Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিসিকেভি-সঙ্কটে পার্থের বৈঠকে খুলল হস্টেল, মিটল না দাবি

রাতারাতি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ছাড়ার যে নির্দেশ উপাচার্য দিয়েছিলেন, তা কার্যত নাকচ করে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

বিসিকেভি ছাড়ছেন ছাত্রীরা।  ছবি: প্রণব দেবনাথ

বিসিকেভি ছাড়ছেন ছাত্রীরা।  ছবি: প্রণব দেবনাথ

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৩
Share: Save:

রাতারাতি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল ছাড়ার যে নির্দেশ উপাচার্য দিয়েছিলেন, তা কার্যত নাকচ করে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার রাতেই হস্টেল ফের খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের কোনও দাবিই পার্থ মানেননি। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ফিরে ছাত্রছাত্রীরা পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে বৈঠক করেছেন। উপাচার্য ধরণীধর পাত্র শুক্রবার রাত থেকেই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি।

শনিবার সকাল থেকেই নদিয়ার মোহনপুরে বিসিকেভি ক্যাম্পাসের আটটি হস্টেলেই জল ও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেসে রান্না হয়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যান্টিন। এমনকি ক্যাম্পাসের বাইরে খাবারের দোকানগুলির মালিকেরাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, ছাত্রছাত্রীদের তাঁরা খাবার দিতে পারবেন না, নিষেধ আছে। তা সত্ত্বেও হস্টেল ছাড়তে অনড় ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে ফোন যেতে থাকে, ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এক ছাত্রনেতার পরিবারের দাবি, পুলিশ গিয়ে তাঁদের বলে, ছেলেকে বাড়িতে না ফেরালে যা কিছুই ঘটতে পারে, তারা কোনও দায়িত্ব নিতে পারবে না। বহু উদ্বিগ্ন অভিভাবকই ক্যাম্পাসে চলে আসেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগই হস্টেল ছেড়ে চলে যেতে থাকেন।

‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ স্লোগান তুলে গত এক সপ্তাহেরও বেশি ধরে বিসিকেভি-তে ধর্না চালিয়ে আসছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। মূল দাবি ছিল, পক্ষপাতে অভিযুক্ত ডিন অব স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার গৌতম চক্রবর্তী এবং কৃষি অনুষদের ডিন শ্রীকান্ত দাসকে পদ থেকে সরাতে হবে।

আন্দোলন ভাঙতে গত বুধবার রাতে নদিয়ার হরিণঘাটায় বিসিকেভি ক্যাম্পাসে হামলা চালায় বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরের দিন উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেন ছাত্রছাত্রীরা। বহু সাধারণ ছাত্র-গবেষক এবং শিক্ষকদের বড় অংশ তাঁদের পাশে দাঁড়ান। বৃহস্পতিবার রাতে উপাচার্য নিজের প্যাডে লিখে দেন, পরের দিন বিকেল ৪টের মধ্যে দুই ডিনকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু শুক্রবার আর তাঁর দেখা মেলেনি। রাতে তাঁর স্বাক্ষরিত নির্দেশে বলা হয়, শনিবারই হস্টেল ছেড়ে ছাত্রছাত্রীদের চলে যেতে হবে।

এর পরেও ক্যাম্পাসে থেকে গিয়েছিলেন শুধু আন্দোলনে শামিল হওয়া পড়ুয়ারা। আর ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ছাত্রছাত্রী ও গবেষকেরা, যাঁরা এত তাড়াতাড়ি ফেরার টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। দুপুরে শি‌ক্ষামন্ত্রী (যদিও বিসিকেভি তাঁর নয়, কৃষি দফতরের আওতায় পড়ে) কল্যাণীতে এসে দু’দফায় বৈঠক করেন।

প্রথম বৈঠকে ছিলেন বিসিকেভির কর্মচারীরা, যাঁরা প্রায় সকলেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। সেই সঙ্গে পাঁচ শিক্ষক প্রতিনিধি ও রেজিস্ট্রার জয়ন্ত সাহাও ছিলেন। পরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। তাঁদের দাবি, ওই বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘‘চলো পাল্টাই আবার কী! আন্দোলন করার জন্য কি ব্যানারের অভাব রয়েছে?’’

পরে বেরিয়ে এসে পার্থ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি বৈঠক করতে এসেছেন। রেজিস্ট্রারকে হস্টেল চালু করার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্যের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। অসুস্থ থাকায় তিনি আসতে পারেননি।’’ তাঁর পরামর্শ: রেজিস্ট্রার কর্মসমিতির সভা ডেকে দুই ডিনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারেন। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না এলে তদন্ত হবে না। ছাত্রছাত্রীরা রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে অভিযোগ হলেও তদন্ত হওয়া বা না-হওয়ার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।

রেজিস্ট্রার জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘‘এই রকম ক্ষেত্রে কর্মসমিতির সভা ডাকতে হলে ২১ দিন আগে নোটিস দিতে হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ কর্মসমিতি দিতে পারে না। সেটা পারেন আচার্য বা অন্য কোনও উচ্চতর বিভাগীয় কর্তা।’’

আন্দোলনকারী ছাত্রদের তরফে মৃত্যুঞ্জয় সাটিয়ার বলেন, ‘‘উপাচার্য আমাদের ঘরছাড়া করেছিলেন। সেটা ফিরে পেলাম। কিন্তু অন্য দাবি কিছুই মানা হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE