিরোধ করতেই দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। পাশাপাশি, এলাকায় ভাঙচুর এবং লুঠপাট করে বিহারে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

দেখুন ভিডিয়ো

রতুয়ার বাহিরকাপ ও সুর্য়াপুর বুথেও শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দেয় বলে অভিযোগ। একই ভাবে হরিশ্চন্দ্রপুরের শরণপুরেও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। আবার চাঁচলের পরানিনগর বুথে নির্বাচনের দিন বুথ লুঠ করতে আসা দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিন জন। এ দিন সেখানে বিকেল পর্যন্ত আতঙ্কিত ভোটারদের কেউই ভোট দিতে যাননি।

আরও পড়ুন
প্রিসাইডিং অফিসারের রহস্যমৃত্যু, উত্তাল রায়গঞ্জ, এসডিও-কে মারধর করলেন ভোটকর্মীরা

চাঁচল মহকুমায় মোট ২৬টি আসনে পুনর্নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়া, চাঁচলের একটি বুথে এ দিন পুনর্নির্বাচন হলেও বুথমুখো হননি আতঙ্কিত ভোটারদের কেউই।

উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম নুর বলেন, প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হচ্ছে না। ফলে আমরা আদালতে যাচ্ছি। জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য দাবি করেছেন, “রতুয়ায় কোথাও ছাপ্পা ভোট বা সন্ত্রাস হয়নি। এ সব বিরোধীদের বানানো কথা।” সিপিএমের বিদায়ী প্রধান রুদলি চৌধুরী তাঁর ছেলেদের নেতৃত্বে হামলার কথা অস্বীকার করেছেন।

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “আমাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ নেই। তবু আমরা খতিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE