নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী।
পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে ইস্তফা দিলেন বিভাস চক্রবর্তী। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবের কাছে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর পদত্যাগপত্র। ‘পরিবর্তন চাই’ ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান মুখ তথা প্রবীণ নাট্যকার বিভাসের এই ইস্তফা ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। শাসক শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার কারণেই কি সরে দাঁড়ালেন বিভাস? প্রশ্ন এই রকমই। কিন্তু সে বিষয়ে মুখে কুলুপ অশীতিপর নাট্যকারের। বিভাস বলছেন ‘কারণটা ব্যক্তিগত’।
বিভাস চক্রবর্তী বহু বছর নাট্য অ্যাকাডেমিতে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো জন্মলগ্ন থেকেই নাট্য অ্যাকাডেমিতে ছিলাম। মাঝে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের প্রতিবাদে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। পরে ২০১১ সাল থেকে আবার ছিলাম।’’
প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে সেখানেই। বিভাস নিজেই জানাচ্ছেন যে, তিনি নাট্য অ্যাকাডেমির জন্মলগ্ন থেকে তার অংশ ছিলেন। মাঝে যে সময়টুকুর জন্য সরে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটা যে তৎকালীন শাসকদের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে, তা-ও স্পষ্ট। তা হলে এ বারের সরে দাঁড়ানোর পিছনেও কি তেমনই কোনও কারণ?
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের পিঠের যন্ত্রণা ঠেকাতে এ বার সব স্কুলেই লকার
প্রবীণ নাট্যকার বললেন, ‘‘জল্পনা অর্থহীন। কারও সঙ্গে মতবিরোধ, মতানৈক্য বা মতান্তরের বিষয় নয়। আমার মতটা আমি নাট্য অ্যাকাডেমিতে আগেও যে ভাবে জানাতে পারতাম, এখনও সে ভাবেই জানাতে পারি। কেউ আমাকে বাধা দেওয়ার নেই।’’
কিন্তু শুধু মতামত জানাতে পারলেই কি সব হয়? সেই মতামত গৃহীত হচ্ছে কি না অথবা নাট্য অ্যাকাডেমির বাইরে অন্য কোনও বৃহত্তর প্রেক্ষিতে মনান্তর হচ্ছে কি না, প্রশ্ন তো তা নিয়েও ওঠে। বিভাস চক্রবর্তী কিন্তু সে সব প্রসঙ্গে যেতেই চাইলেন না। শুধু বললেন, ‘‘বিরাশিতে পা দিয়েছি। এই বয়সে আর খুব বেশি কিছু করতে তো পারব না। আর যে পদে আমি ছিলাম, সেটা কোনও কার্যনির্বাহী পদ নয়, পরামর্শদাতার পদ। সুতরাং এত দিন ধরে পদে না থেকে এ বার একটু বিশ্রাম নিলেই হয়।’’
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর কথাও এ দিন তুলে ধরেছেন বিভাস। ‘‘রুদ্রপ্রসাদও তো আর নাট্য অ্যাকাডেমিতে নেই। আমিও যদি না থাকি, তাতে ক্ষয়ক্ষতি কিছু হবে না।’’ বলছেন অ্যাকাডেমি থেকে পদত্যাগী নাট্যকার। এই মন্তব্যই জল্পনা আরও বাড়াচ্ছে। সিঙ্গুর-নন্দ্রীগ্রাম পর্বে বিদ্বৎ সমাজের যে অংশ বাম সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিল, রুদ্রপ্রসাদ এবং বিভাস, দু’জনেই সেই অংশেরই। সেই রুদ্রপ্রসাদ ইতিমধ্যেই নাট্য অ্যাকাডেমি থেকে সরে গিয়েছেন, এ বার বিভাসও ইস্তফা দিয়ে দিলেন— এর কি কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে ‘অবহেলা’, শবর রোগীকে ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে
শুধু রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বা বিভাস চক্রবর্তী নন, অসন্তোষ ব্যক্ত করে বাংলা আকাদেমির শীর্ষপদ থেকে কিছু দিন আগে পদত্যাগ করেছিলেন ‘পরিবর্তনের’ আর এক বিদ্বৎ মুখ শাঁওলি মিত্রও। আকাদেমিতে কাজের পরিকাঠামো নেই, তিনি কাজ করতে পারছেন না— এমনই জানিয়েছিলেন শাঁওলি। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েও কোনও উত্তর পাননি বলে শাঁওলি অভিযোগ করেছিলেন। পরে অবশ্য পরিস্থিতি বদলে যায়। শাঁওলির ইস্তফা সরকার গ্রহণ করেনি এবং বেশ কয়েক মাসের টানাপড়েনের পরে শাঁওলি বাংলা আকাদেমির শীর্ষপদে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অসন্তোষের কারণেই যে শাঁওলি পদত্যাগ করতে চাইছিলেন, তা স্পষ্ট ছিল। ঠিক মতো কাজ করা যাচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। বিভাস চক্রবর্তীও ইস্তফার পরে বললেন, তাঁর পক্ষে আর খুব বেশি কাজ করা সম্ভব নয়।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy