Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
‘জয় শ্রীরাম’ বলল কারা?

বাধার মুখে পড়লেন বাম নেতৃত্ব

জেলা জুড়ে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ক্রমাগত উঠে আসছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন জানিয়েছিল, শনিবার থেকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা করা যাবে মহকুমাশাসকের দফতরেও।

গোলমাল: পুরনো এসপি অফিসের সামনে। নিজস্ব চিত্র

গোলমাল: পুরনো এসপি অফিসের সামনে। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে শুক্রবার তাঁর দফতরের সামনেই আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, পুলিশকে আগাম খবর দেওয়ার পরেও কী ভাবে হামলা হল সেটা খতিয়ে দেখছেন। শনিবার আবার তাঁর দফতর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে তাঁদের উপরে আক্রমণ হয়েছে বলে অভিযোগ বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্বের। এ বারে পুরনো এসপি অফিসের সামনে।

জেলা জুড়ে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ক্রমাগত উঠে আসছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন জানিয়েছিল, শনিবার থেকে পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা করা যাবে মহকুমাশাসকের দফতরেও। বাঁকু়ড়া জেলা পুলিশ ও প্রাশাসন শুক্রবার এই ব্যাপারে বৈঠকে বসে। আশ্বাস মিলেছিল, যথাযথ নিরাপত্তার আয়োজন থাকবে।

ছিলও। জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার মুখে পুলিশের ব্যারিকেড। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে হলে আগে পার হতে হচ্ছিল আরও একটি ব্যারিকেড। তাতে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে দুষ্কৃতীরা। মাথায় হেলমেট। মুখ কাপড়ে ঢাকা। ছিলেন মহিলারাও। দিনভর দফায় দফায় সেখান থেকে উঠেছে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান।

এ দিকে, স্কুলডাঙার সিপিএমের জেলা কার্যালয় থেকে জোটবদ্ধ হয়ে সিপিএম প্রার্থী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা জেলাশাসকের দফতরে যাচ্ছিলেন মনোনয়ন জমা দিতে। ছিলেন বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র এবং জেলা বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। জেলাশাসকের অফিস চত্বরে পৌঁছনোর আগেই দুষ্কৃতীদের ব্যারিকেডের সামনে তাঁরা আটকে পড়েন। প্রায় মিনিট কুড়ি দু’পক্ষের মধ্যে চলে বচসা। এরই মধ্যে অমিয়বাবুকে ধাক্কা মারেন কয়েক জন। লাঠি, রড ইত্যাদি নিয়েও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রেহাই পাননি নেত্রীরাও। চোট পান অনেকেই। বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, গোটা ঘটনায় পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়।

পিছু হটে বাম নেতা-কর্মীরা ফিরে যান দলীয় কার্যালয়ে। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘এমন একটা পরিস্থিতি চলছে, কোথায় গিয়ে আমরা অভিযোগ জানাব সেটাই বুঝতে পারছি না। ডিএম অফিস, এসডিও অফিস তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দখল করে বসে আছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, তাঁরা ফিরে আসার পরে বাঁকুড়া সদর থানার আইসি ফোন করেছিলেন। নিরাপত্তা দিয়ে আবার মহকুমাশাসকের দফতরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা যাননি। প্রতীপবাবু বলেন, ‘‘উনি আমাদের যেতে বলেছিলেন। কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের মার খাওয়াল। এর পরে কী ভাবে আর ওঁদের কথায় ভরসা করা যায়?’’

কী বলছে পুলিশ ও প্রশাসন?

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ঝামেলার খবর এসেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।’’ বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে আসা আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তা জানা সত্বেও ওঁরা মিছিল করে আসছিলেন। সেই মিছিলে কিছু লোকজন বাধা দেয় বলে খবর আসে। পুলিশ গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয়।’’

কিন্তু শনিবারের হামলাটা করল কারা?

পুলিশি ব্যারিকেডের মধ্যে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির কী বাড় বেড়েছে। ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলতে বামফ্রন্টের উপরে হামলা চালাচ্ছে ওরা।’’ বিজেপি-র নেতাদের একাংশের প্রশ্ন, হামলা করার সময়ে কেউ যেচে নিজেদের চিনিয়ে দেওয়ার মতো কাজ কেন করবেন? জয়দীপের জবাব, ‘‘যারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে রাজ্যের সম্প্রীতির ঐক্য ভাঙতে পারে, তারা ভোট সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ভাঙতে এই স্লোগান তুলবে— এটা কী এমন বড় ব্যাপার?’’ জেলা তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীও এ দিন বলেন, ‘‘রাম আর বামের যুদ্ধ শুরু হয়েছে ভোটকে কেন্দ্র করে।’’

আবার বিজেপি অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র এ দিন বলেন, ‘‘মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার আগে থেকে আমাদের কিছু প্রার্থী ঢুকে পড়েছিলেন। ভিতরে তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে। পরে যাঁরা যাচ্ছিলেন, তাঁরা ভিতরেই ঢুকতে পারেননি।’’ সিপিএমেরও দাবি, হামলাকারীরা তৃণমূলের আশ্রিত।

সুজনবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে আমাদের উপরে হামলা চালাল। রাম নবমীতেও আমরা তৃণমূলকে গৈরিক হতে দেখেছি। এ বারের ভোটে এই গৈরিকীকরণের সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে এই হামলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE