Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
College Street

করোনা কালবেলায় সাইবার-সরণি খুঁজছে বাংলা বই

এমনিতে লকডাউন শুরু হতেই পিডিএফে ছেয়ে গিয়েছিল ফোন। তাতে পুরনো কমিক্স, অরণ্যদেব-নন্টেফন্টে থেকে ধ্রুপদী উপন্যাস বা কিশোর কাহিনি পর্যন্ত সবই ছিল।

 দিশার খোঁজে বইপাড়া। ফাইল চিত্র

দিশার খোঁজে বইপাড়া। ফাইল চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৬:০৯
Share: Save:

পয়লা বৈশাখের অনেক নতুন বই প্রকাশই এ বার ভেস্তে গিয়েছিল। লকডাউনে সঙ্কটের ঝাপটা তখনই টের পান প্রকাশকেরা। তার পরে টানা তিন মাস বন্ধ ছিল বইপাড়া। আমপানের ধাক্কায় কলেজ স্ট্রিটের ধ্বস্ত ছবির যন্ত্রণাও অনেককে নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। দেওয়ালে পিঠ-ঠেকা দশায় অনেকেই ভেবেছেন, ফোনে বা ট্যাবে পড়ার উপযোগী ই-বই থাকলেও কিছুটা স্বস্তি মিলত।

এখন বই-কারবার কিছুটা ছন্দে ফিরলেও পরিবর্তনের সেই তাগিদটা ফিকে হয়নি। ডিজিটাল আঙ্গিকে পড়ায় অনেক এগিয়ে হিন্দি, মলয়ালম, তেলুগু, গুজরাতি বই। কিন্ডলে বাংলা বই পড়ার সুযোগ কার্যত নেই। এই পরিস্থিতিতে নতুন অ্যাপের আঙ্গিকই অনেককে পথ দেখাচ্ছে। আনন্দ পাবলিশার্সের মুখপাত্র বলেন, ‘‘ডিজিটাল প্রকাশনার কাজটা আগে কিছুটা হয়েছে। একটি ডিজিটাল অ্যাপে আমাদের ৯-১০টি ক্লাসিক বই রয়েছে। কিন্তু এখন সব বইয়েরই ডিজিটাল সংস্করণ তৈরির পথে আমরা এগোচ্ছি।’’

গত ফেব্রুয়ারিতে ই-মুদ্রণের একটি নতুন ডিজিটাল অ্যাপ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অ্যাপটি থাকলে নানা ই-বই কিনে পড়া যাবে। দাম এখনও ছাপা বা বাঁধানো বইয়ের তুলনায় অনেক কম। সেই অ্যাপের কর্ণধার শান্তনু চৌধুরীর কথায়, “নানা ধরনের হাজারখানেক বই রয়েছে আমাদের। অ্যাপটির ১৭-১৮ হাজার ডাউনলোডের অধিকাংশই লকডাউন পর্বের ঘটনা। নামী-অনামী বহু প্রকাশকেই ই-বুকের দিকে ঝুঁকছেন।” ই-বুকের মাধ্যমে অনায়াসে দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব বলে মনে করেন প্রকাশক সংগঠনের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। নিজেদের বেশির ভাগ বই ডিজিটাল অ্যাপে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রথম সারির অন্য একটি প্রকাশক সংস্থার কর্তা শুভঙ্কর (অপু) দে-ও বলছেন, ‘‘লকডাউনের সঙ্কটই ই-বুক নিয়ে অনেকের চোখ খুলেছে। নামী কয়েক জন সাহিত্যিকের নতুন-পুরনো নানা বইয়ের ই-বুক তৈরির কথা চলছে।’’

এমনিতে লকডাউন শুরু হতেই পিডিএফে ছেয়ে গিয়েছিল ফোন। তাতে পুরনো কমিক্স, অরণ্যদেব-নন্টেফন্টে থেকে ধ্রুপদী উপন্যাস বা কিশোর কাহিনি পর্যন্ত সবই ছিল। ইদানীং ফোন খুলে পিডিএফ পাঠের বৈধতা বা ঔচিত্য নিয়ে ফেসবুকে বাংলা বইয়ের পাঠকমহল সরগরম। তবে অভিজ্ঞ প্রকাশকেরাও মানছেন, নেটে গান শোনার বাড়বাড়ন্তের মতো ছাপানো বইয়ের বিকল্প পেলেও লোক তাতে ঝুঁকবে। ই-বুক বিশারদেরা বোঝাচ্ছেন, ই-বইয়ের সঙ্গে পিডিএফের আকাশ-পাতাল ফারাক। পিডিএফ ছাপানো বইয়ের ছবির মতো। ফোনে পড়া কষ্টকর। মহাভারত খুলেই কর্ণ বধ বা শকুনি-যুধিষ্ঠিরের পাশাখেলার অংশে পৌঁছনোর সুবিধাও নেই পিডিএফে।

তরুণ প্রকাশক শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘ই-বইয়ের বিভিন্ন সুবিধাও ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। ক্লিক করে ইচ্ছেমতো পাতায় ঢোকার স্বাচ্ছন্দ্য আগের থেকে বেশি।’’ ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় সুধীন্দ্রনাথ রাহার ভূতের গল্পের সঙ্কলন বা মঞ্জিল সেনের লেখা পূর্ণাঙ্গ সত্যজিৎ-জীবনীর মতো

কিছু বই এই করোনা-পর্বে ই-বই আঙ্গিকেই প্রকাশিত। এশিয়াটিক সোসাইটির মতো শতাব্দী-প্রাচীন প্রতিষ্ঠানও ডিজিটাল বুলেটিন প্রকাশে ঝুঁকেছে। ম্যাকাউট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রকাশিত, সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত কোভিড-আবহে লড়াইয়ের আখ্যান ‘সাধারণ মানুষের অসাধারণ কথা’। ই-বুকেও যথেষ্ট জনপ্রিয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশের একটি ডিজিটাল অ্যাপ মারফত তিনি কিছু রয়্যালটি পান। তাঁর কথায়, “বইয়ের পিডিএফে লেখক-প্রকাশক দু’জনেরই ক্ষতি। ই-বুক নিশ্চয়ই ক্রমশ উন্নততর হবে। করোনা-সঙ্কটে না-ঘুমিয়ে রাস্তা খোঁজাই একমাত্র রাস্তা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Street E-Book Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE