Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বোমা পড়ছে তো কী, হেঁটেই চলেছেন বিমান

রাজ্য জুড়ে কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বীরভূমের সিউড়ি থেকে একটি পদযাত্রার সূচনা করেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। যে বীরভূম ‘কেষ্টদা’র (অনুব্রত মণ্ডল) জেলা!

বিমান বসু। ছবি: পিটিআই

বিমান বসু। ছবি: পিটিআই

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

সকাল সকাল চিরাচরিত সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে দুবরাজপুরের রাস্তায় তিনি। হাতে ধরা পদযাত্রার ফেস্টুন। পায়ে চটি। হাঁটতে হবে বলে স্নিকার পরার বালাই তাঁর কোনও দিনই নেই। ত্বরিত পায়ে পথ ভাঙা দেখলে কে বলবে, রাতটা আতঙ্কে কেটেছে তাঁর সহকর্মীদের!

রাজ্য জুড়ে কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বীরভূমের সিউড়ি থেকে একটি পদযাত্রার সূচনা করেছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। যে বীরভূম ‘কেষ্টদা’র (অনুব্রত মণ্ডল) জেলা! শাসক দলের তরফে স্বভাবতই কিছু হুমকি ছিল। বিমানবাবু নানুরে পৌঁছনোর পরে তারই কিছু হাতে-গরম নমুনা মিলেছে। চার পাশ থেকে বোমার আওয়াজ আসছে শুনে বাম কর্মীরা প্রবীণ নেতাকে সাবধান করেছিলেন, এখানে না থাকলেই নয়? স্মিত হেসে বিমানবাবু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, হাঁটতে যখন এসেছেন, হেঁটেই ফিরবেন। রাতটা তিনি থেকে গিয়েছিলেন নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে আদিবাসী গ্রাম ধান্যসরা দুর্গাপুরে। বামেদের অভিযোগ, রাতভর সেই গ্রাম ও আশেপাশের তিন-চারটে গ্রাম ঘিরে বোমাবাজি করেছে দুষ্কৃতী বাহিনী।

ভোটের দিনে শাসক দলের বাহিনীর দাপটের মুখে এলাকা ফাঁকা করে ঘরে ঢুকে গিয়েছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা, গত কয়েক বছরে এমন ছবিই দেখেছেন রাজ্যবাসী। কিন্তু বিমানবাবু যখন গ্রামের মধ্যেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন বদলেছে ছবিটা। আদিবাসী মহিলা-পুরুষ তির-ধনুক হাতে বিমানবাবুকে ঘিরে রাত পাহারা দিয়েছেন। আর সকাল হতেই ঝান্ডা হাতে হাজির আরও সমর্থক, যাঁরা একসঙ্গে আরও পথ হাঁটবেন।

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দাবি করছেন, ‘‘পাঁচশোয়াতে একটি বিসর্জন ছিল। সেখানে বাজি পুড়েছে। ওরা ভুল বুঝেছে। বৃদ্ধ বিমানের শক্তি কমে গিয়েছে তাই ভুল বকছে! এত হেঁটেছে তো তাই!’’ কিন্তু সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এই সাতাত্তরে বিমানবাবুর দম দেখে অভিভূত! তাঁরা মেনে নিচ্ছেন, ভয়-ভীতির মুখে প্রতিরোধের সাহস নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা সকলে যদি এমন দাঁড়াতে পারতেন, চিন্তাই থাকতো না! কোচবিহারে সুজন চক্রবর্তী, পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে সূর্যকান্ত মিশ্র, আসানসোল-জামুড়িয়ায় মদন ঘোষেরা পদযাত্রায় হাঁটছেন। কিন্তু হাঁটার কথা এলে ‘হিরো’ এখনও সেই বিমানবাবু!

কারও কারও প্রশ্ন, এখনও কেন বিমানবাবুকেই রাস্তায় নেমে দেখাতে হবে? নতুন প্রজন্ম কোথায়? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ব্যাখ্যা, নতুন প্রজন্ম হইহই করে নামলেও বিমানবাবুকে ঠেকানো যেত না! তিনি পুজোয় পুস্তক বিপণির উদ্বোধনে গিয়ে বই বিক্রি করবেন, পদযাত্রায় সর্বাগ্রে হাঁটবেন। এক কোয়া রসুন বা সকালে নিমপাতার মতো টোটকায় ভর করে বিমানবাবু অকুতোভয়!

তাঁর সহকর্মী শ্যামল চক্রবর্তী নতমস্তকে মেনে নিচ্ছেন, কমিউনিস্ট বা আদর্শ রাজনৈতিক কর্মী কী ভাবে হতে হয়, সকলের শেখা উচিত বিমানবাবুর কাছে। শ্যামলবাবুর কথায়, ‘‘আদ্যন্ত বাঙালি, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে বিমান বসু আদর্শের আলো হাতে আঁধারের পথে যাত্রী।’’ আর স্বয়ং বিমান তো বলেই রেখেছেন, রাজনীতিটা তিনি ভালবেসে করেন। পরিশ্রমও ভালবেসেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biman Bose Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE