Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মমতার সঙ্গে দেখার পরে গুরুঙ্গ বললেন, দুঃখের দিন আর নেই

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসার পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে দেখে মনে হল, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।

বুধবার দার্জিলিঙে রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন মোর্চা নেতারা। বৈঠকে মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গ ছাড়াও  ছিলেন দলের তিন বিধায়ক। পরে অন্যদের সরিয়ে দিয়ে গুরুঙ্গের সঙ্গে আধ ঘণ্টা একান্তে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘দুঃখের দিন আর নেই। এখন সুখের দিন!’’ ছবি: সন্দীপ পাল

বুধবার দার্জিলিঙে রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন মোর্চা নেতারা। বৈঠকে মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গ ছাড়াও ছিলেন দলের তিন বিধায়ক। পরে অন্যদের সরিয়ে দিয়ে গুরুঙ্গের সঙ্গে আধ ঘণ্টা একান্তে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘দুঃখের দিন আর নেই। এখন সুখের দিন!’’ ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায় ও রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আসার পরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে দেখে মনে হল, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। গোর্খা লিগের নিহত নেতা মদন তামাঙ্গ খুনের মামলায় গুরুঙ্গ সহ মোর্চার প্রথম সারির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। তারপর থেকেই গুরুঙ্গ সহ ওই নেতাদের প্রকাশ্যে বিশেষ দেখা যাচ্ছিল না। জিটিএ প্রধান গুরুঙ্গ নিজের দফতরেও যাচ্ছিলেন না। কিন্তু হাইকোর্ট সম্প্রতি তাঁদের এখনই গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পান তাঁরা। তারপরে এ দিন দার্জিলিঙে রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠকের পরে বেরিয়ে অনেক দিন পরে প্রকাশ্যে হাসতে দেখা গেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি তথা জিটিএ-র চিফ এগজডিকিউটিভ গুরুঙ্গকে।

বৈঠকে গুরুঙ্গের সঙ্গে ছিলেন পাহাড়ের তিন মোর্চা বিধায়ক। তবে মুখ্যমন্ত্রী ও গুরুঙ্গ একান্তে কথাবার্তাও হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘নানা বিষয়ে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। অতীতে এত ভাল আলোচনা কোনও দিনই হয়নি।’’ নানা দফতর হস্তান্তর নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তাঁর যে ক্ষোভ-অভিযোগ ছিল, সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে গুরুঙ্গের মন্তব্য, ‘‘দুঃখের দিন আর নেই। এখন সুখের দিন!’’

মোর্চা নেতা তথা জিটিএ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘জিটিএ একটি সরকারি সংস্থা। আমরা সব সময় সহযোগিতা করে থাকি। আমি পাহাড়ে এলে ওঁদের প্রতিনিধিরা সব সময় দেখা করেন। ওঁরা আমাদের সব সময় সহযোগিতা করেন।’’ এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমি দার্জিলিঙে এসে এখনও অবধি কারও বিরুদ্ধে একটি কথাও বলিনি। পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নই আমার লক্ষ্য।’’

পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকে অবশ্য মোর্চা-তৃণমূল ফের সমঝোতার রাস্তা তৈরি হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখছেন। জিএনএলএফ, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিএম, সিপিআরএম সহ একাধিক মোর্চা বিরোধী দলের নেতাদের একাংশ একান্ত আলোচনায় জানান, ২০১১ সালে মোর্চা-তৃণমূল সমঝোতার ফলে সমতলে অন্তত ১২টি আসনে বাড়তি সুবিধা মিলেছিল তৃণমূলের। আসন্ন ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও সেই সুবিধা নিশ্চিত করতে তিক্ততা সরিয়ে সম্পর্ক নবীকরণের প্রক্রিয়া হয়তো শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন মোর্চা বিরোধীদের অনেকেই। মোর্চার এক প্রথম সারির নেতা অবশ্য জানান, একান্ত বৈঠকের সময়ে গুরুঙ্গের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কী কথা হয়েছে, তা এখনও কারও জানা নেই। তবে রাজনীতিতে যে সবই সম্ভব, তা ওই মোর্চা নেতা মনে করিয়ে দেন। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির এক নেতা জানান, মোর্চা যদি স্বেচ্ছায় সমর্থন জানায়, তা হলে আপত্তির কিছু নেই।

মুখ্যমন্ত্রী ও গুরুঙ্গের বৈঠক সরকারি হলেও তাঁদের রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে পাহাড়-সমতলে আলোচনা জোরদার হচ্ছে। কারণ, সম্প্রতি মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী, রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রী, বিনয় তামাঙ্গ সহ ২৩ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জিও মঞ্জুর করেছে আদালত। আপাতত আগাম জামিনের আর্জি বিবেচনাধীন উচ্চ আদালতে। আগামী ১ জুলাই সেই আগাম জামিনের মামলার পরের শুনানি হওয়ার কথা। তার আগে পর্যন্ত গুরুঙ্গদের গ্রেফতার করা যাবে না বলে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। ফলে, কিছুটা হলেও স্বস্তিতে গুরুঙ্গরা। চার্জশিট পেশের পর থেকে জনসমক্ষে আগের মতো গুরুঙ্গকে দেখা যাচ্ছিল না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে গুরুঙ্গ দেখা করতে যাবেন কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরে মোর্চারা নেতারা সাময়িক ভাবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। রাতেই মোর্চার নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর পাঠিয়ে বেলা ২টোয় দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চান।

সেই মতো বেলা ২টোয় গুরুঙ্গ পাহাড়ের ৩ দলীয় বিধায়ককে নিয়ে রিচমন্ড হিলে যান। সৌজন্য সাক্ষাতের পরে ৩ বিধায়ক বাইরে যান। মুখ্যমন্ত্রী ও গুরুঙ্গ একান্তে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন। পরে ফের বিধায়ক ও সরকারি অফিসারদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পরে দীর্ঘদিন বাদে গুরুঙ্গকে প্রকাশ্যে হাসতে দেখেন পাহাড়বাসীরা। গুরুঙ্গ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তাঁর পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রাজ্যের দুই মন্ত্রী গৌতম দেব ও অরূপ রায়কে। দুই মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ‘বেটার দার্জিলিং’ গড়ার ডাক দিয়েছেন। জিটিএ-র সঙ্গে মিলে তা গড়া হবে।’’

তামাঙ্গ হত্যা মামলা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করলেও হাসি মুখেই উত্তর দিয়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্দোষ তা তো গোড়া থেকেই দাবি করছি। বিচারবিভাগের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বিচারধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’’ মামলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে? গুরুঙ্গ হেসে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে দার্জিলিঙের বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ান বলেছেন, ‘‘এটা সরকারি সাক্ষাৎকার। সেখানে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রশ্ন নেই।’’

তা হলে এতক্ষণ কী নিয়ে কথা হয়েছে? কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর বলেন, ‘‘পাহাড়ের নানা উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়েছে। ৫৫ হাজার শৌচাগার হবে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফ্রি জোন হবে পাহাড়। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা, চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত কমিশনের দফতর হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’ অগস্ট মাসে ফের পাহাড়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। ছেত্রী বলেন, ‘‘আমাদের দফতর হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় গতি আনবেন মুখ্যমন্ত্রী। অগস্টে যখন আসবেন, তখন দেখা হবে কতটা কী এগিয়েছে।’’ এদিন তামাঙ্গ ও মঙ্গর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE