মনোনয়ন জমা শেষ হলেও, খুনোখুনি-মারধর থামেনি! যে সব বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন জমা আটকানো যায়নি, শনিবার পর্যন্ত বহু জায়গাতেই তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চলল চাপ, হুমকি, মারধর। পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, বাঁকুড়ার তালড্যাঙরা থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ— শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেও একের পর এক হামলার খবর এসেছে। বোমা মেরে খুনের ঘটনাও ঘটল ভাতারে।
শনিবার সাতসকালে ভাতার থানার ভূমশোর গ্রামে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীর এক সমর্থককে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই সমর্থকের নাম রমজান মোল্লা (৫৫)। তিনি নির্দল প্রার্থী আবিদা সুলতানের হয়ে ভোটের কাজ করছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আবিদা সুলতান এক জন ‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূল’। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। রমজান মোল্লাও এক জন তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। কিন্তু চলতি ভোটপর্বে তিনি ‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূল’দের দলে নাম লেখান। এ বারের নির্বাচনে আবিদা সুলতানের হয়েই কাজ করছিলেন। অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের লোকেরা আবিদা সুলতানকে হুমকি দিচ্ছিলেন মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য।
ঘটনার তদন্তে ভূমশোর গ্রামে পুলিশ।
এ দিন সকালে আবিদার দুই আত্মীয়কে রাস্তায় মারধর করছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। রেশন থেকে সে সময় ওই পথ ধরেই ফিরছিলেন রমজান। পরিস্থিতি দেখে তিনি রুখে দাঁড়ান। অভিযোগ, তখনই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পর পর পাঁচটি বোমা মারে রমজানকে লক্ষ্য করে। দুটো লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও, বাকি তিনটে বোমা ফাটে রমজানের গায়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
রমজানের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “উনি তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। তবে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন।”
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ভাতারে তৃণমূলের দুটো গোষ্ঠী রয়েছে। একটি বনমালি হাজরার এবং অন্যটি মানগোবিন্দ অধিকারীর। রমজান মোল্লা অধিকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তৃণমূল নেতা বনমালি হাজরা এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টা দুঃখজনক। তবে কী কারণে এমন ঘটেছে তা জানি না।”
শনিবার মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে আক্রান্ত কংগ্রেস প্রার্থীর বাড়িতে যান অধীর চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিকে, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের বারবাকপুর গ্রামে দুই কংগ্রেস কর্মীকে গুলি করার অভিযোগ উঠল সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধেই। দৌলতাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা ঘোষ। অভিযোগ, ওই দিন রাতে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী প্রিয়ঙ্কার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। সেখানে প্রিয়ঙ্কাকে খুঁজে না পেয়ে, কাছেই তাঁর বাপের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হয়। প্রিয়ঙ্কাকে বাঁচাতে তাঁর দেওর চিরঞ্জিত ঘোষ এবং শ্বশুর সঞ্জীব ঘোষ সেখানে পৌঁছতেই তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ওই দুষ্কৃতীরা। গুরুতর জখম হন দু’জনেই। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
শনিবার সকালে প্রিয়ঙ্কার বাড়িতে দেখা করতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “এসপি ও জেলাশাসকদের মদতে সন্ত্রাস হচ্ছে।” জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস পাল্টা দাবি করেন, “তৃণমূল এ ঘটনায় কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করুক।”
বাঁকুড়ার তালড্যাঙরাতে এ দিন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য অমিয় পাত্রের বাড়িতে ঢুকে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায় এক দল দুষ্কৃতী। অভিযোগ তৃণমূলের দিকেই। হামলাকারীদের দাবি ছিল, জেলা পরিষদের প্রার্থী প্রত্যাহার করাতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy