Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

বিরোধীশূন্য বিদবিহারে আতঙ্ক বেআইনি বালির

বিতর্ক, অশান্তির ইতিবৃত্ত, দৈনন্দিন জীবনে রাজনীতির টানাপড়েন— বিভিন্ন এলাকার ভোটচিত্রের তথ্যতালাশবেআইনি বালির ব্যবসায়ীরা বেহিসেবি ভাবে বালি তোলায় অজয় নদের ভাঙনের মুখে পড়ছে জমি-বাড়ি। বালির গাড়ির দাপাদাপিতে ভাঙছে রাস্তা। সেটা এক ‘আতঙ্ক’।

অভিযোগ, বেআইনি বালির ব্যবসায়ীরা বেহিসেবি ভাবে বালি তোলায় অজয় নদের ভাঙনের মুখে পড়ছে জমি-বাড়ি।

অভিযোগ, বেআইনি বালির ব্যবসায়ীরা বেহিসেবি ভাবে বালি তোলায় অজয় নদের ভাঙনের মুখে পড়ছে জমি-বাড়ি।

সুব্রত সীট
কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ০৪:২৭
Share: Save:

ভোটে না জিতলে তাঁর দল পঞ্চায়েতে মানুষের হয়ে কাজ করবে কী করে—সম্প্রতি এমনই বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিরোধীশূন্য বিদবিহার পঞ্চায়েতে কোনও কাজ আদৌ হবে কি না, ধন্দে রয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি বালির ব্যবসায়ীরা বেহিসেবি ভাবে বালি তোলায় অজয় নদের ভাঙনের মুখে পড়ছে জমি-বাড়ি। বালির গাড়ির দাপাদাপিতে ভাঙছে রাস্তা। সেটা এক ‘আতঙ্ক’। কিন্তু অবৈধ বালির কারবারের ‘রমরমা’ নিয়ে শাসক দলের নেতাদের বলে কোনও সুরাহা হবে কি না, তা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। তাঁদের দাবি, ব্লকে ‘অনেক নেতা’। কাকে বলতে গিয়ে কার বিষ-নজরে পড়তে হয়, তা কম আতঙ্কের নয়।

বিরোধীদের অভিযোগ, বালির কারবারের টানেই শাসক দল বিদবিহার পঞ্চায়েতকে বিরোধীশূন্য করে রেখেছে। যদিও বালির কারবারে জড়িত থাকা বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা তৃণমূল মানেনি। প্রশাসনেরও দাবি, ওই এলাকায় অবৈধ বালির কারবার রুখতে অভিযান চালানো হয়।

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে শিবপুর মোড় হয়ে বাঁ দিকে গিয়েছে খন্দে ভরা রাস্তা। তা ধরে কিছুটা এগোলেই বিদবিহার পঞ্চায়েত। কাঁকসার সাতটি পঞ্চায়েতের যে চারটি গলসি বিধানসভার মধ্যে পড়ে, তার অন্যতম বিদবিহার। ২০১৩ সালে সেখানে পঞ্চায়েতের ১২টি আসনের মধ্যে ছ’টিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বিরোধীরা। যদিও পরে তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। এ বার অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা কোনও আসনেই মনোনয়ন জমা দেননি। যদিও তৃণমূল সে অভিযোগ মানেনি।

এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, অজয় থেকে বালি তোলা চলছে দুবরাজপুর কলোনির নারকেলডাঙা ঘাট, নয়াকাঞ্চনপুরের শ্রীরামপুর ঘাট, শিবপুর ঘাট ও অজয়পল্লিতে। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, শিবপুর ও অজয়পল্লির ঘাট দু’টি বৈধ। তবে শিবপুর ঘাট থেকে অবৈধ বালি পাচার রুখতে অভিযান হয়েছে।
তবে বিদবিহারের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সব ঘাট থেকেই অবৈধ ভাবে বালি তোলা চলছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বালিঘাটের দখল নিয়ে অজয়পল্লিতে শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ একাধিক বার উত্তপ্ত হয়েছে এলাকা। অপরিকল্পিত ভাবে বালি তোলার ফলে অজয় নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে কৃষ্ণপুর, নবগ্রাম, জামদহ। চাষের জমির একাংশ গিয়েছে নদীগর্ভে।

বর্ষায় ঘরবাড়ি কী ভাবে বাঁচবে তা নিয়ে রয়েছে আতঙ্ক। প্রতিবাদ হয় না কেন? জবাব আসে, ‘‘শাসক দলের অনেক গোষ্ঠী। কাকে বলতে গিয়ে কাকে চটাব! বোবার শত্রু নেই।’’

তৃণমূলের অন্দরের খবর, ওই এলাকায় তাদের জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য দেবদাস বক্সী এবং পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। গলসি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে আসার পরে দলের অনেকে চলে যান গলসির বিধায়ক অলোক মাঝির পক্ষে। এলাকায় কর্তৃত্বের দখল নিয়ে তিন পক্ষের মধ্যে রেষারেষি চলছেই।

যদিও দেবদাসবাবুর দাবি, ‘‘বালির কারবারে আমাদের কেউ জড়িত নয়।’’ পল্লববাবু বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কিছু নেই। বিদবিহারে অবৈধ বালিঘাট নেই।’’ আর অলোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে বিদবিহারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলাম কী করে?’’

এ পরিস্থিতিতে জনতার আশ্রয় হতে পারতেন বিরোধীরা। কিন্তু কাঁকসার সিপিএম নেতা বীরেশ্বর মণ্ডল বলছেন, ‘‘অবৈধ বালিঘাটের রমরমার দৌলতে বিদবিহারে কার্যত জঙ্গল-রাজ চালাচ্ছে শাসক দল। ওদের ভয়ে ভোটে দাঁড়ানোর লোক পাওয়াই দায়। আমাদের যাঁরা চেষ্টা করেছিলেন, বাধা পেয়েছেন।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম প্রলাপ বকছে।’’ তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘অবৈধ বালির কারবারে দলের কেউ যুক্ত থাকলে তাকে রেয়াত করা হবে না।’’

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE