বেধড়ক: দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের বাইরে এক ধর্মঘট সমর্থককে ঘিরে মার। মঙ্গলবার। ছবি: সৌরভ দত্ত
একদা বামপন্থীদের লাল দুর্গ বলে পরিচিত দমদমে প্রচলিত কথা ছিল ‘দমদম দাওয়াই’। মঙ্গলবার ধর্মঘটের দিন সকাল থেকে যেন মনে হল ‘দাওয়াই’ একই আছে। বদলে গিয়েছে হাকিম, বদ্যি এবং রোগীদের মুখগুলো। প্রকাশ্য রাস্তায় চড়-থাপ্পড় খেয়ে থানার দিকে ছুটছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর। পুরনো দাপুটে সিপিএম নেতার আত্মীয় মার খেয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ছবি তুলতে গিয়ে শাসক দলের ক্যাডার বাহিনীর হাতে প্রহার থেকে ছাড় মিলল না সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। অনেকে বলছেন, এ দিন সকালে দমদমের সেই পুরনো ছবিটাই যেন ফিরে এল। যখন অবামপন্থীদের নখদন্তহীন করে রেখে দেওয়া হত দমদমে। এবং পুলিশ কার্যত দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্মঘট সফল করতে যতবারই দমদমের রাস্তায় সিপিএমের নেতাকর্মীদের নামতে দেখা গিয়েছে, ততবারই দেখা গিয়েছে শাসকদলের লোকজন আক্রমণাত্মক মেজাজে সে দিকে ছুটে গিয়েছেন। এবং কে আগে ‘প্রাণ দান’ করবেন তা দেখাতে গিয়ে তৃণমূলের বড়-মেজো-সেজো-ছোট সব নেতাদের দাপটে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সুযোগই পাননি সিপিএমেরই নেতাকর্মীরা। তবে এই অতি উৎসাহে আবার দু’-একটি ঘটনায় যেন ‘সেমসাইড গোল’ও খেল তৃণমূল শিবির।
সকাল ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে রেললাইনের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের হটিয়ে দিলে বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের কাছে অবরোধের প্রস্তুতি নেয় সিপিএম। দু’নম্বর গেটে যশোর রোড আটকানোর চেষ্টা করতেই দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্টের নেতৃত্বে শাসকদলের লোকজন তাদের উপরে চ়ড়াও হয় বলে অভিযোগ সিপিএমের।
সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে সিপিএম আবার জমায়েত হলে উত্তেজনা ব্যাপক আকার নেয়। ওই দফায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনুগামীরা জমায়েতকারীদের বেদম মারধর করেন বলে অভিযোগ। স্টেশনের বাইরে দক্ষিণ দমদমের ছ’নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শিশির বলকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। প্রাণে বাঁচতে শিশিরবাবু গোরাবাজারে দমদম থানার দিকে দৌড়োন। সেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও।
দমদম রোডে আবার ‘নিয়ন্ত্রক’-এর ভূমিকায় তৃণমূলের কাউন্সিলরেরাই নামেন বলে অভিযোগ সিপিএমের। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকালে দমদম রোডে সিপিএমের মিছিল বেরিয়েছে শুনে দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক চেয়ারম্যান পারিষদ নিজেই ফোন করে ‘বাহিনী’কে সক্রিয় করে পথে নামান। সিপিএমের মিছিল হনুমান মন্দির ঘুরে শীল কলোনির কাছে পৌঁছতেই সেই বাহিনী কাজে নেমে পড়ে।
সিপিএম নেতা শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মতিঝিল সায়েন্স কলেজের কাছে তৃণমূলের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মহিলা, প্রবীণদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিল, চড়, ঘুষির পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর শুধু দাঁড়িয়ে কর্মীদের ইন্ধনই দেননি, তাঁরা আমাকে এবং অন্য কর্মীদের চড় থাপ্পড়ও মারেন।’’
এই আবহে এক চেয়ারম্যান পারিষদ এবং তৃণমূল কাউন্সিলরকে বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়। চেয়ারম্যান পারিষদের শাশুড়ি এবং কাউন্সিলরের শ্বশুর ঘটনাচক্রে সিপিএম সমর্থক। তাঁরা আবার দমদম রোডের মিছিলেই হাজির ছিলেন। উত্তেজনার আবহে শাশুড়িকে সিপিএমের মিছিলে দেখে স্নেহের স্পর্শে চেয়ারম্যান পারিষদ জামাই তাঁর হাত ধরে টেনে বলেন, ‘‘তুমি বাড়ি যাও।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, শ্বশুরের সামনেই জামাই সিপিএম কর্মী পিটিয়েছেন শুনে কাউন্সিলর স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী কথা বন্ধ করে দেন। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আবার শিশির বলের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ নিয়েই তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের অনুগামীদের মধ্যে তর্ক বেধে যায়।
তৃতীয় দফায় দমদম রোডে সিপিএমের পূর্বতন জোনাল অফিসে স্কুটি-সাইকেল ভাঙচুর, জানলার গ্রিল লক্ষ্য করে ইট ছোড়া, মহিলা কর্মীদের আটকে রাখা— সবই ঘটেছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে দমদমের ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ বলেন, ‘‘ওঁরা বাসের চাকার হাওয়া খুলে দিচ্ছিলেন। জোর করে গাড়ি থামাচ্ছিলেন। মানুষ প্রতিবাদ করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy