Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Celebrity Death

তাপসের পাশেই ছিলেন মমতা, বিরোধীদের জবাবে তৃণমূল

তাপসের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘লাঞ্ছনা, গঞ্জনা’র অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাপস পাল—ফাইল চিত্র

রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাপস পাল—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৭
Share: Save:

তাপস পালের ‘অকাল মৃত্যু’র পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তৈরি করা ‘মানসিক চাপ’ই দায়ী— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের পরেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতাদের সমস্বরে অভিযোগ, জেল হাজতে থাকা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে গেলেও তাপসের কাছে তিনি যাননি। মমতার সে দিনের হাসপাতাল-সফরের প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, সুদীপবাবুর সঙ্গে দেখা করে তাপসের কাছেও গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরই পাশাপাশি তৃণমূলের বক্তব্য, ধৃত প্রাক্তন সাংসদের জন্য আইনজীবীর ব্যবস্থা করা থেকে তখন হাসপাতালের বিল মেটানো— সব দায়িত্বই দল নিয়েছিল।

তাপসের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘লাঞ্ছনা, গঞ্জনা’র অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে যে ‘মানসিক নির্যাতন’ চালানো হয়েছে, তার ধাক্কা সামলাতে পারেননি তাপস। তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র থেকে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী পর্যন্ত প্রশ্ন তোলেন, ভুবনেশ্বরে সুদীপবাবুর কাছে গেলেও পাশেই কেবিনে তাপসকে কেন দেখতে যাননি মুখ্যমন্ত্রী?

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে অবশ্যে দেখা যাচ্ছে, ভুবনেশ্বর সফরে তৎকালীন দুই দলীয় সাংসদের কাছেই গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। বেসরকারি হাসপাতালে সুদীপবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে তাপসের কেবিনে তিনি ছিলেন মিনিটসাতেক। তাঁর শারীরিক অবস্থা, হাসপাতালে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, খোঁজ নিয়েছিলেন। মন শক্ত রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও তাপসদের দিয়েছিলেন মমতা। এই তথ্যের পাশাপাশিই বিরোধীদের অভিযোগের পাল্টা হিসেবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি এবং সুব্রত বক্সীও হাসপাতালে গিয়ে সুদীপদা এবং তাপসের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আইনজীবী ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল দলের তরফে। তাপসের স্ত্রী নন্দিনীর সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ ছিল।’’

তৃণমূলকে বিঁধে বিজেপির দিলীপবাবু যদিও বলেছেন, ‘‘তাপস পালকে তাঁরা ছেঁটে ফেলেছিলেন। তাঁর কষ্টের সময়ে পরিবার ছাড়া আর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু এখন তাঁর মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক লাভ করার চেষ্টা হচ্ছে। তাপসের এই দুর্গতির জন্য সম্পূর্ণ তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী!’’ বাবুলেরও অভিযোগ, তাপসের দুঃখজনক মৃত্যু নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি’ হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও তৃণমূলের ‘দ্বিচারিতা’র দিকে আঙুল তুলেছে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। সিপিএমের সুজনবাবুর কথায়, ‘‘বিজেপি সরকার তাদের সুবিধা মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগায়, তদন্তের গতি নিয়ন্ত্রণ করে, এগুলো একদমই ঠিক কথা। কিন্তু তৃণমূলের নীতি তো কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরোলে কিষাণজি! তদন্ত সংস্থার হাত থেকে রাজীব কুমারকে বাঁচাতে ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী বসেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দৌড়ে গিয়েছেন। তাপস পালের জন্য কী করেছেন?’’ একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘মরদেহের সামনে এ সব কথা বলা আমাদের সংস্কৃতি নয়। সিবিআই বা ইডি-র অতি সক্রিয়তার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সুদীপবাবুকে গত লোকসভায় তৃণমূল নেত্রী আবার টিকিট দিয়েছেন। নির্দোষ মনে করে থাকলে তাপসকে কেন দেননি?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান আবার দু’কলি মনে করিয়ে দিয়েছেন— ‘জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা, মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Celebrity Death Tapas Paul Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE